রাজার সাজসজ্জাও রাজার মতো। ব্যতিক্রমী গোঁফ, চা বিক্রির অভিনব ধরনের জন্য তাকে রাজা মামা বলে ডাকেন সবাই। দোকানের চারদিকে ক্রেতাদের ভিড়। অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে টোকেন হাতে অপেক্ষা করছেন রাজার চা পান করতে।
Advertisement
রাজা মিয়ার পুরো নাম আজহার উদ্দিন বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নওগাঁর গ্রামে। বাবার নাম আলিম উদ্দিনের ছেলে। তিন হাজার টাকার চায়ের টং দোকান থেকে শুরু করে এখন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৮টি দোকান তার। এসব দোকান থেকে মাসে লাখ টাকার বেশি আয় করেন রাজা মিয়ার। সবগুলো দোকানে ৬৫ জন কর্মচারী কাজ করেন।
নগরীর টাউনহল মাঠে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী তাঁত বস্ত্র, হস্ত ও কুটির শিল্প মেলা। মেলায় বেশ ভালোই চলছে রাজার মিয়ার চায়ের দোকান। সামনে সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন পিতলের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইন ও আকারের কেটলি। আর চারদিকে ক্রেতাদের ভিড়।
মেলায় ঘুরতে আসা খাইরুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে শুনেছি রাজার চা নাকি অনেক ভাল। তাই মেলায় এসে তার দোকানে চা পান করতে বসলাম।
Advertisement
সেখানে চা পান করছিলেন আলিমুল হাসান নামে একজন। তিনি বলেন, ‘রাজার চা’ নামের মতোই। ৫০ টাকায় চা পান করলেও তৃপ্তিতে রয়েছে।
এ বিষয়ে রাজা মিয়ার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক সময় তিনি বাসা-বাড়িতে কাজ করা থেকে শুরু করে ফেরি করে পান, সিগারেট, চকলেটও বিক্রি করেছেন। অন্যের বাড়িতে গরু দেখাশোনার পাশাপাশি চাষাবাদের কাজও করেন তিনি। একপর্যায়ে পরিচিত একজনের পরামর্শে ঢাকায় গিয়ে বড়ই বিক্রি শুরু করেন রাজা। তখন তাকে বিমানবন্দর এলাকার পাবলিক টয়লেটের ছাদেও রাত কাটাতে হয়েছে।
সেখান থেকে একজনের মাধ্যমে রাজা আরব আমিরাতের আবুধাবিতে যান। বিদেশ গিয়ে বিভিন্ন দেশের শেফদের কাছ থেকে চা বানানোর কৌশল রপ্ত করেন। একদিন হোটেল থেকে পালিয়ে বের হলে আবুধাবির পুলিশ তাকে ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়।
রাজা মিয়া বলেন, দেশে ফিরে আমি ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় তিন হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে চায়ের দোকান শুরু করি। প্রথমে পাঁচ টাকায় চা বিক্রি করি। মাল্টা চা, কালিজিরা চা, তেঁতুল চা আর নরমাল দুধ চা বিক্রি করেছি। পাশাপাশি আবুধাবিতে শেখা রেসিপি দিয়ে কিছু স্পেশাল চা বানাতে শুরু করি। সেসব চা ক্রেতারা সানন্দে গ্রহণ করেন। এক সময় কাজুবাদামের চা ও ইন্ডিয়ান মাসালা টি জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
Advertisement
তিনি বলেন, কাজুবাদামের চায়ে কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, হরলিকস, ম্যাটকফি, ব্ল্যাক কফি, কিসমিস, চিনি, গুঁড়ো দুধ, কনডেন্স মিল্ক দিই। একইভাবে ইন্ডিয়ান মাসালা টিও তৈরি করি অনেক উপাদান দিয়ে। ইন্ডিয়ান মাসালা টিতে তেজপাতা, এলাচ, লবঙ্গ, হরলিকস, গুঁড়ো দুধ, কনডেন্স মিল্ক ও ম্যাটকফি ছড়িয়ে দেই। তখন এক কাপ চায়ের দাম ছিল ১৫ টাকা।
এখন প্রতি কাপ চায়ের দাম নিচ্ছি ৩০-৫০ টাকা। ইরানি, জাফরানি, ইন্ডিয়ানসহ দেশ-বিদেশের ১৫২ প্রকারের চা বানিয়ে বিক্রি করি।
রাজা বলেন, এক সময় আমি কাজের জন্য মানুষের ধারে ধারে ঘুরেছি। অথচ এখন আমার ১৮ চায়ের দোকানে ৬৫ জন কাজ করেন। প্রত্যেককে ১২-২২ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছি। এটাই আমার কাছে আনন্দের।
মঞ্জুরুল ইসলাম/আরএইচ/জিকেএস