সকালের নাস্তা থেকে শুরু করে দিনে এক বা একাধিক ডিম খান অনেকেই। বিশেষ করে স্বাস্থ্য সচেতনরা দৈনিক একাধিক ডিম রাখেন পাতে। যদিও সবারই জানা যে, ডিমের কুসুবে পর্যাপ্ত কোলেস্টেরল থাকে।
Advertisement
ফলে অতিরিক্ত ডিম খেলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও বাড়তে পারে। অনেকের ধারণা, বেশি ডিম খাওয়া হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। আবার কিছু গবেষণা বলে ডিম হৃদয়ের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী। তাহলে সত্যি কোনটি?
২০১৮ সালে হার্ট জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা পরিচালিত হয় চীনের প্রায় অর্ধ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্কদের উপর। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন অন্তত একটি করে ডিম খান তাদের হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে কম।
গবেষকরা এই সমীক্ষায় জনসংখ্যা-ভিত্তিক অধ্যয়ন চালান। ডিমের ব্যবহার কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী তা জানা ছিল গবেষকদের মূল উদ্দেশ্য।
Advertisement
চীনের বেইজিংয়ের পিকিং ইউনিভার্সিটির এপিডেমিওলজি অ্যান্ড বায়োস্ট্যাটিস্টিকস বিভাগের (এমএসসি) অধ্যাপক ও সমীক্ষার লেখক ল্যাং প্যান জানান, এ সমীক্ষার মাধ্যমে আমরা খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছি ডিম খাওয়া ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির মধ্যে অ্যাসোসিয়েশনে লিপিড মেটাবোলাইটগুলো কীভঅবে কাজ করে সে বিষয়ে।
প্যান ও তার দল চায়না কাদুরি বায়োব্যাঙ্ক থেকে ৪ হাজার ৭৭৮ জন অংশগ্রহণকারীকে বেছে নেন, যাদের মধ্যে ৩ হাজার ৪১ জনের কার্ডিওভাসকুলার রোগ ছিল ও ১ হাজার ৩৭৭ জন সুস্থ ছিলেন।
অংশগ্রহণকারীদের রক্ত থেকে নেওয়া প্লাজমা নমুনায় ২২৫টি বিপাক পরিমাপ করতে তারা লক্ষ্যযুক্ত নিউক্লিয়ার ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স নামক এক কৌশল ব্যবহার করেন। এই বিপাকগুলোর মধ্যে, তারা ২৪টি শনাক্ত করেন, যা ডিম খাওয়ার স্ব-প্রতিবেদিত স্তরের সাথে যুক্ত ছিল।
ফলাফলে দেখা যায়, যে ব্যক্তিরা মাঝারি পরিমাণ ডিম খেয়েছেন তাদের রক্তে অ্যাপোলিপোপ্রোটিন এ১ উচ্চ ঘনত্বের লাইপোপ্রোটিনের (এইচডিএল) একটি বিল্ডিং ব্লক নামক প্রোটিনের মাত্রা বেশি ছিল। যা ভালো লাইপোপ্রোটিন নামেও পরিচিত।
Advertisement
তাদের রক্তে আরও বড় এইচডিএল অণু ছিল, যা রক্তনালিগুলো থেকে কোলেস্টেরল পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। ফলে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হতে পারে এমন বাধাগুলো থেকে রক্ষা করে।
গবেষকরা আরও ১৪টি বিপাক শনাক্ত করেন যা হৃদরোগের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তারা দেখেছেন অংশগ্রহণকারীদের যারা কম ডিম খেয়েছেন তাদের রক্তে উপকারী বিপাকের মাত্রা কম ও ক্ষতিকারকদের উচ্চ মাত্রা ছিল, যারা নিয়মিত ডিম খেয়েছিল তাদের তুলনায়।
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড বায়োস্ট্যাটিস্টিকস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ক্যানকিং ইউ বলেছেন, ‘আমাদের ফলাফল একদম স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে যে নিয়মিত ডিম খাওয়া কীভাবে হৃদরোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।’
‘ডিম খাওয়া ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকির মধ্যে অ্যাসোসিয়েশনে লিপিড মেটাবোলাইটগুলো যে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে তা যাচাই করার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।’
চীনের বর্তমান স্বাস্থ্য নির্দেশিকাগুলো দিনে একটি ডিম খাওয়ার পরামর্শ দেয় সবাইকে। তাই ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বরং আরও ভালো। হৃদরোগের সামগ্রিক ঝুঁকি কমাতে দিনে অন্তত একটি ডিম খাওয়া জরুরি। তবে অতিরিক্ত ডিম খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
জেএমএস/জিকেএস