জাতীয়

দোকানের ক্যাশ কাউন্টারে লুকিয়ে মালিক বাঁচলেও ঝলসে যান ২ ক্রেতা

শনিবার (৪ জুন) রাত ৮টার দিকে নিজের দোকানে বসেছিলেন মো. রাজু আহমেদ (৩৫)। সেখান থেকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন দেখতে পান তিনি। ডিপোর মূল ফটকের সামনের দিকে তার দোকান। ঘটনাস্থল থেকে দোকানটি আধা কিলোমিটার দূরে। রাত ১১টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে সেখানে বিস্ফোরণ হয়। এসময় তার দোকানের সামনের অংশে দাঁড়িয়েছিলেন দুই ক্রেতা।

Advertisement

বিস্ফোরণের শব্দে দোকানি রাজু দ্রুত ক্যাশ কাউন্টারের আড়ালে বসে পড়েন। এতে তার কোনো ক্ষতি না হলেও সামনে থাকা দুই ক্রেতার পুরো শরীর ঝলসে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে গেছে দোকানের শাটার। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ভেঙে গেছে আশপাশের অসংখ্য ঘরবাড়ি।

বিএম কনটেইনার ডিপোতে ঘটা ভয়াবহ বিস্ফোরণের খুব কাছে থেকেও অক্ষত অবস্থায় ফেরা মুদিদোকানি রাজু আহমেদ মঙ্গলবার (৭ জুন) জাগো নিউজকে এভাবেই সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দেন।

বিস্ফোরণে আশপাশের বাড়ির কাচের গ্লাস ভেঙে পড়ে/ছবি: জাগো নিউজ

Advertisement

রাজু আহমেদ বলেন, ‘দোকানের কাছাকাছি আমার দোতলা বাড়ি। বাসায় ১৪টি কাচের জানালা ছিল। সবগুলোর গ্লাস ভেঙে গেছে। ভাঙা কাচ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় ঘরে পা ফেলার উপায় নেই। ঘরে কাঠের যে দরজা ছিল, সেটাও ভেঙে দ্বিখণ্ড হয়ে গেছে। রাতে বাড়িতে নারী-শিশুরা ঘুমাচ্ছিল। তাদের ওপর ভাঙা কাচ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে।’

ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের জন্য মালিকপক্ষ দায়ী বলে মনে করেন দোকানি রাজু আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মালিকের ভুলের কারণে এতবড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারা যদি সুরক্ষিতভাবে সবকিছুর ব্যবস্থা করতেন, তাহলে এতবেশি ক্ষতি হতো না।’

বিস্ফোরণের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আরেক ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিস্ফোরণের তীব্রতা এত বেশি ছিল যে, তিন কেজিরও বেশি ওজনের লোহা প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে উড়ে গিয়ে একটি বাড়ির জানালার ওপর পড়েছে। জানালার গ্লাস ভেঙে আমার মেয়ের পা কেটে গেছে। বিস্ফোরণে আমার বাড়ির ভবনটি কেঁপে ওঠে।’

দুমড়ে-মুচড়ে যায় দোকানের শাটার/ছবি: জাগো নিউজ

Advertisement

বিএম কনটেইনার ডিপোর উত্তর পাশে ফার্মেসির মালিক সুমন কুমার নাথ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিস্ফোরণে দোকানের তাকে সাজিয়ে রাখা সব ওষুধ তছনছ হয়ে যায়। কাচের বোতলের সিরাপগুলো নিচে পড়ে ভেঙে যায়।’

এদিকে সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে চরম আতঙ্কে দিনাতিপাত করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ফের বিস্ফোরণের আশঙ্কায় অনেকেই এলাকা ছাড়ছেন। বিস্ফোরণ আতঙ্কে শিশুদের অন্য এলাকায় স্বজনদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন অনেক বাসিন্দা।

শনিবার (৪ জুন) রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগে। আগুন লাগার পর কেমিক্যাল থাকা কনটেইনারে একের পর এক বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে।

ভেঙে পড়া কাচের টুকরো/ছবি: জাগো নিউজ

প্রায় ৬১ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (৭ জুন) বেলা ১১টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ১৮ ব্রিগেডের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফুল ইসলাম হিমেল এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘ডিপো থেকে বড় ধরনের কোনো বিপদ হওয়ার আশঙ্কা নেই।’

ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে এ পর্যন্ত ৪৩ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।

টিটি/এএএইচ/এএসএম