উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায় সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হয় ধান। কিন্তু এবছর বোরো ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এক মণ ধান বিক্রি করেও মিলছে না একজন শ্রমিক। সব খরচ মিটিয়ে উৎপাদন খরচও উঠছে না তাদের। এমন অবস্থায় আগামীতে ধানচাষ থেকে সরে আসার চিন্তা-ভাবনাও করছেন চাষিরা।
Advertisement
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াই শেষ পর্যায়ে। ব্যস্ততা দেখে মনে হবে ধানচাষিদের সুদিন এসছে। কিন্তু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের হতাশার কথা।
গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের ধানচাষি ময়েন উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। অনেক আশা ছিল ফলন ভালো হবে। কিন্তু আশার আলোয় প্রথমে আঘাত হানে শীলাবৃষ্টি। কিছুদিন পরে দেখা দেয় পোকার আক্রমণ। এরপর ধানের শীষ সাদা হতে শুরু হয়। সার পানি কীটনাশকসহ সব খরচ শেষে যখন ধান ঘরে তুলতে হবে ঠিক সেই সময় দেখা দিলো শ্রমিক সংকট। বেশি টাকায় শ্রমিক নিয়ে ধান কাটার পরে দেখা গেলো উৎপাদন খরচ উঠছে না।
সাঘাটা উপজেলার গাছাবাড়ী গ্রামের রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে এবছর ধান কাটা-মাড়াই করার পর মনে হচ্ছে আর কখনো ধানচাষ করবো না। যখন কৃষকরা ধান বিক্রি করে শ্রমিক খরচ বহন করবেন ঠিক তখন স্থানীয় মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছেন।
Advertisement
কচুয়া ইউনিয়নের গাছাবাড়ী গ্রামের কৃষক আব্দুল আউয়াল জানান, গত ৩০ বছরে আমি এমনটা দেখিনি যে এত টাকা দিয়ে শ্রমিক নিতে হবে। সরকারি গোডাউনে ধানের দাম ১০৮০ টাকা হলেও ব্যবস্যায়ীরা ৭০০ টাকার বেশি দামে নেননি। আমি ২৫ মণ ধান বিক্রি করে শ্রমিকের মজুরি দেওয়ার পরও মজুরির আরো ৫ হাজার টাকা ম্যানেজ করতে পারছি না।
বোনারপাড়া ইউনিয়নের পশ্চিম আনন্তপুর গ্রামের ধানচাষি বাদশা মিয়া বলেন, বিশ শতাংশ জমিতে ৭ হাজার টাকা খরচ করে ধান চাষ করার পর ধান কাটা-মাড়াই শেষে ৩ হাজার টাকায় ধান বিক্রি করার পর মনে হচ্ছে আর কখনো ধানচাষ করবো না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কৃষি গবেষক মো. নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ধান কাটা-মাড়াই শুরুর ১৫ দিন আগে সরকারিভাবে ধান ক্রয় শুরু করতে হবে এবং মাঠ পর্যায়ে ব্যবস্যায়ীদের সঙ্গে কথা বলে নির্ধারিত দামে ধান কিনতে সরকারি উদ্যোগ নিতে পারলে হয়তো ধানচাষিরা ধানের ন্যায্য দাম পাবেন। কাটা-মাড়াইয়ের সময় ধানের ন্যায্য দাম পেলে চাষিরা ধানচাষে আগ্রহ হারাবে না।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. বেলাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর গাইবান্ধা জেলায় ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৮০ হেক্টোর জমিতে ধানচাষ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭ লাখ ৭ হাজার ১৮৬ মেট্রিক টন। কৃষকদের জন্য সরকারিভাবে প্রদর্শনী, প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও সরকারিভাবে ভর্তুকি দিয়ে অর্ধেক দামে ৭ উপজেলায় চলতি বছরেই এক ডজন ধান কাটার মেশিন দেওয়া হয়েছে। যাতে কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগেই ধান কাটা-মাড়াই করে ঘরে তুলতে পারে।
Advertisement
আগামীতে ব্রি-উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের মাধ্যমে কৃষিকে আরো এগিয়ে নিতে চেষ্টা চলছে বলেও জানান এ কৃষিবিদ।
গাইবান্ধা জেলা কৃষি সম্প্রসারণের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত সাত উপজেলায় ধানকাটা মাড়াইয়ে ৬২টি হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করা হয়েছে । এছাড়া অনলাইনে আবেদন করে কৃষকরা সরকারি গোডাউনে ১০৮০ টাকা মণ দরে ধান দিতে পারবেন।
কতজন কৃষক এবছর ধান দিতে পারবেন এমন প্রেশ্নে তিনি বলেন, উপজেলা পর্যায়ে তথ্য আছে এখনো জেলা পর্যায়ে সে তথ্য আসেনি। আসেনি আগামী সপ্তাহে জানানো যাবে ।
গাইবান্ধা জেলা খাদ্য নিয়স্ত্রক অন্তরা মল্লিক জাগো নিউজকে জানান, এবছর সাত উপজেলা থেকে তিন হাজার ৮৮০ জন কৃষকের কাছ থেকে ১১ হাজার ৬৪৯ মেট্রেক টন ধান নেয়া হবে।
এফএ/জেআইএম