গত শুক্রবার উত্তম আচরণ ও সম্প্রীতি নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম। আজও চেষ্টা করছি পরস্পরের মাঝে শান্তি আর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কের বিষয়ে কিছু তুলে ধরার। এ বিষয়গুলোকে নিয়ে আমাদেরকে সব সময় ভাবা উচিত। আসলে প্রতিটি ধর্মই মানুষে শান্তির শিক্ষা দেয়। কোন ধর্মেই সন্ত্রাসী কার্যকলাপের স্থান নেই। বিশেষ করে ইসলাম এমন এক শান্তির ধর্ম যেখানে অমুসলিমদের উপাসনালয়েও হামলা চালানোকে কঠোরভাবে নিষেধ করে।
Advertisement
শুধু তা-ই নয় বরং অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহপাক বারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন ‘আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে’ (সুরা আন আম, আয়াত: ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা পূজারীদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি বরং সকল জাতি এবং সকল সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব এবং সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে।
ইসলাম এমন এক শান্তির ধর্ম, যার প্রতিটি শিক্ষায় রয়েছে কেবল শান্তি আর শান্তি। ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণে কারো ওপর আক্রমণ, গালিগালাজ করা, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার শিক্ষা ইসলামে নেই। একজন মুসলমানের কি বৈশিষ্ট্য হওয়া চাই সে বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ রয়েছে মহানবী (সা.) বলেছেন- ‘যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম’ (বোখারি)। একজন প্রকৃত মুসলমানের দ্বারা অন্য কেউ কষ্ট পাবে এটা হতে পারে না।
ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হলো, ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এই স্বাধীনতা কেবল ধর্মবিশ্বাস লালন পালন করার স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এই ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত।
Advertisement
ধর্ম জগতের ইতিহাসে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় এই যে বিশৃঙ্খলা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নৈরাজ্য তা কিন্তু ধার্মিকদের পক্ষ থেকে নয় আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সত্য ধর্মের অনুসারীদের পক্ষ থেকেও নয়। বরং এসব অরাজকতা ও সন্ত্রাস সব সময় সর্বযুগে তাদের পক্ষ থেকেই পরিচালিত হয়েছে যারা সমাগত সত্য সুন্দর জ্যোতিকে অস্বীকার করে অন্ধকারের পূজারী হয়ে থাকতে চায়।
হজরত আদম (আ.) থেকে আরম্ভ করে শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ইতিহাসের এই একই ধারার পুনরাবৃত্তি আমরা লক্ষ্য করবো। বিশ্বনবীর (সা.) পবিত্র জীবনী সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে। তিনি সত্য প্রচার ও প্রসারের কারণে সারা জীবন মার খেয়েছেন কিন্তু কারও প্রতি ধর্মের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করেননি। বরং তার পক্ষ থেকে পরিচালিত সকল আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য। সুরা হজের দুটি আয়াত এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দান করে।
আল্লাহতায়ালা বলছেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তাদেরকে (যুদ্ধ করার) অনুমতি দেয়া হলো কেননা তারা অত্যাচারিত। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাহায্যকল্পে পূর্ণ ক্ষমতাবান। যাদেরকে তাদের নিজ বাড়িঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেয়া হয়েছে যে, তারা বলে, ‘আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক প্রভু! আল্লাহ’র পক্ষ থেকে যদি মানুষের একদলকে মানুষের আরেক দল দিয়ে প্রতিহত না করা হতো তাহলে সাধু-সন্ন্যাসীদের মঠ, গীর্জা, ইহুদীদের উপাসনালয় (ধ্বংস করে দেয়া হতো) যেখানে আল্লাহ’র নাম অধিক পরিমাণে স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী’ (সুরা আল হজ, আয়াত: ৩৯ ও ৪০)।
