চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সেখানে একের পর এক কনটেইনার বিস্ফোরণ হচ্ছে। দাউ দাউ করে জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখা। নিরাপদ দূরত্বে থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণের সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মীরা। বর্তমানে কাজ করছেন চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ও ফেনীর মোট ২৫টি ইউনিটের কর্মীরা।
Advertisement
রোববার (৫ জুন) সকাল পৌনে ৯টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত বিএম কনটেইনার ডিপোতে সরেজমিন এমন চিত্র দেখা গেছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানিয়েছেন, শনিবার রাতে আগুন লাগার পর কনটেইনারের সামনে সরাসরি পানির পাইপ ধরে আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা হতাহত হন। এজন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা পাইপ হাতে না ধরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কনটেইনার ডিপোতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি দিচ্ছেন।
আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করা ফায়ার ফাইটার রাবিক হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গতকাল (শনিবার) রাত থেকে টানা কাজ করছি। কোনোভাবেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘প্রথমে পাইপ নিয়ে কনটেইনারের কাছে গিয়ে আমরা পানি ছিটানোর চেষ্টা করেছিলাম। তবে কাছ থেকে পানি দিতে গেলে বিস্ফোরণে ফায়ার ফাইটাররাও হতাহত হচ্ছেন। সেজন্য নিরাপদ দূরত্বে থেকে কাজ করছি। আমাদের কয়েকজন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন।’
এদিকে, বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ আগুনে এ পর্যন্ত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে তিনজন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের কর্মী। অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়েছেন আরও চার শতাধিক। হতাহতদের মধ্যে ডিপোর শ্রমিক, স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও রয়েছেন।
আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপে অনেককে ওয়ার্ড ছাড়াও হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া নগরীর অন্যান্য হাসপাতাল এবং কম্বাইন্ড মিলিটারি হাসপাতালেও (সিএমএইচ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল সূত্র জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
Advertisement
এছাড়া চট্টগ্রামের সব চিকিৎসকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ সরকারি হাসপাতালগুলোতে কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ডিপোতে এসময় প্রায় ৫০ হাজার কনটেইনার ছিল। সেখানে থাকা দাহ্য পদার্থ থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। শনিবার দিনগত রাতে বাতাসের কারণে আগুন বাড়তে থাকে। ডিপো এলাকায় রয়েছে পানি স্বল্পতা।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া সেল) মো. শাহজাহান শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে শনিবার রাত ১১টা ২৫ মিনিটে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ৮টি ইউনিট এবং পরবর্তীতে আরও ৮টি ইউনিট পৌঁছে কাজ শুরু করে। বর্তমানে ২৫টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্র জানায়, রাত পৌনে ১১টার দিকে এক কনটেইনার থেকে অন্য কনটেইনারে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একটি কনটেইনারে রাসায়নিক থাকায় বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত চার কিলোমিটার এলাকা কেঁপে ওঠে। আশপাশের বাড়িঘরের জানালার কাচ ভেঙে পড়ে।
টিটি/এএএইচ/এমএস