দুই দশকেরও বেশি ক্যারিয়ার। ১৯৯৪ সাল থেকে যাত্রা শুরু। থামলেন এসে ২০১৬ সালে। ৪১ বছর বয়সী শিবনারায়ন চন্দরপলকে ধরা হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের শেষ বাতি হিসেবে। টেস্টে ব্রায়ান লারার পর ক্যারিবীয় ক্রিকেটের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী তিনি। ১৬৪টি টেস্ট খেলেছেন। ওয়ানডে খেলেছেন ২৬৮টি। দীর্ঘ এই ক্যারিয়ারে চন্দরপলের রয়েছে কিছু স্মরণীয় ইনিংস। সেগুলোই নিয়েই জাগো স্পোর্টস পাঠকদের জন্য এই আয়োজন...৭১ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, সিডনি, ১৯৯৬হালকা লিকলিকে শরীরের শিবনারায়ণ চন্দরপল সেবার গিয়েছেন তার প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফরে। ক্যারিয়ারে ১২ টেস্ট খেলা হলেও তখনও কোন সেঞ্চুরির দেখা পাননি। সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ক্যারিয়ারের ১৩তম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন এই ক্যারিবিয়ান। অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ব্রায়ান লারাসহ প্রথম সারির তিন উইকেট হারান মাত্র ২০ বলের ব্যাবধানে। পঞ্চম দিনের উইকেটে দারুণ টার্ন পাচ্ছিলেন শেন ওয়ার্ন; কিন্তু চন্দরপলের ৭১ রানের অনবদ্য ইনিংস দারুণ লড়াইয়ে এনে দেয় ক্যারিবীয়দের। তার ব্যাটেই অস্ট্রেলিয়াকে প্রতি আক্রমণ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত সে ম্যাচে পরাজয় বরণ করলেও বিশ্বকে নিজের জাত চেনান চন্দরপল।১৩৭* প্রতিপক্ষ ভারত, ব্রিজটাউন, ১৯৯৭ক্যারিবীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা টেস্ট ম্যাচ। ব্রায়ান লারার অধিনায়কত্বের প্রথম ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১২০ রানের লক্ষ্য দিয়েও ইয়ান বিশপ, কার্টলি অ্যামব্রোস এবং ফ্রাঙ্কলিন রোজের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারতকে ৮১ রানে অলআউট করে দেয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি তুলে নেন চন্দরপল। তার সে ইনিংস ছাড়া ওই ম্যাচে জয় পাওয়া অসম্ভব ছিল লারাবাহিনীর। সে সুবাদেই হন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। সম্পূর্ণ বোলিং ট্র্যাকের সে ম্যাচে অসম বাউন্স এবং সুইংয়ের জন্য পেস বোলাররা দারুণ সুবিধা পাচ্ছিলেন। নতুন বলে ক্যারিবীয়রা রীতিমত সংগ্রাম করছিলেন; কিন্তু একপ্রান্তে দারুণ সাবলীল ব্যাট করেন চন্দরপল। তার এই বীরোচিত ইনিংসে পাঁচ টেস্ট সিরিজের সে ম্যাচে একমাত্র জয় পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১০০ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, জর্জটাউন, ২০০৩চন্দরপলের সেরা অ্যাটাকিং ইনিংস। চন্দরপলের ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ানরা সেদিন হেসেখেলেই জিতে যাচ্ছিল। পাঁচ সেঞ্চুরির ওই টেস্টে শেষ পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয় উইকেটে হারলেও ৭২ বলে ১০০ রান করা চন্দরপলকে নতুন করে চিনে বিশ্বক্রিকেট। প্রথম ইনিংসে ৫৩ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর রেডলি জ্যাকবসকে সঙ্গে নিয়ে ১৩১ রানের জুটি গড়ে আউট হন তিনি। এর মধ্যে ১০০ রানই করেন চন্দরপল। ১৫টি চার এবং ২টি ছক্কার সাহায্যে করা তার ওই সেঞ্চুরি ছিল তখনকার সময়ের তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি। মাত্র ৬৯ বলে সেঞ্চুরি করেন তিনি।১০৪ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, সেন্টজোন্স, ২০০৩ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে চন্দরপল তখন উইকেটে ছিলেন না; কিন্তু তার দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন উইকেটের জয় এনে দেয়। ব্যাক্তিগত ৬০ রানে দলের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসাবে ব্রায়ান লারা যখন আউট হয়ে যান, তখন মনে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার জয় শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। রামনরেশ সারওয়ানের সঙ্গে তার এক প্রান্তে দারুণ ব্যাটিংয়ে ৪১৮ রানের কঠিন বাধা পার করে ক্যারিবীয়রা। স্টিভ ওয়াহর নেতৃত্বে বিশ্বক্রিকেট তখন শাসন করছিল অস্ট্রেলিয়া। তাদের বিপক্ষে এমন জয় ছিল অবিস্মরণীয়। সে জয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-০ তে হোয়াইটওয়াশ থেকে মুক্তি পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।১১৮ প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া, কিংসটন, ২০০৮সে ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ানরা সেরা চন্দরপলকে বের এনেছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের আরও একটি হারেও তার নায়কত্ব সামান্য কমেনি। দল হারলেও ক্ষত বিক্ষত চন্দরপল হেরে যাননি। প্রথম ইনিংসে ব্যাক্তিগত ৮৬ রানে ব্রেট লিয়ের বাউন্সারে আঘাত পেয়ে মাঠ ত্যাগ করেন তিনি। টিম ডক্টর এবং ফিজিওর শুশ্রূষার পর ১০ নাম্বারে ফিডেল এডয়ার্ডকে সঙ্গে নিয়ে সেঞ্চুরির মাইলফলক পার করেন তিনি। সেঞ্চুরির পর দর্শকদের এমন উষ্ণ অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন যা কিংসটনে এর আগে কখনো ঘটেনি।আরটি/আইএইচএস
Advertisement