হস্তচালিত বেকারির সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। গত বুধবার (১ জুন) থেকে হস্তচালিত (নন ব্র্যান্ড) বেকারিপণ্যের দাম ২০ শতাংশ বাড়ানোর ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি। কিন্তু দাম বেড়েছে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ। কোনো কোনো পণ্যে এর চেয়ে বেশি। মালিকরা বলছেন, দ্রব্যমূল্য বাড়ায় দীর্ঘদিন তারা লোকসান দিচ্ছিলেন। ভাংতি টাকা দেওয়া-নেওয়াকেও দাম বেশি বাড়ানোর কারণ বলছে সমিতি। ব্যবসায়ীদের নীতি-নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
Advertisement
সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকা ঘুরে দেখা যায়, দোকানে এখন ১০ টাকা দামের বিভিন্ন ধরনের পাউরুটি কেকসহ এজাতীয় পণ্য বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। ৫ টাকা দামের বনরুটির দাম করা করা হয়েছে ৮ টাকা। সব ধরনের খোলা বিস্কুটের ন্যূনতম দামও রাখা হচ্ছে ৫ টাকা, যা আগে ২ বা ৩ টাকায় পাওয়া যেত।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রুটি, বিস্কুট ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল হক রেজা জাগো নিউজকে বলেন, ‘সমিতি ২০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তবে অধিকাংশ বেকারি মালিক সে দাম মানেননি। একটা সমিতি তো সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এলাকাভেদে এ পরিস্থিতি হয়েছে।’
দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে খুচরা টাকা ব্যবহারে অনীহা ও বড় বড় কোম্পানিকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘২০ শতাংশ বাড়লে একটা রুটির দাম ১২ টাকাও করা যাবে না, আবার ১৫ টাকা না করলেও নয়। তাহলে দোকানিকে তিন টাকা ভাঙতি ফেরত দিতে হবে সেটা ঝামেলা। দোকানিরা ভাঙতি টাকা রাখতে চায় না। আবার বড় বড় কোম্পানি তাদের বেকারি রুটির দাম ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকা করায় ছোট ছোট বেকারি উৎসাহিত হয়েছে।’
Advertisement
তবে রেজাউল হকের দাবি, কিছু কিছু এলাকার বেকারি পুরোপুরি সিদ্ধান্ত মেনে পণ্যের দাম ২০ শতাংশই বাড়িয়েছে। আর যারা বেশি বাড়িয়েছে তারা ওজন ও মান ভালো করেছে।
এর আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে দাম সমন্বয়ের জন্য মঙ্গলবার (৩১ মে) থেকে হুট করেই হস্তচালিত বেকারি মালিকরা অঘোষিত ধর্মঘটে যান। পরের দিনই ২০ শতাংশ দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয় মালিক সমিতি।
হস্তচালিত বেকারিগুলো মূলত দেশের গ্রামগঞ্জ, উপজেলা, জেলা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় সড়কের পাশের ছোট ছোট দোকানে পাউরুটি, বনরুটি, কেক, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ধরনের কনফেকশনারি পণ্য বিক্রি করে। এসব পণ্যের ভোক্তা মূলত নিম্ন আয়ের মানুষ। ফলে মূল্যবৃদ্ধির এ বাড়তি চাপ প্রভাব ফেলেছে তাদের খরচে।
রামপুরা জামতলা এলাকার রিকশাচালক ফরিদ মিয়া বলেন, রুটির দাম একলাফে ৫ টাকা বাড়ছে, যেন মগের মুল্লুক! একটা পাউরুটি, কলা আর চা খেয়ে ৩০ টাকা বিল হয়। খুব গায়ে লাগে।
Advertisement
গত মঙ্গলবার রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় বেকারিপণ্যের সরবরাহ বন্ধ ছিল। পরদিন দাম বাড়ানোর পর সরবরাহ স্বাভাবিক হয়। তবে বাড়তি দামের কারণে অনেক দোকানি এখন বেকারিপণ্য বিক্রি করতে পারছেন না।
বেকারি মালিকরা বলছেন, বেকারিতে যেসব কাঁচামাল লাগে তার প্রায় সবকিছুর দাম বেড়েছে। তেল, ডালডা, আটা-ময়দা ছাড়াও চিনি, দুধ ও ডিমের দামও বাড়তি। এরই মধ্যে লোকসান পোষাতে না পেরে অনেক বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে। বড় বড় কোম্পানি যারা অটো ও সেমি-অটো মেশিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পণ্য বানায় তারাও পণ্যের দাম বাড়িয়েছে।
কাকরাইল মোড়ে চায়ের দোকানি ইলিয়াস হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কেউ রুটি খাওয়ার পর যখন জানছে দাম ৫ টাকা বেড়েছে, তখন ঝামেলা শুরু হচ্ছে। এত দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি। তাই বিক্রি বন্ধ রেখেছি। প্যাকেটের রুটি বিক্রি করছি। এতে দাম লেখা আছে, সমস্যা হচ্ছে না।
এমন অনেক দোকানেই এখন হস্তচালিত বেকারিপণ্যের বদলে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি রুটি ও বিস্কুট বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে মগবাজারে সুমন বেকারির মালিক শহিদুল্লা জাগো নিউজকে বলেন, তেল, আটা-ময়দাসহ বিভিন্ন উপকরণের দাম বাড়ায় কয়েক মাস লোকসান দিয়ে বেকারি চালানো হচ্ছে। দাম না বাড়ালে ব্যবসা করার উপায় ছিল না। বেকারি মালিকদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্য সচিব গোলাম রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের ব্যবসায়ীদের কোনো নীতি-নৈতিকতা নেই। তারা যে কোনো অজুহাত পেলে সেটাকে ইস্যু বানিয়ে ভোক্তার পকেট কাটেন।
তিনি বলেন, যে কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যৌক্তিক পর্যায়ে না হলে সেটা ভোক্তার পকেট কাটার সিদ্ধান্ত। তাদের নৈতিক করার জন্য অবশ্যই সরকারের কঠিন মনিটরিং করতে হবে।
সমিতির তথ্য অনুযায়ী, করোনার আগে সারাদেশে প্রায় পাঁচ হাজার হস্তচালিত বেকারি ছিল। মহামারিকালে হাজারখানেক সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। পরিস্থিতির উন্নতি হলে অনেকে ব্যবসায় ফেরেন। তারপরও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আবারও পাঁচ শতাধিক বেকারি বন্ধ।
এনএইচ/এএসএ/জেআইএম