গণমাধ্যম

কর্মগুণে পরম শ্রদ্ধেয় ছিলেন আলতাফ মাহমুদ

সাংবাদিকতায় প্রায় দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও জনপ্রিয় সাংবাদিক নেতা আলতাফ মাহমুদকে কাছাকাছি দেখার সুযোগ হয় ২০১৪ সালে। প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআইবি) আয়োজিত সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার একটি প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে  নেপাল ভ্রমনের সময়।   সফরের এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সফর কর্মসূচিতে সেদিন সন্ধ্যায় নেপালের ধুলিখেইলের স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত মতবিনিময় সভা ছিল। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু দুপুরে খেতে এসে সবাইকে জানালেন, দুঃসংবাদ আছে, আলতাফ ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ধুলিখেইলে আসার আগে কাঠমুন্ডু থেকে কান্তিপুরের উঁচু পাহাড়ে উঠার সময়ও কিছুটা অসুস্থতাবোধ করছিলেন। হার্টের অসুখের কারণে চিকিৎসকরা সাবধানে চলাফেরা করতে বলেছিলেন বলে তিনি সকলকে জানিয়েছিলেন। তপু ভাইয়ের কথা শুনে ভাবলাম হয়তো হার্টের অসুখ হয়েছে। কিন্তু তিনি অভয় দিয়ে জানালেন, লিডার পেটের পীড়ায় আক্রান্ত। স্বাস্থ্য বিষয়ক রিপোর্টিং করি বলে তপু ভাই আমার কাছেই ওষুধ আছে কিনা জানতে চাইলেন। খাওয়া শেষে দ্রুত ওষুধ নিয়ে তার রুমে নক করতেই বেরিয়ে এলেন। ওষুধ পেয়ে বার বার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছিলেন। তার মতো বড় মাপের একজন নেতা যেভাবে বার বার বলছিলেন আমি রীতিমতো লজ্জা পেয়ে গেলাম। ওষুধ খেয়ে সন্ধ্যায় একটু দেরী হলেও ঠিকই নেপালি সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় হাজির হলেন তিনি। সবাই তো হতবাক। তিনি বললেন, বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার লোভ সামলাতে না পারায় কিছুটা অসুস্থ থাকলেও চলে এলাম।   সফরসঙ্গীদের মধ্যে আরো ছিলেন, শাহনাজ মুন্নী, নজরুল কবির, বরুন ভৌমিক নয়ন, জান্নাতুল বাকেয়া কেকা, বদরুদ্দোজা সুমন, তৌফিক মারুফ প্রমুখ। বয়সে বড় হলেও গোটা সফরে তিনি সকলের সঙ্গে তরুণের মতোই মিশেছেন। এর আগে শুধু দেখা সাক্ষাৎ হলে হাই হ্যালো এতটুকুই। যুগান্তরে চাকরিরত অবস্থায় তাকে ভোটের সময় বেশ কয়েকবার দেখেছি। যুগান্তর সম্পাদক সাইফুল আলম ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্টিং ডেস্কে এসে মিষ্টি হেসে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করে ভোট চাইতেন। তাকে দেখে খুব পরিচিত আর আপনজন মনে হতো। কিন্তু সরাসরি সেভাবে কথা হয়নি কখনও। নেপালে গিয়ে তার সাধারণ পোশাক, হাঁটাচলা, কথাবার্তা শুনে বুঝলাম একেই বলে জাত নেতা। নেপালের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র ধুলিখেইলে পাহাড়ের খাঁজে নির্মিত হোটেলে রাতের আলো আঁধারিতে জানতে চেয়েছিলাম আপনি তো অনেক জনপ্রিয় সাংবাদিক নেতা। অনেকটা কৌতুহলবশত তার বাড়ি গাড়ি ব্যাংক ব্যালেন্স কেমন আছে জানতে চাইলে বলেন, এক সময় খবর পত্রিকা ছিল হট কেক। ওই সময়েই ইচ্ছে করলে বিপুল অর্থ আয় করতে পারতেন। অনেক সময় নিউজ কমপ্রোমাইজ করার জন্য বড় অঙ্কের অফার পেয়েছেন কিন্তু সব সময় তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।তিনি জানান, টাকা পয়সা কখনও তাকে টানেনি। সংসারে টানাপোড়েন থাকলেও গত তিন দশকেরও বেশি সময় সাংবাদিকতা পেশায় কখনও অসৎ পথে পা বাড়াননি। আজকাল বছর কয়েক না ঘুরতেই অনেকেই দামি ফ্ল্যাট কেনেন, দামি গাড়ি হাঁকাচ্ছেন এ কথা স্বীকার করে বলেন, সৎভাবে থেকে এসব করা খুব কষ্ট। কিন্তু সততাকে বিসর্জন দিলে তা সম্ভব। গত সপ্তাহে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে তাকে দেখতে গেলে তিনি স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসার চেষ্টা করে জানালেন, ভালই আছেন। অনেক সাংবাদিক তার চাইতে খারাপ আছে জানিয়ে সাংবাদিকরা ভাল থাকলে তিনি ভাল থাকবেন বলে জানান। তার মতো একজন নেতার সঙ্গে মাখামাখি সম্পর্ক না থাকলেও কর্মগুণে আমার কাছে পরম শ্রদ্ধেয় হয়ে উঠেছিলেন। সামান্য ক্ষমতা পেলে যেখানে এক শ্রেণির সাংবাদিক প্রাডো গাড়ি চড়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ওঠেন সেখানে ক্ষমতার কাছাকাছি থেকেই তিনি নিলোর্ভ জীবন যাপন করেছেন। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে আপনার শরীরটা পৃথিবী ত্যাগ করলেও আপনার আদর্শ রয়ে গেছে। লিডার আপনাকে সশ্রদ্ধ অভিনন্দন, আল্লাহ আপনাকে জান্নাতবাসী করেন এই কামনা করি।এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/আরআইপি

Advertisement