ইউক্রেনের কৃষিপণ্য রপ্তানির জন্য সম্ভাব্য একটি সমুদ্র করিডোর চালুর বিষয়ে আলোচনায় বসছে রাশিয়া ও তুরস্ক। আগামী ৮ জুন একদল সামরিক প্রতিনিধিকে সঙ্গে নিয়ে তুরস্কে যাচ্ছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ওই সময় দুই পক্ষের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলু। খবর রয়টার্সের।
Advertisement
এর আগে, গত সোমবার (৩০ মে) তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিস্যেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানের সঙ্গে ফোনালাপে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানান, তুরস্কের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে ইউক্রেনীয় বন্দর থেকে বাধাহীন শস্য রপ্তানির ব্যবস্থা করতে প্রস্তুত রাশিয়া।
মঙ্গলবার তুর্কি বার্তা সংস্থা আনাদোলু এজেন্সিকে দেওয়ার সাক্ষাৎকারে মেভলুত কাভুসোগলু বলেছেন, কৃষ্ণসাগরে করিডোর চালুর বিষয়ে চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য জাতিসংঘের সঙ্গে কাজ এখনো কথাবার্তা চলছে। তবে মস্কো ও কিয়েভের মধ্যে বিদ্যমান সমস্যাটি রয়েই গেছে।
তিনি বলেছেন, কৃষ্ণসাগরে শিপিং রুট নিরীক্ষণের জন্য একটি যৌথ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে জাতিসংঘ এবং তাতে সমর্থন রয়েছে তুরস্কের।
Advertisement
তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া চায়, তার বীমা খাতের ওপর আরোপিত কিছু পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হোক। কারণ এটি সম্ভাব্য শিপিং নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণকারী জাহাজগুলোতে প্রভাব ফেলবে। আর ইউক্রেন চায়, রুশ যুদ্ধজাহাজ যেন তার ওডেসা বন্দরের কাছে না যায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়ার ওপর অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা দেশগুলো। আর যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনের সমুদ্রবন্দরগুলোর কার্যক্রম একপ্রকারে বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে চরম খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দেশে দেশে হানা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। তাই ইউক্রেনীয় বন্দরগুলো দিয়ে রপ্তানি কার্যক্রম ফের শুরু করতে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি রাশিয়ার কাছে আবেদন জানিয়েছিল জাতিসংঘ। জবাবে মস্কো বলেছে, এজন্য আগে নিষেধাজ্ঞাগুলো প্রত্যাহার করতে হবে।
শস্য উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ইউক্রেন। দেশটির অধিকাংশ পণ্য সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে রপ্তানি করা হতো। কিন্তু রাশিয়ার আক্রমণের পর সেগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ট্রেন ও ছোট দানিউব নদী ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি কোনো রকমে চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন।
এ অবস্থায় জাতিসংঘের খাদ্যবিষয়ক প্রধান ডেভিড বিসলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেছেন, আপনার হৃদয় বলে কিছু থাকলে দয়া করে এসব বন্দর খুলে দিন। এ বিষয়ে রুশ উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই রুডেনকো বলেন, শুধু রাশিয়ার কাছে আবেদন করলে হবে না, খাদ্য সংকটের মূল কারণের দিকে নজর দিতে হবে। মস্কোর ওপর নিষেধাজ্ঞার কারণেই স্বাভাবিক বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।
Advertisement
বিশ্বে খাদ্যের ১০ ভাগের এক ভাগ সরবরাহ করে রাশিয়া ও ইউক্রেন। বৈশ্বিক গম রপ্তানির ৩০ শতাংশের পাশাপাশি সূর্যমুখী তেলের ৬০ শতাংশ উৎপাদন করে তারা। কমপক্ষে ২৬টি দেশ তাদের অর্ধেকেরও বেশি খাদ্যশস্যের জন্য রাশিয়া-ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল।
কেএএ/এমএস