সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের কিছু সময় পরেই নিজের নাড়িভুঁড়ি হাতে নিয়ে দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক যুবক। মুহূর্তের মধ্যেই তার এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। অসহায় এ যুবকের নাম আহমদ কবীর। বাড়ি ভোলা জেলার চরফ্যাশনে।
Advertisement
পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পর কবীরের শরীরে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। কমে যায় রক্তচাপও। সেসময় চিকিৎসকদের কাছেও দুঃসাধ্য ছিল কবীরের শরীরে অস্ত্রোপচার করা।
তবে চমেক হাসপাতালের একদল চিকিৎসকের নিরলস প্রচেষ্টায় প্রাণ ফিরে পান আহমদ কবীর। কবীর এখন শঙ্কামুক্ত বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বৃহস্পতিবার (৯ জুন) দুপুরে সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক ডা. আফতাব উদ্দিন জানান, বিএম ডিপোর ঘটনার দিন রাত পৌনে ১২টায় আহমদ কবীরকে হাসপাতালে পান তারা। রক্তচাপ না থাকায় অস্ত্রোপচার সম্ভব ছিল না। তাৎক্ষণিক রক্ত ম্যানেজ করে তার শরীরে দেওয়া হয়।
Advertisement
এরপর বের হওয়া নাড়িভুঁড়ি পেটের ভেতর ঢুকিয়ে প্রাথমিকভাবে সেলাই করে দেওয়া হয়। ফ্লুইড দিয়ে রক্তচাপ বাড়ানোর চেষ্টা করা হয়। পরদিন রক্তচাপ কিছুটা স্বাভাবিক হলে অস্ত্রোপাচার করা হয়। এসময় পেট কেটে ক্ষতিগ্রস্ত নাড়িভুঁড়ি জোড়া লাগানো হয়। এরপর ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে।
তবে এখনো ক্ষতস্থানে ইনফেকশনের (সংক্রমণ) ভয় আছে বলে জানান এই চিকিৎসক।
হাসপাতালে আহমদ কবীরের পাশে রয়েছেন তার বৃদ্ধ বাবা সাদেক সর্দার। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমার ছেলে বিএম ডিপোতে লেবারের কাজ করতো। হাসপাতালে চিকিৎসা পেলেও সরকারি কোনো সহায়তা পাইনি আমরা। জেলা প্রশাসকের সহায়তা কেন্দ্রে যোগাযোগ করেছি কিন্তু এখনো সহায়তা পাইনি। শ্রম মন্ত্রণালয়ের দেওয়া সহায়তাও পাইনি।
শনিবার (৪ জুন) রাত সাড়ে ৯টার দিকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। রাত ১০টার পর আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়ে। রাত ১২টার পর থেকে মৃতের খবর আসতে থাকে। সময় যত গড়াতে থাকে, মৃতের সংখ্যাও তত বাড়তে থাকে।
Advertisement
সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহতের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়। ঘটনার পর এ নিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন প্রতিষ্ঠান চার রকম তথ্য দেয়। রোববার (৫ জুন) রাতে দেওয়া তথ্য পরদিন সকালে সংশোধন করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
রোববার বিকেল ৫টায় চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াস চৌধুরী জানান, মৃতের সংখ্যা ৪৯ জন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলা প্রশাসক মমিনুর রহমান জানান, মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন। এরপর রাত ৯টায় জেলা প্রশাসনের নোটিশ বোর্ডেও জানানো হয় মৃতের সংখ্যা ৪৬।
কিন্তু সোমবার (৬ জুন) দুপুরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান জানান, মৃতের সংখ্যা ৪১ জন।
তবে এর আগেই সোমবার সকালে জেলা প্রশাসন নোটিশ বোর্ড সংশোধন করে মৃতের সংখ্যা ৪১ জন বলে জানায়।
এদিকে এ দুর্ঘটনায় মঙ্গলবার আরও দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হলে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৩ জনে। এছাড়া চমেক হাসপাতালে আজ দগ্ধ আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ জনে।
ইকবাল হোসেন/ইএ/এএসএম