অর্থনৈতিক সংকট, প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা মহামারির কারণে কোরবানি না করে, এ টাকা গরিব-দুঃখীর মাঝে বণ্টন করে দেওয়া যাবে কি? এতে কোরবানি করার বিধান আদায় হবে কি? যদি কেউ কোরবানি না করে টাকা উল্লেখিত প্রেক্ষাপটে খরচ তবে কি সে গুনাহগার হবে?
Advertisement
‘না’ যার ওপর কোরবানি আবশ্যক; সে কোরবানি না করে সেই টাকা সঙ্কটকালীন সময়ে কিংবা গরিব-দুঃখীর মাঝে দান করা যাবে না। কেউ এমনটি করলে তার কোরবানি আদায় হবে না। বরং কোরবানি দাতার জন্য টাকা দান না করে তাকে কোরবানিই করতে হবে। কারণ-
কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি স্বতন্ত্র হুকুম। সাহাবায়ে কেরাম একদিন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই কোরবানি কী?
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘এটা তোমাদের পিতা হজরত ইবরাহিম (আলাইহিস সালাম)-এর সুন্নাত (রীতিনীতি)। এ কোরবানি বিশেষ একটি আমলও বটে। হাদিসে এসেছে-
Advertisement
নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কোরবানির দিনগুলোতে আল্লাহর কাছে পশুর রক্ত প্রবাহিত করার চেয়ে অধিক পছন্দনীয় আমল আর নেই।’ (তিরমিজি)
কোরবানি মহান আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহ তাআলা বলেন-
فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
‘অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার : আয়াত ২)
Advertisement
আল্লাহ তাআলা বান্দাকে কোরবানি সম্পর্কে মানুষকে এ শিক্ষা ও উৎসাহ দিয়েছেন-
قُلْ إِنَّ صَلاَتِيْ وَنُسُكِيْ وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِيْ للهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ
‘(হে রাসুল! আপনি) বলুন, অবশ্যই আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন, আমার মৃত্যু বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্যই।’ (সুরা আনআম : আয়াত ১৬২)
সুতরাং কোরবানির এসব হুকুম ও দিকনির্দেশনা আসার পর নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছর কোরবানি করেছেন ।’ (তিরমিজি)
মনে রাখা জরুরি
কোরআন-সুন্নাহর এসব দিকনির্দেশনা থেকে প্রমাণিত যে, কোরবানি দাতার জন্য এর ব্যতিক্রম টাকা-পয়সা দান করার মাধ্যমে কোরবানির হুকুম রহিত হবে না। বরং কোরবানি দাতার জন্য কোরবানি করা আবশ্যক। কোরবানি দান করলে কোরবানি হুকুম আদায় হবে না।
যে ব্যক্তির উপর কোরবানি ওয়াজিব হয়েছে ওই ব্যক্তির জন্য কোরবানির নির্ধারিত দিনগুলোতে পশু জবাই করলেই কেবল কোরবানির হুকুম আদায় হবে। কোরবানি না করে এর পরিবর্তে পশুর মূল্য দান-সাদকা করে দিলে কোরবানির ওয়াজিব আদায় হবে না। বরং ওয়াজিব বিধান লংঘন করার কারণে গুনাহগার হতে হবে।
কোরবানি না করে পশুর মূল্য দান করে দিলে কোরবানি যেমন আদায় হবে না। তেমনি কোরবানি না করে পশুর মূল্য দান-সাদকাও করা যাবে না। কেননা দান-সাদকা কোরবানির বিধান, স্থান বা আমল পরির্তন করতে পারে না।
এমনকি যদি কোনো অঞ্চলে কোরবানির পশু সংকট দেখা দেয় তবে গরু, মহিষ, উট- এ ধরণের বড় একটি পশুতে সাতজন শরিক হয়ে কোরবানি দিতে পারবে। অথবা যার উপর কোরবানি আবশ্যক হয়েছে তার পক্ষ থেকে এক বছর বয়সের একটি ছাগল দিয়ে হলেও কোরবানি আদায় করা যাবে। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে।
সুতরাং মুসলিম উম্মাহর উচিত, যার উপর কোরবানি ওয়াজিব; সে যেন তা যথাযথভাবে কোরবানি আদায় করে। কোরবানির পর চাইলে যে কেউ ব্যক্তি উদ্যোগ বা সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যেমে সাধ্যমতো দান-সাদকার কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিভিন্ন সঙ্কটকালীন সময়ে কোরবানি করার পাশাপাশি দান-সাদকা করার তাওফিক দান করুন। গরিব-অসহায়-দুঃখী মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তাওফিক দান করুন। কোরবানি ইস্যুতে কোরআন-সুন্নাহর উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জিকেএস