দেশজুড়ে

অস্ত্রোপচারের পর জানা গেল টিউমার নেই

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার পূর্ব পয়সরহাট গ্রামের সোহাগ মিয়ার স্ত্রী সুমি আক্তার (২৫) গাইনি সমস্যার চিকিৎসা নিতে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাসের কাছে যান। শারীরিক পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর চিকিৎসক ধারণা করেন সুমি আক্তারের জরায়ুতে টিউমার হয়েছে। তিনি ইউএসজি টিভিএস নামের একটি পরীক্ষা দিয়ে গৌরনদী শহরের এবি সিদ্দিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে চিকিৎসক মনিকা বিশ্বাসের মাধ্যমে করাতে বলেন। তার কথা মতো ২০ মে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করান সুমি আক্তার।

Advertisement

পরীক্ষার পর মনিকা বিশ্বাস জানান, সুমির জরায়ুতে ডিম আকারের বড় টিউমার রয়েছে। যা দ্রুত অস্ত্রোপচার করাতে হবে। পরবর্তীতে রিপোর্ট নিয়ে সুমি আক্তার চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাসকে দেখালে তিনিও দ্রুত অস্ত্রোপচার করাতে বলেন এবং দ্রুত অস্ত্রোপচার করে টিউমার অপসারণ করা না হলে সুমি আক্তারের জীবননাশের শঙ্কা রয়েছে বলে জানান।

বিষয়টি জানার পর স্বজনরা দুশ্চিন্তায় পড়েন। চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাসের বলে দেওয়া গৌরনদীর শারমিন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয় সুমি আক্তারকে। সেখানে চারদিন আগে অস্ত্রোপচার হয় সুমি আক্তারের। অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাস নিজেই। তবে অস্ত্রোপচারে জরায়ুতে কোনো টিউমারের অস্তিত্ব মেলেনি। অপারেশন থিয়েটারে ডেকে নিয়ে সুমি আক্তারের স্বামী সোহাগ মিয়াকে জানানো হয় কোনো টিউমার পাওয়া যায়নি।

বিষয়টি জেনে হতবাক হয়ে যান সুমি আক্তারের স্বামী সোহাগ মিয়া ও ক্লিনিকে উপস্থিত স্বজনরা। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই দুই চিকিৎস ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রির্পোট নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। অবশ্য বিষয়টি ধামাচাপা দিতে শারমিন ক্লিনিক এবং এবি সিদ্দিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পক্ষ থেকে ওই দুই চিকিৎসকের পক্ষ নিয়ে রোগীর স্বজনদের ম্যানেজ করতে কয়েক দফায় বৈঠক করা হয়েছে।

Advertisement

রোগীর স্বজনরা জানিয়েছেন, ওই বৈঠকে উপস্থিত চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাস পুরো ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন।

ভুক্তোভোগী সুমি আক্তার জানান, ৯ মাস আগে সিজারের মাধ্যামে তার ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। মাস খানেক আগে তার গাইনি সমস্যা দেখা দেয়। তার স্বামীর বাড়ি আগৈলঝাড়ায় হলেও তার বাবার বাড়ি গৌরনদীতে। তিনি বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাসকে দেখান। চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাস তার জরায়ুতে টিউমার হয়েছে বলে জানিয়ে বেশ কিছু ওষুধ লিখে দেন। কিন্তু ওষুধ সেবনের পর অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় পুনরায় বিপুল বিশ্বাসের কাছে যান।

এ সময় তিনি (চিকিৎসক) ইউএসজি টিভিএস নামের একটি পরীক্ষা দিয়ে গৌরনদীর এবি সিদ্দিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে সেখানে ডা. মনিকা বিশ্বাসের মাধ্যমে করাতে বলেন। তার কথা মতো গত ২০ মে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করানো হয়।

সুমি আক্তার আরও জানান, পরীক্ষার পর চিকিৎসক মনিকা বিশ্বাস জানিয়েছেন, তার (সুমি) জরায়ুতে ডিম আকারের টিউমার রয়েছে। যা দ্রুত অপারেশন করাতে হবে। পরবর্তীতে রিপোর্ট নিয়ে চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাসের কাছে আসলে তিনি (চিকিৎসক বিপুল) বলেন, দ্রুত অপারেশন করানো না হলে তার জীবন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।

Advertisement

সুমি আক্তারের স্বামী সোহাগ মিয়া জানান, চিকিৎসকদের কথায় প্রথমে আমরা ভয় পেয়ে যাই। পরবর্তীতে অপারেশন করানোর সিদ্ধান্ত নিই। আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে অপারেশনের জন্য টাকা সংগ্রহ করি। চারদিন আগে বিপুল বিশ্বাস গৌরনদীর শারমিন ক্লিনিকে সুমির অপারেশন করেন।

সোহাগ মিয়া আরও বলেন, চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাস আমাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে জানিয়েছেন কোনো টিউমারের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। সেসময় আমার স্ত্রী অপারেশন থিয়েটারে থাকায় আমাদের প্রতিবাদ করা সম্ভব হয়নি। আমার ধারণা আমার স্ত্রীর জরায়ুতে কোনো ধরনের টিউমার কখনো ছিলই না। শুধু টাকা নেওয়ার জন্য আমার স্ত্রীকে অপারেশন করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত দুই চিকিৎসক ও ভুল রিপোর্ট দেওয়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে বিচার দাবি করছি।

তবে চিকিৎসক বিপুল বিশ্বাস বলেন, রোগীর অবস্থা এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট দেখে টিউমার অপসারণে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে টিউমার পাওয়া যায়নি। এখানে আমার কোনো ভুল ছিল না।

চিকিৎসক মনিকা বিশ্বাস জানান, সুমি আক্তারের রিপোর্টে যা দেখা গেছে, তাই জানানো হয়েছে। রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষায় অনেক সময় রোগীর নামের জায়গায় ভুল হতে পারে। এতে একজন রোগীর রিপোর্ট আরেক জনের কাছে চলে যেতে পারে।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে এবি সিদ্দিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক মো. আনিসের মোবাইলে বুধবার রাতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

গৌরনদী উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নেই। কোনো রোগী বা স্বজনদের পক্ষ থেকে বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাইফ আমীন/এফএ/এএসএম