জিলকদ দুই ঈদের মধ্যবর্তী মাস। মাসটি আল্লাহ নির্ধারিত মর্যাদার ও হজের মাস হিসেবে পরিগণিত। তবে অবস্থানগত কারণ ছাড়াও এ মাসটি ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গুরুত্ব ও ঐতিহাসিক স্মরণীয় ঘটনার কারণে মাসটির রয়েছে অনন্য মর্যাদা। সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলেই শুরু হবে গুরুত্বপূর্ণ মাস জিলকদ।
Advertisement
আরবিতে ‘জুলকাআদাহ’ মাস বলা হলেও ফারসি ও উর্দুতে এটিকে জিলকাআদা বলা হয়, যা বাংলায় জিলকদ মাস হিসেবে ব্যাপক পরিচিত ও ব্যবহৃত। এর অর্থ হলো- বসা, স্থিত হওয়া কিংবা বিশ্রাম গ্রহণ করা। কারণ আগের ৪ মাস ধারাবাহিক টানা ইবাদত-বন্দেগির মাস আবার পরের মাসে মুসলিম উম্মাহর বিশেষ ইবাদত হজ ও কোরবানি।
মুমিন মুসলমান রজব মাস থেকে শুরু রমজানের ৩০ রোজা এবং শাওয়াল মাসের ৬ রোজা পালন পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যস্ত থাকে। আবার পরের মাসেই হজ পালনকারীরা যেমন হজ ও ওমরাহ করবে, কোরবানি দাতারা পালন করবে জিলহজ মাসের প্রথম ৯ দিন রোজা। তাই এ মাসটি মুমিন মুসলমানের জন্য একটু বিশ্রাম নেওয়ার মাস।
বিভিন্ন কারণে এ মাস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জীবনে যে কয়টি ওমরা করেছেন তার সব কটি জিলকদ মাসে পালন করেছেন। এ মাসেই সংঘঠিত হয়েছিল ঐতিহাসিক হুদায়বিয়ার সন্ধি ও বাইয়াতে রিদওয়ান।
Advertisement
মাসটিতে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত ইবাদত ও আমল না থাকলেও আল্লাহ তাআলা কর্তৃক নির্ধারিত মর্যাদার ৪ মাসের একটি। আল্লাহ তাআলা এ মাসে যে কোনো রক্তপাত, যুদ্ধ-বিগ্রহ বা বাদানুবাদকে হারাম করেছেন। মুসলিম উম্মাহ মাসটি ইবাদত-বন্দেগিতে অতিবাহিত করবে। হজ, কোরবানি ও জিলহজের রোজার প্রস্তুতিতে বিশ্রাম নেবে। এটিও ইবাদতের অন্তর্গত।
লিসানুল আরব ও ইবনে মানজুর-এর তথ্য মতে, তৎকালীন যুগে জিলকদ মাসে আরবের লোকেরা বাণিজ্য থেকে ফিরে আসতো, যুদ্ধ থেকে ফিরে আসতো এবং বিশ্রাম গ্রহণ করতো। তাছাড়া ঋতুর পরিবর্তনে এই সময়টায় স্থানীয় আরবের লোকজনের হাতে তেমন কোনো কাজও থাকতো না। আরব সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা এই মাসে যুদ্ধবিগ্রহ থেকে বিরত থাকতো এবং অন্যায়–অপরাধ (মদ পান) থেকেও বিরত থাকতো। এসব কারণেও এই মাসকে জিলকদ বলা হয়।
ইবাদতের প্রস্তুতিরজব-শাবান মাসে নফল রোজা, রমজানজুড়ে ফরজ রোজা, সন্ধ্যা ও ভোর রাতে তারাবিহ-তাহাজ্জুদ ও সেহরি গ্রহণ এবং শাওয়ালে ৬ রোজা রাখার পর কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে পরবর্তী (জিলহজ) মাসের রোজা ও হজ-কোরবানির প্রস্তুতি গ্রহণের মাস জিলকদ।
জিলকদের আমলবিশ্রামের পাশাপাশি এ মাসেরও নিয়মিত কিছু আমল আছে। যেগুলো যথাযথভাবে সুন্নাতের অনুসরণে করা যেতে পারে। তাহলো-১. এ মাসের ১, ১০, ২০, ২৯ ও ৩০ তারিখ রোজা পালন করা।২. জিলকদ মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ (১৩-১৫ জুন) আইয়ামের বিজের রোজা পালন কা।৩. সোম ও বৃহস্পতিবারের সাপ্তাহিক সুন্নাত রোজা পালন করা। (যথাক্রমে ৬, ১৩, ২০ ও ২৭ জুন এবং ২, ৯, ১৬, ২৩ ও ৩০ জুন)।৪. কুরআন তেলাওয়াত করা ও সালাতুত তাসবিহ আদায় করা।৫. সম্ভব হলে ওমরাহ পালন করা।৬. হজের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহণ করা।৭. কোরবানির প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
Advertisement
জিলকদ মাসের ঐতিহাসিক ঘটনা১. এ মাসে যে কোনো যুদ্ধ-বিগ্রহই ইসলামে নিষিদ্ধ।২. এ মাসেই বাইয়াতে রিদওয়ান অনুষ্ঠিত হয়েছিল।৩. ১ জিলকদ : হুদায়বিয়ার সন্ধি সংঘটিত হয়েছিল।৪. ১ জিলকদ : হজরত আলি ও ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বিবাহ সংঘটিত হয়েছিল এ মাসে।৫. ৮ জিলকদ : মুসলমানদের জন্য জীবনে একবার হজ পালন ফরজের বিধান।৬. ৮ জিলকদ : ইমাম দারাকিুতনি রাহমাতুল্লাহি আলাইহির ইন্তেকাল।৭. ১৭ জিলকদ : খন্দকের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়।৮. ২৫ জিলকদ : হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম ও হজরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম।৯. ২৫ জিলকদ : পবিত্র কাবা শরিফ পৃথিবীতে প্রথম ভিত্তি স্থাপিত হয় বলে জানা যায়।১০. নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২৫ জিলকদ বিদায় হজের জন্য মদিনায় থেকে মক্কা অভিমুখে রওয়ানা হন।১১. ২৭ জিলকদ হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আহত হন।১২. উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ দুই মুহাদ্দিস সৈয়দ আহমদ শহিদ ও ইসমাঈল শহিদ বালাকোটের যুদ্ধের ময়দানে ২৭ জিলকদ শাহাদাতবরণ করেন। কেউ কেউ ২৪ জিলকদও বলে থাকেন।১৩. ৭ম হিজরির জিলকদ মাসে নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রথম ওমরা পালন করেছিলেন।১৪. এ মাসেই নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবনের সব ওমরাহ পালন করেন।
এমএমএস/এমএস