ইজিপ্ট এয়ারের (মিশর) দুটি উড়োজাহাজ ভাড়ায় সরকারের এক হাজার ১০০ কোটি টাকা ক্ষতি থেকে বিমান ‘শিক্ষা’ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং) এয়ার কমোডর মো. মাহবুব জাহান খান।
Advertisement
এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিমান এখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এটা সবচেয়ে বড় কথা। এ ঘটনার পর বিমানের একটি লিজ গাইডলাইন হয়েছে। ভবিষ্যতে উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে কতগুলো সভা হবে, বোর্ডে কতবার উপস্থাপন করতে হবে, তা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বুধবার (১ জুন) বেলা ১১টার দিকে বিমানের প্রধান কার্যালয় বলাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এমন মন্তব্য করেন মো. মাহবুব জাহান খান।
একই সময় উড়োজাহাজ ভাড়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধান সংক্রান্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করতে বিমানের প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান দল। দলের নেতৃত্ব দেন দুদকের উপ-পরিচালক মো. সালাহউদ্দিন।
Advertisement
মতবিনিময়ে এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি সংসদীয় কমিটিতে ছিল। তারা সেটি দুদকে রেফার করেছে। সেটির পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের দল এসেছে। আমরা তাদের স্বাগত জানাই। দুদক যেন নির্বিঘ্নে তাদের কাজ শেষ করতে পারে সেজন্য বিমানের লোকজন সেখানে কাজ করছে। সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এসময় বিমানের পরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং) এয়ার কমোডর মো. মাহবুব জাহান খান বলেন, আজ দুদকের দুজনের একটি দল এসেছে। আমার দলের বাকি লোকজন সেখানে আছে। আমাদের সব তথ্য সংরক্ষিত আছে। আমি ২০১৮ সালে জয়েন করেছি। এর আগেও আরও কয়েকবার তদন্ত হয়েছে। আমি দেখেছি মিশরের দুটি বিমান ভিয়েতনামে আছে, যেখান থেকে ঠিক করে ফেরত দেওয়ার কথা। এই জটিলতার মধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিমান এয়ারলাইন্সের চিফ অব ফ্লাইট সেফটি ক্যাপ্টেন এনামুল হক তালুকদার, পরিচালক (ফ্লাইট অপারেশন্স) ক্যাপ্টেন সিদ্দিকুর রহমান, বিএফসিসির মহাব্যবস্থাপক শামসুল করিম, গ্রাহকসেবার পরিচালক মো. সিদ্দিকুর রহমান, বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ যাহিদ হোসেন, ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনের এয়ার কমোডর মৃধা মো. একরামুজ্জামানসহ প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা।
বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করে ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। যার মধ্যে একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে। এক বছরের কম সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
Advertisement
উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে সেই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এসব করে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।
ইজিপ্ট এয়ার ইজারা ও রক্ষণাবেক্ষণ অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদক উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।
এমএমএ/বিএ/জিকেএস