মতামত

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কতটা প্রস্তুত আওয়ামী লীগ?

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময়সূচি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে। হাতে আছে এক বছরের কিছু বেশি সময়। ইতিমধ্যে রাজনীতির মাঠ গরম হতে চলেছে। রাজনীতির নিয়ম অনুযায়ী সরকারি দল ও বিরোধি দল সবাই এখন একদিকে ঘর গোছাতে ব্যস্ত আবার অন্যদিকে রাস্তার রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি কথাকাটিও চলছে।

Advertisement

বিএনপি নির্বাচনে আসবে না বললেও তাদের জোট বাঁধার ঘটনা বলছে তারা আসলে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে। যদিও সেই জোটের শরিক দলের কেউই ভোটের মাঠের সৈনিক না বরং তাদের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা প্রায় মাইনাস লেভেলের। তারপরও বিএনপির মতো একটি বড় রাজনৈতিক দল কেন এমন দলছুট দলগুলোর সাথে জোট করছে সেই বিশ্লেষণও আছে মাঠে।

বোঝা যাচ্ছে বিএনপির কাছে আপাতত প্রাধান্য পাচ্ছে সরকারবিরোধী দলের সংখ্যাটা কত সেটা। গুণগত নয় সংখ্যাগত প্রদর্শনই আপাতত বিক্রির কৌশল। তবে এটাও বলার অপেক্ষা রাখে না যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের জনভিত্তি এতোটা নড়বড়ে হয়ে যায়নি বা দেশের জনগণের রাজনৈতিক জ্ঞান এতোটাই নিম্নগামী নয় যে তারা ভিত্তিহীন দলের সমাহারে আপ্লুত হয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করবে। বাকি রইলো আন্তর্জাতিক বড় ভাইয়েরা।

বাস্তবতা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলের যে হিসাব-নিকাশ সেখানে উঠতি অর্থনৈতিক শক্তির দেশ বাংলাদেশের নেতা হিসেবে শেখ হাসিনাকেই তারা চায়। তারপরও পেছনের অংক তো আর থেমে নেই। সেই অংকেও তারা সংখ্যার চেয়েও গুণগত হিসাবটাকেই প্রাধান্য দেবে বলেই মনে করি।

Advertisement

বিএনপির হিসাব যাই হোক না কেন, আগামী নির্বাচনে আসার বাইরে তাদের দেশ বা দেশের বাইরে কোথাও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার সুযোগ নেই। তাই তারা যেভাবেই হোক, নির্বাচনে আসার রাস্তা খুঁজছে। তবে আগামী নির্বাচনে সরকারি দল আওয়ামী লীগেরও কিন্তু চ্যালেঞ্জ কম হবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নকে তারা দৃশ্যমান করতে সক্ষম হয়েছে। পদ্মা সেতুর চ্যালেঞ্জে ১০০ নাম্বার পেয়ে সবার ওপর চলে এসেছে। ইতিহাসের পাতায় এই এক পদ্মা সেতুই সক্ষম একজন শেখ হাসিনাকে বাঁচিয়ে রাখতে। কিন্তু সবচেয়ে বড় যে জায়গাটিতে জনগণের অসন্তোষের বীজটি লুকিয়ে আছে সেটি হচ্ছে অর্থনৈতিক ডিউ ডিলিজেন্সের বিষয়টি।

উন্নয়নকে সমস্তরের বণ্টনের হিসাবটি হয়তো পুরোপুরি আয়ত্তে আনাটা অর্থনীতির হিসাবেই অসম্ভব কিন্তু অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার জায়গাটিকে দিতে হবে প্রাধান্য। একদিকে দ্রব্যমূল্য বেড়ে চলেছে অন্যদিকে শত শত কোটি টাকা লুটে নিছে লুটেরারা। সেই টাকা আবার দেশেও থাকছে না। চলে যাছে পাচার হয়ে। ব্যাংকগুলোতে রেগুলেশনের সমস্যা। সাধারণ মানুষ অর্থনীতির অত মারপ্যাঁচ বোঝে না। তারা উন্নতি বলতে বুঝে কত কম টাকায় বাজার করতে পারছে আর আয়ের কত অংশ বাঁচিয়ে রাখতে পারছে।

