কোভিড-১৯ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নেওয়া উদ্যোগগুলো আগামী অর্থবছরেও অব্যাহত থাকবে। তবে, সংকটের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অগ্রাধিকারও কিছুটা পরিবর্তন হবে। যদিও বাজেট প্রস্তাবনায় কোভিড মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নতুন কোনো প্রস্তাব আসেনি।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান। আগামী অর্থবছরে উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন মিলে জাতীয় বাজেটের আকার ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা।
দেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট বক্তৃতায় আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অতিমারির প্রথম বছরে আমাদের অগ্রাধিকার ছিল স্বাস্থ্য খাতের সক্ষমতা বাড়ানো, হঠাৎ কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন-আয়ের মানুষদের খাদ্য ও মানবিক সহায়তা প্রদান এবং কৃষি, রপ্তানি খাতের মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সেক্টরগুলোর উৎপাদন ও কর্মসংস্থান অব্যাহত রাখতে জরুরি সহায়তা প্রদান। আমরা সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিশেষায়িত কোভিড চিকিৎসার দ্রুত সম্প্রসারণ, অতিরিক্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ ও নিম্নআয়ের মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রথম বছরের চ্যালেঞ্জ সফলভাবে মোকাবিলা করেছি।
তিনি বলেন, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে অতিমারির দ্বিতীয় বছরে এসে আমাদের অগ্রাধিকার পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছিল সবাইকে কোভিড টিকার আওতায় আনা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে শিল্প ও সেবা খাতকে সহায়তা করা। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে প্রায় সব নাগরিককে টিকার আওতায় আনা এবং শিল্প ও সেবা খাতের জন্য নেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজগুলোর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা দ্বিতীয় বছরের লক্ষ্যমাত্রাও সফলভাবে অর্জন করতে পেরেছি।
Advertisement
অর্থমন্ত্রী বলেন, এখন অতিমারির তৃতীয় বছরে এসে আমাদের অগ্রাধিকার হবে আয়বর্ধন ও কর্মসৃজনের ধারা অব্যাহত রেখে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে টেকসই করা ও এর মাধ্যমে অর্থনীতির ভিত্তিকে একটি পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া। এজন্য আমরা প্রণোদনা কার্যক্রমগুলোর বাস্তবায়ন আগামী অর্থবছরে অব্যাহত রাখবো। পাশাপাশি, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শিল্প ও সেবা খাতের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অর্থনীতির সব গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর যাতে অতিমারির প্রভাব সম্পূর্ণরূপে কাটিয়ে উঠতে পারে সে লক্ষ্যে সব ধরনের নীতি-সহায়তা প্রদান করবো। আগামী অর্থবছরই হবে অতিমারির প্রভাব কাটিয়ে ওঠার জন্য আমাদের শেষ বছর।
তিনি বলেন, করোনা অতিমারি থেকে দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার অর্জনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হলো সফলভাবে টিকা প্রদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারা। ২০২১ সালের শুরুর দিকে বিশ্বে কোভিড-১৯ টিকার বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শুরু থেকেই ঘোষণা দেন যে, যত অর্থ প্রয়োজন পড়ুক, সরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশের সব নাগরিককে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় নিয়ে আসবে। টিকার বৈশ্বিক সরবরাহে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ থাকলেও প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অনুসারে আমরা বিভিন্ন বিকল্প উৎস হতে প্রয়োজনীয় টিকা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি। মাত্র এক বছরের মধ্যে ১২ বছরের ঊর্ধ্বে দেশের প্রায় সব নাগরিককে সফলভাবে দুই ডোজ টিকা প্রদান করতে পেরেছি। বর্তমানে আমরা বুস্টার ডোজ প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের সাফল্যের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। প্রথমটি হলো, আমরা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন ছাড়া কোনো টিকা বাংলাদেশে ব্যবহার করতে দেইনি। অর্থাৎ দেশে ব্যবহৃত সব কোভিড-১৯ টিকা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক কার্যকর ও নিরাপদ হিসেবে অনুমোদিত। আমাদের দ্বিতীয় সাফল্যটি হলো টিকার ক্ষেত্রে আমরা শহর-গ্রাম, ধনী-গরিব ও নারী-পুরুষের সাম্য নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি। এ পর্যন্ত দেওয়া প্রায় ২৫ কোটি ৮০ লাখ ডোজ টিকার প্রায় ৫০.১ শতাংশ গ্রহণ করেছেন দেশের নারীরা। পাশাপাশি আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী যেমন ছিন্নমূল মানুষ, বেদে সম্প্রদায়, তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী ইত্যাদির জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে তাদেরকে টিকার আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। ব্যাপকভাবে টিকাদানের ফলে দেশে সংক্রমণের হার দ্রুত কমে এসেছে। একইসঙ্গে কমেছে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুর হার। এসবের ফলে করোনার স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি ও মানুষের মধ্যে করোনার ভীতিও কমে এসেছে। ফলে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে দেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে এসেছে।
করোনাভাইরাসের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়।
Advertisement
অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।
এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট। বাজেটে সঙ্গত কারণেই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
আরএসএম/কেএসআর/জিকেএস