‘নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ’ বা ‘খাদ্য সুরক্ষা’কে ইংরেজিতে বলা হয় ‘ফুড সেফটি’। আর খাদ্যবাহিত অসুস্থতা প্রতিরোধ করার জন্য খাদ্য ব্যবহার, প্রস্তুত করা, প্রক্রিয়াজাত করা ও সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বা বিদ্যাই হচ্ছে নিরাপদ খাদ্য। কোনো সাধারণ খাদ্য গ্রহণের পর দুই বা তার বেশি ব্যক্তি একই ধরনের অসুস্থতা অনুভব করলে সেই ঘটনাকে খাদ্যবাহিত অসুস্থতার প্রাদুর্ভাব হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।
Advertisement
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী প্রতি দশজনের মধ্যে একজন খাদ্যবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়। নিরাপদ খাদ্য সুস্বাস্থ্যের উৎস হলেও অনিরাপদ খাদ্য অনেক রোগের কারণ হয়ে দেখা দেয়। তাই সুস্বাস্থ্যের জন্য সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য বেশ কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে খাদ্য প্রতিরক্ষা (ফুড ডিফেন্স) আরেকটি ধারণা, যেখানে খাদ্যে ইচ্ছাকৃতভাবে জীবাণুর সংক্রমণ ঘটানো বা ভেজাল মেশানো প্রতিরোধ করা হয়। খাদ্য সুরক্ষা (নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণ) ও খাদ্য প্রতিরক্ষার কাজ হচ্ছে, একত্রে ভোক্তাদের ক্ষতি প্রতিরোধ করা।
খাদ্য সুরক্ষাকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। একটি হলো- শিল্পকারখানা থেকে বাজার পর্যন্ত সুরক্ষা। অপরটি হলো- বাজার থেকে ক্রেতা বা ভোক্তা পর্যন্ত সুরক্ষা।
Advertisement
শিল্পকারখানা থেকে বাজার পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষার মধ্যে খাদ্যের উৎস, মোড়কের ওপর তথ্য, স্বাস্থ্যবিধি, রুচি-স্বাদ বর্ধকের ব্যবহার, কীটনাশকের অবশিষ্ট, জৈবপ্রযুক্তি দ্বারা উৎপন্ন খাদ্যসংক্রান্ত নীতি, আমদানিকৃত ও রপ্তানিকৃত খাদ্য সরকারের পর্যবেক্ষণ এবং খাদ্য প্রত্যয়ন ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।
অপরদিকে বাজার থেকে ভোক্তা পর্যন্ত খাদ্য সুরক্ষার রীতি-নীতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা হলো, খাদ্যকে বাজারে অবশ্যই সুরক্ষিত থাকতে হবে। ভোক্তার কাছে নিরাপদে খাদ্য সরবরাহ করা বা ভোক্তার জন্য নিরাপদে খাদ্য প্রস্তুত করা একটি জরুরি বিষয়।
খাদ্যের মাধ্যমে রোগ-জীবাণু পরিবাহিত হয়ে কোনো ব্যক্তি বা পশুর অসুস্থতা এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। প্রধান প্রধান রোগ-জীবাণুগুলো হলো- ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ছাতা ও ছত্রাক। এ ছাড়া খাদ্য রোগ-জীবাণুগুলোর জন্য বৃদ্ধি ও প্রজননের উর্বর মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।
উন্নত দেশগুলোয় খাদ্য প্রস্তুতকরণের উপরে সূক্ষ্ম মান আছে। এর বিপরীতে অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলোয় মানের সংখ্যা কম এবং ওইসব মান প্রয়োগও করা হয় কম। আরেকটি সমস্যা হলো- পর্যাপ্ত সুপেয় পানি বা পানীয় জলের অভাব, যা রোগ ছড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
Advertisement
তাত্ত্বিকভাবে খাদ্যের বিষক্রিয়া শতভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যক্তির সংখ্যাধিক্যের কারণে এবং সমস্ত সাবধানতা অবলম্বনের পরও রোগ-জীবাণু খাদ্যে প্রবেশের ঝুঁকি থাকে বলে এরূপ প্রতিরোধ অর্জন করা কঠিন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুযায়ী, খাদ্যসংক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধির পাঁচটি মূলনীতি হলো:১. মানুষ, গৃহপালিত প্রাণী ও কীটপতঙ্গ থেকে রোগজীবাণু খাদ্যে সংক্রমণ হওয়া প্রতিরোধ করা।২. কাঁচা ও রান্না করা খাবার আলাদা করে রাখা, যাতে রান্না করা খাবারে জীবাণুর সংক্রমণ না হতে পারে।৩. পর্যাপ্ত দৈর্ঘের সময় ধরে ও যথাযথ তাপমাত্রায় খাদ্য রান্না করা, যাতে খাদ্যের রোগ-জীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।৪. সঠিক তাপমাত্রায় খাদ্য সংরক্ষণ করা।৫. নিরাপদ পানি ও নিরাপদ কাঁচামাল ব্যবহার করা।
তাই দেশে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কাজ করছে জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবস। এ বছর বিশ্ব নিরাপদ খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য ‘নিরাপদ খাদ্য, উন্নত স্বাস্থ্য’।
এসইউ/এএসএম