জাতীয়

লিজ নেওয়া মিশরীয় উড়োজাহাজের পেছনে গচ্চা হাজার কোটি টাকা

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ইজারা বা লিজ নেওয়া ইজিপ্ট এয়ারের (মিশর) উড়োজাহাজের অনিয়ম ও দুর্নীতি অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিমানের কাছে ১৩ ধরনের নথিপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছে দুদক।

Advertisement

বাণিজ্যিক সম্ভাব্যতা যাচাই না করে ২০১৪ সালে পাঁচ বছরের চুক্তিতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে দুটি উড়োজাহাজ বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। যার মধ্যে একটি বিমানের বহরে যুক্ত হয় ২০১৪ সালের মার্চে এবং অন্যটি একই বছরের মে মাসে। এক বছরের কম সময় অর্থাৎ ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। পরে সেই ইঞ্জিনও নষ্ট হয়ে যায়। সেই ইঞ্জিন মেরামত করতে পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে। এসব করে ইজিপ্ট এয়ার ও মেরামতকারী কোম্পানিকে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ বিমানের গচ্চা দিতে হয়েছে কয়েক হাজার কোটি টাকা।

ইজিপ্ট এয়ার ইজারা ও রক্ষণাবেক্ষণ অনিয়ম অনুসন্ধানে দুদক উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন ও সহকারী পরিচালক জেসমিন আক্তারের সমন্বয়ে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়েছে। গত ২৮ মে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নথিপত্র চেয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বরাবর পাঠানো চিঠিতে অনুসন্ধান টিম লিজ নেওয়ার দরপত্রসহ অন্তত ১৩ ধরনের নথিপত্র দ্রুত সময়ের মধ্যে সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে।

Advertisement

জানা যায়, ইজিপ্ট এয়ারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী, দুটি উড়োজাহাজের জন্য প্রতি মাসে ১০ কোটি করে বছরে ১২০ কোটি টাকা লোকসান দিতে হয়েছে বিমানকে। লিজ চুক্তিতে বলা হয়েছে, যাত্রী পরিবহন করুক আর না করুক প্রতি মাসে উড়োজাহাজপ্রতি ৪ কোটি ৭০ লাখ ১৬ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে। পাঁচ বছরের আগে চুক্তি বাতিল করা যাবে না এবং লিজের মেয়াদ শেষে উড়োজাহাজ দুটি আগের অবস্থায় ফেরত দিতে হবে। তবে উড়োজাহাজ দুটির সর্বশেষ অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

বিমানের কাছে যেসব নথি চেয়েছে দুদক তা হচ্ছে- ইজিপ্ট এয়ার কর্তৃক রিপোর্ট অব ফিজিক্যাল ইন্সপেকশন অব টু ৭৭৭-২০০ ইআর এয়ারক্র্যাফট শীর্ষক পরিদর্শন প্রতিবেদনের ছায়ালিপি, ২০১৩ সালের ২৮ অক্টোবর ওই বিমান লিজ নেওয়ার জন্য গঠিত টিম, তাদের আদেশ ও এ সংক্রান্ত নথির ছায়ালিপি, ২০০৯ সালের ১১ জুন অনুষ্ঠিত ফ্লাইট প্ল্যানিং কমিটির লিজ সংক্রান্ত সভার সিদ্ধান্তের ছায়ালিপি, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ক্রয় নীতিমালা ও আর্থিক কার্যক্রমের সত্যায়িত ছায়ালিপি, বিমান লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নথি, টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি ও নোটসহ পূর্ণাঙ্গ নথির সত্যায়িত ছায়ালিপি।

এছাড়া লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র ও বিজ্ঞপ্তি কোন কোন পত্রিকায় এবং ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে তার রেকর্ডপত্র, দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির প্রতিবেদন ও দরপত্রে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলোর তালিকা, লিজ নেওয়ার প্রক্রিয়ায় দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রতিবেদন, দরপত্র বিজ্ঞপ্তি থেকে শুরু করে এয়ারক্র্যাফট দুটি লিজ নেওয়া এবং ফেরত দেওয়া পর্যন্ত যাবতীয় ব্যয়ের বিল-ভাউচার, রেজিস্ট্রার, ব্যাংক হিসাব বিবরণী, মুড অব ট্রান্সজেকশন সংক্রান্ত রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি, এয়ারক্র্যাফট লিজ দেওয়ার উদ্দেশ্যে গঠিত ইন্সপেকশন টিম সদস্যদের নাম, পদবি ও বর্তমান ঠিকানাসহ তালিকা, তাদের প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নথির সত্যায়িত ছায়ালিপি, পাসপোর্টের প্রথম দুই পৃষ্ঠার ফটোকপি এবং মিশরে অবস্থান সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি।

আরও চাওয়া হয়েছে উড়োজাহাজ দুটির বর্তমান অবস্থা ও অবস্থান সংক্রান্ত তথ্যাদি, বিমানের তিনটা চেক (এ.সি.ডি) সংক্রান্ত নিয়মাবলী বা নির্দেশিকা সংক্রান্ত ছায়ালিপি এবং এয়ারক্র্যাফট উড্ডয়নের সক্ষমতা, যোগ্যতা সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃত নিয়মাবলি বা নির্দেশিকা।

Advertisement

গত বছরের অক্টোবরে মিশরীয় বিমান লিজ প্রক্রিয়ায় অভিযুক্তদের লিখিত বক্তব্য চায় সংসদীয় কমিটি। মিশরীয় উড়োজাহাজকাণ্ডে বিমানের প্রায় ১১০০ কোটি টাকা গচ্চা গেছে বলে জানায় সংসদীয় কমিটি।

গত ২৪ মার্চ সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মিশরীয় উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগ দুদকের মাধ্যমে তদন্তের জন্য কার্যবিবরণীর অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠকে দুটি মিশরীয় এয়ারক্র্যাফট লিজ প্রক্রিয়ায় অনিয়মের অভিযোগে গঠিত সংসদীয় সাব-কমিটির প্রতিবেদন, বিশেষ করে চুক্তিপত্র প্রণয়ন এবং যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাকরণ টিমের কার্যক্রম ত্রুটিপূর্ণ থাকায় স্থায়ী কমিটির সুপারিশসহ এসব বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে দুদকে পাঠানোর সুপারিশ করা হয়।

এসএম/এমএএইচ/এএসএম