মদিনায় অবতীর্ণ উল্লিখিত আয়াত দু’টিতে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে মহানবীর (সা.) অনুসারীরা দীর্ঘকাল মক্কায় অত্যাচারিত নিপীড়িত থাকার পর যখন তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মক্কায় কাফেররা যুদ্ধ চাপিয়ে দিল কেবল তখনই আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, একথা বলা হয়েছে, কেবল মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার্থে এই যুদ্ধ পরিচালিত হবে না। বরং মঠ, গির্জা, মন্দির ও মসজিদ তথা সকল ধর্মের উপাসনালয় রক্ষার্থে আল্লাহ এ ব্যবস্থা নিয়েছেন। সকল ধর্মীয় ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার এর চেয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আর কি হতে পারে। তাই যেখানে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ, সেখানে ইসলাম নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলাম নামের ধর্ম আল্লাহতায়ালা এই পৃথিবীতে বিশ্ব নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে শান্তির অমিয় বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন।
Advertisement
ইসলাম ধর্মে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোন স্থান নেই। যারা সামাজিক পরিমণ্ডলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, রক্তপাত ঘটায়, ধ্বংসযজ্ঞ এবং নৈতিকতা বর্জিত কর্মকাণ্ড চালায় তারা কখনো শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার দাবি সবাই করতে পারে কিন্তু কার্যকলাপে শ্রেষ্ঠত্ব না দেখালে তারা কখনো প্রকৃত ইসলামের অনুসারী বলে আল্লাহর কাছে গ্রহণীয়তার মর্যাদা পাবে না।
এই যে বিশ্বে ধর্মের নামে সহিংসতা এবং নৈরাজ্য তা শুধু ইসলাম নয় বরং কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কাউকে ধর্মের সুশীতল ছায়ার বেহেশতি বাতাসের স্বাধ যেমন উপভোগ করানো যায় না, তেমনি শান্তিও প্রতিষ্ঠা হয় না। নৈরাজ্যের মাধ্যমে কেবল বিশৃঙ্খলাই দেখা দিতে পারে, শান্তি নয়। আমি যে ধর্মের অনুসারী হইনা কেন, আমি যদি আমার ধর্ম সঠিকভাবে পালন করি তাহলে আমার দ্বারা কখনও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালিত হতে পারে না। তাই বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই ধর্মের শান্তিময় শিক্ষার বাস্তবায়ন। বিশ্বনিয়ন্ত্রণকর্তা সব সময়ই মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করে থাকে। প্রকৃত শান্তির ধারক ও বাহক কখনো সমাজের ও দেশের অশান্তির কারণ হতে পারে না।
এই যে বিশ্বে ধর্মের নামে সহিংসতা এবং নৈরাজ্য তা শুধু ইসলাম নয় বরং কোনো ধর্মই সমর্থন করে না। সমাজে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে কাউকে ধর্মের সুশীতল ছায়ার বেহেস্তি বাতাসের স্বাদ যেমন উপভোগ করানো যায় না, তেমনি শান্তিও প্রতিষ্ঠা হয় না। নৈরাজ্যের মাধ্যমে কেবল বিশৃঙ্খলাই দেখা দিতে পারে, শান্তি নয়। আমি যে ধর্মের অনুসারী হইনা কেন, আমি যদি আমার ধর্ম সঠিকভাবে পালন করি তাহলে আমার দ্বারা কখনও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালিত হতে পারে না। তাই বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চাই ধর্মের শান্তিময় শিক্ষার বাস্তবায়ন। বিশ্বনিয়ন্ত্রণকর্তা সব সময়ই মানুষকে শান্তির পথে আহ্বান করে থাকে। প্রকৃত শান্তির ধারক ও বাহক কখনো সমাজের ও দেশের অশান্তির কারণ হতে পারে না।
মানুষ হত্যা, রক্তপাত ঘটানো, উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করা এসব ধর্মের শিক্ষা নয়। আমি যে ধর্মেরই অনুসারী হই না কেন কেবল ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণে আমার ওপর আক্রমণের শিক্ষা কোন ধর্মই দেয় না।
ধর্মীয় মতপার্থক্যের কারণে যারা অন্যের ওপর চড়াও হয় তারা শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী তো নই বরং অন্য কোন ধর্মেরই অনুসারী হতে পারে না।
এইচঅার/জিকেএস