কৃষি ও প্রকৃতি

১৫ কাঠায় দেড় লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা

রাজশাহীর পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের মোসলেমের মোড় এলাকার চাষি রওনাফ জাহান (৬৫)। বাড়ির পাশেই রয়েছে দুবিঘা আবাদী জমি। গত বছরে তাতে কলা চাষ করেছিলেন। তবে এবার ১৫ কাঠা জমিতে লাগিয়েছেন দেশি জাতের উচ্চ ফলনশীল পেঁপে। ‘রেড লেডি’ জাতের মতোই ফলন হওয়ায় মাত্র ১৫ কাঠায় দেড় লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি আশা করছেন এ পেঁপে চাষি।

Advertisement

জানতে চাইলে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদককে রওনাফ জাহান বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর ভগ্নিপতীর (ভায়রা) কাছে থেকে প্রতি প্যাকেট (দুটি-তিনটি করে গাছ) ১০ টাকা করে কিনে নিয়েছি।

গতবছর সে এক বিঘা জমি থেকে প্রায় তিন লাখ টাকার মতো পেঁপে বিক্রি করেছে। তার বীজ বপন থেকে শুরু পেঁপের ফলন ও বাজারজাতকরণ সব আমার চোখের সামনেই হয়েছে। তাই আমিও ভাবলাম, কলার বদলে কয়েক কাঠা জমিতে পেঁপে লাগাই। অন্তত ভালো ফলন ও দাম পেয়ে লাভবান হওয়া যাবে।’

জাত ও ফলন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো হাইব্রিড জাত নয়। জাত দেশি, কিন্তু এটি রেড লেডির মতোই উচ্চফলনশীল। ফলের রং লাল-সবুজ। চামড়া পুরু এবং আকারে বড়। একেকটি পেঁপে প্রায় দুই থেকে আড়াই কেজি ওজনের হয়ে থাকে। স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত। একারণে বাজারেও এর বেশ চাহিদা আছে।’

Advertisement

‘গেলো বছরে ভায়রার কাছে থেকে তিনটি চারা এনে আমার পুকুরের পাড়ে পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়েছিলাম। বাড়িতে খাওয়ার পরও প্রায় ২ হাজার টাকার পেঁপে বাজারে বিক্রি করেছি। তাই জাত দেখে লাভ নাই। এই পেঁপের ফলনও বেশি, বাজারে চাহিদাও বেশি- বলেন এ কৃষক।’

পারিলার এ পেঁপে চাষি বলেন, ‘গত বছর ২ বিঘা জমিতে গতবছর কলা চাষ করেছিলাম। এবার কলার গাছ তুলে ফেলে দেশি জাতের পেঁপে চাষ করেছি ১৫ কাঠা জমিতে। মাত্র সাড়ে চার মাসের যেতে না যেতেই গাছে রীতিমতো ফুল আসতে শুরু হয়েছে। তাছাড়া আমার এ জমিতে পুকুরের নিচের মাটি জমিতে দেওয়া।

তোলা মাটি হওয়ার কারণে জোর বেশি। তাই রোগ বালাই তেমন নেই বললেই চলে। আর তাই আশা করছি প্রতি মণ পেঁপে ৪৫০-৫০০ টাকা দরে রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে পারব। সামনের বছরের জন্য এ চারা সংগ্রহ করে রেখে দিবো ভাবছি।’

রওনাফ জাহানের মতো পবা উপজেলার এলাকার অর্ধশতাধিক কৃষক রেড লেডি, দেশি, হাইব্রিড জাতের পেঁপে চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন। এসব কৃষক এর আগে জমিতে কলা, আলু বিভিন্ন সবজি চাষ করতেন। কিন্তু রেড লেডি পেঁপে থেকে বছরে দুবছর ফলন পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে লাভের দিক থেকে আলুর কয়েকগুণ বেশি। তাই পবার অধিকাংশ কৃষক ‘রেড লেডি’ পেঁপে চাষে ঝুঁকছেন।

Advertisement

তবে রাজশাহীর পবায় দেশি জাতের কিছু পেঁপে বেশি চাষ হয়। স্বাদ ও গন্ধ ভালো হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে পেঁপের। দেশি জাতের মধ্যে কিছু জাত উচ্চ ফলনশীল। এসব জাতের চারা চাষিরা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সংগ্রহ করে রাখছেন। এতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতারও প্রয়োজন পড়ছে না বলে জানিয়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকেরা।

রাজশাহীর সিলিন্দার বাবুল ইসলাম নামের আরেক পেঁপে চাষি বলেন, ‘গত বছরের শুরুর দিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চারা নিয়ে আসি। গাছের বয়স ৭-৮ মাস হলে ফল আসতে শুরু করে। এখন আমার দুই বিঘা জমিতে পেঁপে আছে।

প্রতিবার ফল ভাঙার পর ডিএপি, ইউরিয়া,পটাস, সালফার দিতে হয়। বৃষ্টি না হলে সেঁচ দিতে হয় ১৫-২০ দিন পর পর। পরিপক্ক পেঁপে গড়ে ৫০০ টাকা মণ বিক্রি হয়। বিঘাতে এখন ভালোই লাভ করতে পারছি।’

জেলা কৃষি সূত্রে জানা যায়, রেড লেডি ও দেশি উচ্চ ফলনশীল পেঁপে চৈত্র মাসের প্রথম দুসপ্তাহের মধ্যে চারা রোপণ করতে হয়। ২৪-২৫ মাস পর্যন্ত একটানা ফলন পাওয়া যায়। এ জাতের পেঁপে পুরু, গাঢ় লাল, স্বাদেও বেশ মিষ্টি ও সুগন্ধিযুক্ত।

গাছের উচ্চতা ৬০-৮০ সেন্টিমিটার হলে ফল ধরা শুরু হয়। প্রতিটি গাছে ৪০টির বেশি ফল হয়। পাকা অবস্থায়ও দূর-দূরান্তে বাজারজাত করা যায়। রোগ সহ্য করারও ক্ষমতা দেশি জাতের পেঁপের অনেকটাই বেশি।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ হিল কাফি বলেন, কিছু কিছু দেশি পেঁপে আছে যেগুলোর ফলন হাইব্রিড জাতের রেড লেডির মতোই।

তবে এসব দেশি জাতের পেঁপের স্বাদ, গন্ধ ও রোগবালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্যান্য পেঁপের জাতের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে থাকে। এবছর সবজির দাম বেশি। তাই চাষিদের আগ্রহ বেশি। তাছাড়া সামনে বছর পেঁপের আবাদ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, রেড লেডি কিংবা দেশি জাতের পেঁপে খুব মিষ্টি এবং পুষ্টিগুণও ভালো। সচেতন মানুষের খাদ্য তালিকায় পেঁপে থেকে থাকে। দেশি জাতের পেঁপেগুলো স্বল্প সময়ে ফল পাওয়া যায়।

যারা এ পেঁপের চাষ করছেন তাদের প্রত্যেককে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে ব্যতিক্রমী এমন জাত হলে অবশ্যই আমাদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এমন দেশি জাতের উচ্চ ফলনশীল পেঁপে চাষে স্থানীয় কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে।

ফয়সাল আহমেদ/এমএমএফ/জেআইএম