পেঙ্গুইদের সোয়াটার পরার কথা শুনে একটু অবাক হয়েছেন বৈকি। পেঙ্গুইনের বাস বিশ্বের অন্যতম শীতলতম স্থান অ্যান্টার্টিকায়। হাড় কাঁপানো বরফ যাদের আবাসস্থল তাদের আবার সোয়েটার লাগবে কেন! আবার সেই সোয়েটার বোনা নেশা একজনের।
Advertisement
বিশ্বের প্রবীণ মানুষদের তালিকায় রয়েছেন অ্যালফ্রেড অ্যালফি ডেট। গিনেস বুক অব ওয়াল্ড রেকর্ডসে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে প্রবীণ পুরুষ ছিলেন অ্যালফ্রেড। ২০১৬ সালে ১১১ বছর বয়সে মারা যান তিনি। তার নেশা ছিল পেঙ্গুইন ছানাদের জন্য সোয়েটার বোনা। এমনকি মানুষকে উদ্ভুদ্ধ করতেন সোয়াটার ডোনেট করতে।
মূলত আহত পেঙ্গুইন ছানাদের সুস্থ করতে উলের সোয়েটার বানাতেন অ্যালফ্রেড। তিনি ৮০ বছর ধরে সোয়েটার বোনার কাজ করেছেন। উল বোনা ও উলের কাজ করা ছিল তার খুবই প্রিয়। পেশায় তাঁতী ছিলেন অ্যালফ্রেড। বয়সের কারণে কাজ থেকে অবসর নেন তিনি। তখন সময় কাটানো খুবই কষ্টকর হয়ে যায় সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকা মানুষটি।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক অ্যালফ্রেড কীভাবে পেঙ্গুইন ছানাদের দেশের রাজা হলেন। সময়টা ২০১৩ সাল। একটি জাহাজ থেকে তেলের ট্যংকার ভেঙে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পেঙ্গুইনদের অসুস্থ করতে লাগলো। শত শত পেঙ্গুইনের ছানা মারা যেত লাগলো। তখন তিনি কাজে নামলেন। এই দুটি দেশে ছিল মোট ৩২ হাজার পেঙ্গুইন।
Advertisement
ভিক্টোরিয়া অঙ্গরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়ান অংশে আছে ফিলিপ আইল্যান্ড। সেখানেই পেঙ্গুইন দল বেঁধে একটি জায়গাতে বাস করে। অ্যালফ্রেড সেখানকার দ্য ফিলিপ আইল্যান্ড পেঙ্গুইন ফাউন্ডেশন আবেদন করতে শুরু করলেন। সবাইকে উলের জার্সি তৈরি করতে অনুদান দিতে, যাতে বেঁচে যাওয়া পেঙ্গুইন ছানাগুলোকে নিশ্চিত জীবন উপহার দেওয়া যায়।
অ্যালফ্রেডের আবেদনে সারা দেন দ্য ফিলিপ আইল্যান্ড কর্তৃপক্ষ। সেই থেকে আহত, দুর্বল ও রোগাক্রান্ত ছানাগুলোকে উলের জার্সি পরাচ্ছেন অ্যালফ্রেড। নানা ধরনের বিষাক্ত পদার্থ, তাদের চটচটে গা ও তেলে পূর্ণ ছোট্ট ডানাগুলোতে নানা বিপজ্জনক উপাদান লেগে আরও আহত যাতে করতে না পারে। এর আগেও তারা এভাবে সোয়েটার পরিয়ে বাঁচিয়েছেন অনেক আহত পেঙ্গুইনকে।
২০০১ সালে আরেকটি ভয়াবহ তেল নির্গমণে মোট ৪৩৮টি পেঙ্গুইন আহত হয়েছিল। এ পদ্ধতিতে প্রায় ৯৬ শতাংশ পেঙ্গুইনকে বাঁচানো গিয়েছিল। ফলে ২০১৩ সালে সেই ঘটনাটি বলে তারা যখন তার কাছে সাহায্যের জন্য এলেন, না করতে পারেননি অ্যালফ্রেড। এতে কিছুটা ব্যস্ত থাকতেও পারবেন আবার পেঙ্গুইন ছানাদেরও বাঁচানো যাবে।
বয়সের ভারে নিজেও নানা ধরনের শারিরীক এবং মানসিক সমস্যায় ছিলেন তিনি। পেঙ্গুইন ছানাদের বাঁচানোর এই কাজে তিনি নেতৃত্ব দিয়েছেন ও খুব আনন্দ নিয়ে করেছেন। উল বোনার কাজ কিন্তু তাকে হাতে-কলমে কেউ শেখা নি। নিজে নিজেই শিখেছিলেন। তার স্ত্রীর বোনকে একদিন উল বুন্তে দেখেছিলেন। কাজটি তার এত ভালো লেগেছিল যে নিজেই চেষ্টা করতে থাকলেন। এরপর ভাগ্নে বা ভাগ্নির জন্য ছোট্ট জ্যাকেট বুনে ফেললেন।
Advertisement
তবে অ্যালফ্রেড সোয়াটার বুনতে শিখিয়েছেন অনেক মানুষকে। তিনি যে হাসপাতালে ছিলেন সেখান কার নার্সরা তার কাজ খুবই পছন্দ করতেন। তিনি খুব যত্ন নিয়েই নার্সদের শিখিয়েছিলেন উল বুনতে।
ফিলিপ আইল্যান্ড পেঙ্গুইন ফাউন্ডেশনের অনুরোধে পেঙ্গুইন ছানাদের ভালোবেসে একের পর উলের ছোট্ট নানা রঙের সোয়েটার বুনে গেলেন অ্যালফি। ভালো লাগা থেকে বন্ধুবান্ধব এবং অপুষ্ট শিশুদের জন্য উলের সোয়েটার বানিয়েছেন।
ব্যক্তিজীবনে তিনি দুটি বিয়ে করেছেন। মোট সাতটি ছেলেমেয়ের বাবা। নাতি-নাতনি আছেন মোট ২০ জন। এই উল শিল্পী একজন ভালো খেলোয়াড়। ১৯৯০-এর দশক পর্যন্ত গলফ খেলেছেন। পেশাদার গলফার ছিলেন তিনি। ১৯০৫ সালের ৮ নভেম্বর ইংল্যান্ডে জন্ম তার। বাবা জর্জ ও মা হ্যারিয়েটের সঙ্গে মোটে ৬ বছর বয়সে ১৯১১ সালে তিনি চলে আসেন অস্ট্রেলিয়ায়।
অ্যালফ্রেডের পারিবারিক পেশা ছিল তাঁত বোনা। তবে তাতে ছিল অর্থাভাব। এজন্য সেখান থেকে পালিয়ে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। এখানে এসেও এই কাজ করেছেন তার বাবা। আগের চেয়ে ভালোই ছিলেন তারা। তবে সেই দক্ষতা তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন পেঙ্গুইন ছানাদের জীবন বাঁচাতে।
২০১৩ সালে তার ১০৮তম জন্মদিন পালন করা হয় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে। এর দুই বছর পর তার ১১০ তম জন্মদিনে তাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন দেশের গভর্নর জেনারেল স্যার পিটার ক্রসগ্রোভ। অ্যালফি মারা যান নিউ সাউথ ওয়েলসের উমিনাতে। অ্যালফ্রেড তার দীর্ঘজীবনের রহস্য বলেছিলেন এক সাক্ষাতকারে। তার মতে তার দীর্ঘজীবনের রহস্য হচ্ছে খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠা।
সূত্র: ডেইলি মেইল
কেএসকে/জিকেএস