জাতীয়

শত শত হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ড্রাম বিস্ফোরণে ছড়ায় আগুন

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে শত শত হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ড্রাম ছিল। আগুন লাগলে এগুলো একের পর এক বিস্ফোরিত হয়। সকাল থেকে নীল এসব ড্রামের অংশ বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। এ কেমিক্যালের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে ও বেশি সংখ্যক দগ্ধ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। ৩০ কেজি ওজনের এসব ড্রামে লেখা আছে, ৬০ শতাংশ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। রোববার (৫ জুন) সরেজমিনে দেখা যায়, এসব হাইড্রোজেন পার অক্সাইডের ড্রাম বিস্ফোরিত হয়ে ডিপোর চারপাশে ছড়িয়ে রয়েছে। দুমড়ে-মুচড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নীল রঙের এসব প্লাস্টিকের ড্রামে লেখা আছে, ৬০ শতাংশ হাইড্রোজেন পার অক্সাইড। শরীরে লাগলে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এই কেমিক্যাল ব্যবহারের সময় মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরতে হবে। যদি আগুন লেগে যায় তাহলে দ্রুত নির্বাপণের ব্যবস্থা করতে হবে এবং অতিরিক্ত গরমের কারণে বিস্ফোরিত হতে পারে।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শী সামছুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, আগুন লাগার পর আমরা ভেবেছিলাম কিছুক্ষণ পরে নিভে যাবে। কিন্তু বড় বিস্ফোরণের পর একের পর পর বিকট শব্দে ছোট ছোট ড্রাম বিস্ফোরণ হতে থাকে। ড্রামের প্লাস্টিক চারদিকে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। তবে সবচেয়ে ক্ষতিটা হয়েছে ড্রামের মধ্যে থাকা কেমিক্যালের জন্য।

দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মী আবুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আগুনের পর যখন মানুষ ছোটাছুটি করতে থাকে তখনই এই ছোট ছোট কেমিক্যালযুক্ত ড্রাম বিস্ফোরিত হতে থাকে। এই ড্রাম বিস্ফোরণ হয়ে মানুষের শরীরে লেগেছে বেশি। এতে অনেকেই দগ্ধ হন।

এর আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। ক্ষণে ক্ষণে এখনো বিস্ফোরণ হচ্ছে। কেমিক্যালের জন্য আগুন নেভানো যাচ্ছে না। আমি পরিদর্শনকালে ছয়টি বিস্ফোরণ দেখেছি।

Advertisement

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড কী

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড একটি প্রাথমিক চিকিৎসা উপকরণ। পানির সঙ্গে অক্সিজেনের অতিরিক্ত অণু যোগ করেই তৈরি করা হয়। নানা ধরনের সংক্রমণ নাশক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়, যা বৈজ্ঞানিকভাবে H2O2 নামে পরিচিত। যৌগটি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, বিষাক্ত পদার্থ দূর করে এবং জীবাণু ধ্বংস করে। তবে এটি একটি দাহ্য পদার্থ, শক্তিশালী অক্সিডাইজারের মতো দ্রব্যের সংস্পর্শে এলে ভয়ংকর আগুন লাগতে পারে।

গৃহস্থালির কাজে ও স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ৩ শতাংশ ঘনত্বের হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। সাধারণত ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড দ্রবণ ওষুধ হিসেবে গ্রহণযোগ্য। তবে এটি হয়ে উঠতে পারে মারাত্মক বিপদের কারণ।

হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের সংস্পর্শে যে ক্ষতি হতে পারে

Advertisement

# রংহীন তরল তেতো স্বাদের এই পদার্থটি গিলে ফেললে বা শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করলে বিচ্ছিন্নভাবে জ্বালা করতে পারে। হতে পারে বমি, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, অবশ, ফুসফুস সংকুচিত হওয়া, কম্পন।

# স্বল্পমেয়াদি ফলাফলগুলো প্রকট হতে পারে এবং সেগুলো ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।

# শক্তিশালী অক্সিডাইজার অন্যান্য দ্রব্যের সংস্পর্শে এলে আগুন লাগতে পারে।

# উচ্চ তাপমাত্রায় পাত্রটি তীব্রভাবে ভেঙে যেতে পারে যা বড় ধরনের বিপদ ডেকে আনবে।

# চোখে লাগলে কিছু সময় জ্বালা করতে পারে। ফলাফলগুলো ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে আবার অন্ধত্বের কারণও হতে পারে।

এর আগে শনিবার (৪ জুন) রাত ১১টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এসময় এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে আগুন। কিছু কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। ভেঙে পড়ে আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ।

রোববার (৫ জুন) বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৪২ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। এর মধ্যে আটজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। আহত আছেন কয়েকশ। ডিপোটিতে ১২শ কনটেইনার ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিকভাবে এ আগুনে নয়শ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

টিটি/এএসএ/জিকেএস