ভিড়ে ঠাসা নজরুল মঞ্চ। প্রেক্ষাগৃহে নানা রকমের আলোর ঝলকানি। মঞ্চে গাইছেন ভারতের বিখ্যাত সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুন্নাথ ওরফে কেকে। গানের মধ্যে বার বার রুমালে মুখ-কপালের ঘাম মুছছেন শিল্পী। মাথাতেও ওই রুমাল বোলাচ্ছেন। একাধিক বার বোতল থেকে পানি খেয়েছেন তিনি।
Advertisement
মঙ্গলবার (৩১ মে) নজরুল মঞ্চের কেকে-র লাইভ অনুষ্ঠানের একাধিক ভিডিওতে ধরা পড়েছে এমন দৃশ্য। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনেকেই বলছেন, মঞ্চে দরদর করে ঘামছিলেন শিল্পী। তবে কি অনুষ্ঠানের সময়েই অসুস্থ বোধ করছিলেন? তেমন করে গুরুত্ব দেননি? কেকে-র মৃত্যুর পর ওঠছে এমন সব প্রশ্ন।
অনুষ্ঠানের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত কেকে ছিলেন অত্যন্ত চনমনে। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন মঞ্চের এপাশ থেকে ওপাশ। কিন্তু বার বার চলে যাচ্ছিলেন মঞ্চের পেছনের অংশে নিচু টেবিলে রাখা রুমাল ও জলের বোতলের দিকে। পানি খাচ্ছেন আর পরের গান গাইছেন।
একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, টেবিল থেকে তুলে নেওয়া রুমালে মুখ মুছে, মাথার চুলে আঙুল চালিয়ে গান শুরু করতে যাচ্ছেন তিনি। পাশ থেকে মঞ্চে থাকা একজন হিন্দিতে বলে ওঠলেন, ‘ভীষণ গরম।’ শিল্পী তার দিকে তাকিয়ে হেসে সম্মতি দিলেন যেন। তার পর একজনকে হাতের ইশারায় মঞ্চের ওপরের আলোগুলো দেখিয়ে বললেন, ‘নিভিয়ে দাও।’ তার পর ফের গান শুরু। নজরুল মঞ্চে উপস্থিত দর্শক তখন কেকে-র গানে মাতোয়ারা।
Advertisement
তবে তার আচমকা মৃত্যুর পর অনেকেই প্রেক্ষাগৃহের ভিড় নিয়ে সরব হয়েছেন। রোহিত সাউ নামে গুরু নানক ইনস্টিটিউটের এক ছাত্র বলেন, ‘প্রচুর ভিড় হয়েছিল। বাইরেও অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। একটা সময় দরজা খুলে দেওয়া হয়। এত গরম লাগছিল, মনে হচ্ছিল এসি কাজ করছে না।’
কেকে-র অনুষ্ঠানের আগে ওই মঞ্চেই গান গেয়েছেন শুভলক্ষ্মী দে। তিনি জানিয়েছেন— কেকে অনুষ্ঠানস্থলে আসার পর তিনি গ্রিনরুমে গিয়ে শিল্পীর সঙ্গে দেখা করেন। কেকে তার সঙ্গে ভালো করে কথাও বলেন। শারীরিকভাবে তাকে কোনোভাবেই অসুস্থ বলে মনে হয়নি শুভলক্ষ্মীর।
তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠানে এসে গাড়িতেই কিছুক্ষণ বসে ছিলেন উনি। এত ভিড় যে ঢুকতে পারছিলেন না। তারপর তাকে এনে গ্রিনরুমে বসানো হয়। আমি গিয়ে দেখা করি। কথা হয়। অনুষ্ঠানের সময় ভীষণই এনার্জেটিক লাগছিল তাকে। ভাবতেই পারিনি এমনটা হবে!’
নেটমাধ্যমে কেকে-র অনুষ্ঠানের ভিড় নিয়ে সোমবার রাতে অনেকেই পোস্ট করেছেন। কারো কারো অভিযোগ, আসনের তুলনায় দর্শকের সংখ্যা বেশি ছিল নজরুল মঞ্চে। কারো কারো অভিযোগ, হলের শীতাতপ (এসি) নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রও ঠিকমতো কাজ করছিল না। তবে এর পাল্টা পোস্টও করেছেন কেউ কেউ। তাদের মতে, প্রচুর দর্শক এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আলোর কারণে হলের ভেতরে গরম লাগাটাই স্বাভাবিক। কারো কারো দাবি, হলের দরজা খোলা ছিল বলে শীতাতপ যন্ত্রের কার্যকারিতা উপলব্ধি করা যাচ্ছিল না।
Advertisement
শেষ গান গেয়ে কেকে যখন মঞ্চ ছেড়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন, তখনও দেখা গিয়েছে, কপাল বেয়ে ঘাম গড়াচ্ছে শিল্পীর। শরীরও ঘামে ভেজা। এর পর সেখান থেকে মধ্য কলকাতার হোটেলে ফেরেন তিনি। অসুস্থ হয়ে হোটেলে পড়ে যান বলেও খবর। তার পর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একবালপুরের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এমএএইচ/এমএস