ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে। ১৯৪৫ সাল। তখন পৃথিবী জুড়ে দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের দামামা বেজে চলছে। প্যারাট্রুপার নরউড টমাসের (৯৩) সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে বিশেষ বন্ধুত্ব তৈরি হয় জয়েস মরিসের (৮৮)। লন্ডনের টেমস নদীর পাশে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। সে সময় যে ভালোবাসার জন্ম নিয়েছিল, তাকে পরিণতি দিতে নরউড জয়েসকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে একটি চিঠি লিখেছিলেন মরিস। কিন্তু জয়েসের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি। পরে শূন্য হাতেই নরম্যান্ডি ফিরে যেতে হয়েছিল নরউডকে। এরপর যা ঘটেছে তা অকল্পনীয়। কেটে গেছে কয়েক যুগ। ভার্জিনিয়া বিচে নিজের ঘর বেঁধেছিলেন নরউড। সুখী দাম্পত্যে ভালোই চলছিল তিন সন্তানের সংসার। অন্যদিকে জয়েসও বিয়ে করে পাড়ি দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু চিরস্থায়ী হয়নি দাম্পত্য। বিয়ের ৩৭ বছর পর স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ। হঠাৎ নরউডেরও স্ত্রী মারা যান। দু`জনেই জীবনে একা হয়ে পড়েন।অবিরাম বেয়ে চলা একাকীত্বের মাঝে হঠাৎ নরউড টমাস ভাবতে থাকেন যদি সেদিন সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব না দিয়ে অন্যভাবে কথাটা বলতেন জয়েসকে! তাহলে জয়েসের পক্ষ থেকে কেমন সাড়া পাওয়া যেত? অন্যদিকে বারবার জয়েসকেও তাড়া করেছে একটাই প্রশ্ন, সেদিন যদি নরউডকে ফিরিয়ে না দিতেন, তাহলে কী অন্যভাবে লেখা হত তাদের ভাগ্য? এসব ভাবনার মধ্যেই দিব্যি কেটে যাচ্ছিল দিন। কিন্তু হঠাৎ একদিন একটি পত্রিকায় প্রকাশিত এক লেখায় চোখ আটকে যায় জয়েসের। খোঁজ পান ভার্জিনিয়ার এক পাইলটের। যিনি তার ৮৮তম জন্মদিন পালন করেছিলেন স্কাইডাইভিং করে। খবরটি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে অনুরোধ করেন সেই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে। ছেলেও সময় নষ্ট না করে, যোগাযোগ করেন সেই সাংবাদিকের সঙ্গে যিনি ওই খবরটি করেছিলেন।এ ঘটনার কিছুদিনের মধ্যে স্কাইপে যোগাযোগ হয় নরউড টমাসের সঙ্গে জয়েস মরিসের। নিমেষেই ফিরে আসে ফেলে আসা সেই সব দিনের স্মৃতি। বার্ধক্যের গণ্ডি পেরিয়ে তারা যেন ফের পৌঁছে যান নবযৌবনে। কিন্তু স্কাইপে ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছিল না একে অপরকে। আর তাই নরউড সিদ্ধান্ত নেন, তিনি ১০ হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে ভার্জিনিয়া বিচ থেকে অ্যাডিলেডে যাবেন।ইতিমধ্যে সেই ঐতিহাসিক যাত্রার তোড়জোড়ও শুরু হয়েছে। সব ঠিক থাকলে ভ্যালেন্টাইনস ডের দিনই মিলন হবে ভালোবাসার। শেষ হবে ৭০ বছরের অপেক্ষা।এসআইএস/আরআইপি
Advertisement