বড় বড় প্রকল্পের মধ্যে কেবল পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হয়েছে। মেট্রোরেলের কাজ এখনও চলছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলাকালীন সাধারণ মানুষের হিসাবের খাতায় জমা হয়েছে কিছু ক্ষয়ক্ষতির হিসাব। কাজগুলো শেষ হলে যখন উপকারিতার হিসাবটিই দৃশ্যমান হবে তখন হয়তো আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গাটি ফিরে আসবে কিন্তু আগামী নির্বাচনের আগে কতটা কী হবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে, বাজারের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে। পাশাপাশি আছে সরকারবিরোধীদের প্রোপাগান্ডা। তাই বাজারের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চ্যালেঞ্জও কম ভোগাবে না সরকারকে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে দেশের সাংস্কৃতিক স্থিতিশীলতা। দেশে যেহারে ভণ্ড ও লেবাসধারী ধার্মিকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে সেটিকে যদি সঠিক ও সুস্থ সাংস্কৃতিক পরিবেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তাহলে এই অস্থিতিশীলতা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পিলারকে ধাক্কা দিতেই থাকবে।

Advertisement

বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, করোনার ধাক্কায় যখন বিশ্ব অর্থনীতি বেসামাল হয়ে পড়েছে তখন বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। এই কৃতিত্ব কেবল একজন শেখ হাসিনাকেই দেওয়া যায়। করোনা মহামারি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এবং মানুষকে এর সাথেই বসবাস করার প্রস্তুতি নেয়া লাগবে এই দূরদর্শী চিন্তার থেকেই তিনি বাংলাদেশের আশু অর্থনৈতিক ও খাদ্য সংকটকে মোকাবিলায় দেশের সব ব্যবসায়িক কার্যক্রমকে স্বাভাবিক করে দিয়েছিলেন। বহু সমালোচনাকে তোয়াক্কা না করে তিনি একজন মানুষও যেন না খেয়ে মরে সেই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। সংসারের বাস্তবতা বুঝেই কর্তাকে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হয়। আর এই হিসাবে তিনি একদম পাক্কা কান্ডারির মতোই ভূমিকা রেখেছিলেন।

কথা হচ্ছে, এই যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার গুণগান, এটি লম্বা করতে হলেও সরকারকে আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়ে আসতে হবে। সেই বৈতরণী কেবল সরকারের নিজের জন্য নয়, দরকার গোটা দেশের জন্যই। এমনকি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অংকের হিসাবেও এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অবস্থানকে দৃঢ় করতে হলে এই সরকারের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। অনেকে মনে করতে পারেন যে, আমি হয়তো সরকারের তোষামোদি করার জন্য বলছি কিন্তু না।

আমাদের দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস বলে, যে সরকার ক্ষমতায় আসে তারা পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতাকে দেশের বাস্তবতায় বিবেচনা করে না, করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে। যদিও শেখ হাসিনার আগে আর কোনো সরকারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মতো কোনো উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেনি। একথাও অস্বীকারের উপায় নেই যে শেখ হাসিনার বিকল্প কোনো নেতা আজ কেন আগামীর দিনেও চোখে পড়ছে না। এটি একদিকে হুমকি আবার অন্যদিকে আশীর্বাদ।

অন্তত চলমান বাংলাদেশের গতিকে চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য শেখ হাসিনাই এখনও অবিকল্প। তাই সব চ্যালেঞ্জকে আশীর্বাদে পরিণত করার ভরসাও তিনি। তাই তো সামনের নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস করার জন্য সিলেবাস প্রস্তুতি ও মোস্ট ইম্পর্ট্যান্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর তৈরির কাজটি করতে হবে খুব সাহসিকতার সাথে।

লেখক: অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, কলামিস্ট।

এইচআর/ফারুক/এএসএম