চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর হাজার হাজার টনের অরক্ষিত সব কনটেইনার নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে ফায়ার সার্ভিস আ্যন্ড সিভিল ডিফেন্স। আগুন জ্বলছে এখনো বেশ কিছু বড় কনটেইনারে। নেভানোর পাশাপাশি সরানো সম্ভব এমন কনটেইনারগুলোর সুরক্ষায় নিরাপদ দূরত্বে নেওয়া হচ্ছে।
Advertisement
রোববার (৫ জুন) দুপুর ২টা থেকে কনটেইনার অপসারণ করা হয় বলে জাগো নিউজকে জানান চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক হোসেন সিকদার।
তিনি বলেন, সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে এখনো বেশ কয়েকটি কনটেইনারে আগুন জ্বলছে। এর আশপাশে যে অরক্ষিত কনটেইনার রয়েছে সেগুলো স্নোর্কেল যন্ত্রের সাহায্যে নিরাপদ দূরত্বে নেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যেসব কেমিক্যাল যুক্ত বড় কনটেইনারে এখনো আগুন জ্বলছে সেগুলো নির্দিষ্ট করে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হবে। আপাতত ছোট কনটেইনারের আগুন নেভানো হচ্ছে।
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, ডিপোতে আগুন এখনো জ্বলছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কেমিক্যাল পোড়ার ধোঁয়ায় পরিবেশ আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। সেখানে থাকা যাচ্ছে না বেশিক্ষণ। চোখ জ্বালাপোড়া করছে।
রাত থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ফায়ার সার্ভিসের কর্মী জাবেদ আহমেদ বলেন, এখনো কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণ আনা যাচ্ছে না। এখানে প্রধান সমস্যা অক্সিজেন ও ধোঁয়া।
এদিকে ডিপোর গেটের সামনে ভিড় করেছেন অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিখোঁজদের স্বজনরা। তারা খুঁজে ফিরছেন প্রিয়জনকে। কেউ কেউ আবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্বজনকে না পেয়ে ডিপোর সামনে এসে অপেক্ষা করছেন। এসময় তাদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে চারপাশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডিপোতে প্রায় ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল। সেখানে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ডিপো এলাকায় রয়েছে পানি স্বল্পতা।
Advertisement
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার মো. মাইন উদ্দিন বলেন, যেহেতু দীর্ঘক্ষণ ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছে না, সে কারণে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষায়িত ‘হাজমত টিম’ঢাকা থেকে আনা হচ্ছে। এই টিম বিদেশে প্রশিক্ষিত ও তারা আগুনের মধ্যেও কাজ করতে পারে। বর্তমানে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিট।
তিনি বলেন, এই ডিপোতে হাইড্রোজেন পার অক্সাইড ছিল। এখানে ক্ষণে ক্ষণে এখনো বিস্ফোরণ হচ্ছে। কেমিক্যালের জন্য আগুন নেভানো যাচ্ছে না। আমি পরিদর্শনকালে ছয়টি বিস্ফোরণ দেখেছি।
ঘটনাস্থলে থাকা চট্টগ্রাম সেনাবাহিনীর ব্যাটালিয়ন-১ এর লেফটেন্যান্ট কর্নেল মনিরা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, কেমিক্যাল যাতে ড্রেনের মাধ্যমে সমুদ্রে না ছড়াতে পারে, সেজন্য সেনাবাহিনীর বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং টিম ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ করতে যাচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা থাকলে কেমিক্যাল সমুদ্রে ছড়াতে পারে। এতে সমুদ্রের পানি এবং মৎস্য ও জলজ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে শনিবার (৪ জুন) রাত ১১টার দিকে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর তারা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। এসময় এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে ছড়িয়ে পড়তে থাকে আগুন। কিছু কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। ভেঙে পড়ে আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ।
রোববার (৫ জুন) বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৪২ জন নিহত হওয়ার খবর মিলেছে। এর মধ্যে আটজন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। আহত আছেন কয়েকশ। ডিপোটিতে ১২শ কনটেইনার ছিল বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিকভাবে এ আগুনে নয়শ কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
টিটি/এএসএ/এএ/জিকেএস