স্বাস্থ্য

কক্সবাজারে নিউমোনিয়ার প্রকোপ : ১৭ শিশুর মৃত্যু

গত কয়েক দিনের গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শীতল আবহাওয়াকে বাড়িয়েছে কয়েক গুণ। একারণে বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। কক্সবাজারে শিশুদের মাঝে নিউমোনিয়ার প্রকোপ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ১৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের রেজিস্ট্রারে এ মৃত্যুর তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মৌসুমগত প্রভাবে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। যার বেশির ভাগই শিশু। গত এক সপ্তাহ ধরে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাসপাতালে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে নিউমোনিয়া রোগীর সংখ্যা। একই সঙ্গে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও মিলছে আগের তুলনায় বেশি।কক্সবাজার সদর হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত চিকিৎসক সৌরভ দত্ত জানান, গত এক সপ্তাহে শীতজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এক সপ্তাহে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৩৩৭ জন। এর মধ্যে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আরো ১৪৬ জন শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও সর্দি, কাঁশি এবং শ্বাসকষ্টজনিত রোগও শিশুদের আক্রান্ত করছে। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অভিভাবককে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক।রোগীর স্বজনরা জানান, শিশু রোগীদের সিট না পেয়ে মেঝেতে রাখতে হচ্ছে। রোগীর অভিভাবকদের অভিযোগ, যথাসময়ে চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। আর নার্স (সেবিকা) অবহেলা করছেন সেবা প্রদানে। তাদের অবহেলার কারণেই রোগীরা সঠিক সময়ে চিকিৎসা পাচ্ছে না। এর ফলে অনেক সময় মারা যাচ্ছে শিশু রোগী।শিশু ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হওয়া রামু উপজেলার ঈদগড়ের ৯ মাসের শিশু রুমাইসার মা খদিজা বেগম বলেন, সদর হাসপাতালে অতিরিক্ত রোগীর চাপের কারণে তার শিশুর চিকিৎসা পেতে দেরি হয়েছে। ফলে তার শিশুর অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। শিশুর মারাত্মকভাবে শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। তাকে দেয়া হচ্ছে অক্সিজেন (নেব্যুলাইজার)।একইভাবে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু জয়নব বিবির মা হাদিজা বেগম জানান, তার শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৩ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। তিনি হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে এক বারের জন্যও ডবলিং ছাড়া রাখা সম্ভব হয়নি।শিশু ওয়ার্ডে দায়িত্বরত নার্সিং সুপারভাইজার জানান, নার্সরা রোগীদের সেবাদানে সবসময় নিরলস প্রচেষ্টায় থাকে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রোগীর চাপ অতিরিক্ত বেড়েছে। স্বল্প সংখ্যক সেবিকার দ্বারা সকলকে সঠিক সময়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দিন-রাতে ৫ জন নার্স দায়িত্বে থাকলেও শিফট ভাগ করার কারণে অনেক সময় ২ জন নার্সকে ৭০-৮০ জন রোগী সামাল দিতে হয়।কক্সবাজার সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. সুলতান আহমদ সিরাজী জনান, শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চাপ বেড়ে গেছে। নার্স ও চিকিৎসকরা বরাবরেই দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর কারণে সামলিয়ে উঠতে কষ্ট হচ্ছে। এছাড়া সদর হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় নার্স ও চিকিৎসকের সংখ্যা কম।এদিকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে চিন্তিত না হয়ে যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার। শুধু শিশু নয়, বয়োবৃদ্ধারাও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালমুখি হচ্ছেন। অপরদিকে, শুধু জেলা সদর নয় উপজেলার সরকারি ও বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে ঠাই হচ্ছে না মৌসুমী রোগে আক্রান্তদের। গ্রামের দরিদ্র মানুষগুলো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এসব ঠাণ্ডাজনিত রোগে। যোগাযোগ ব্যবস্থার নাজুকতা কিংবা আর্থিক অসঙ্গতির কারণে এ শ্রেণির মানুষগুলো জেলা সদরের হাসপাতালে কিংবা বেসরকারি ক্লিনিকে আসতে পারছেন না। ফলে নিরাময় পেতে এরা ভিড় বাড়াচ্ছেনগ্রামের পল্লী চিকিৎসকদের চেম্বারগুলোতে।কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. কমর উদ্দিন বলেন, ঠাণ্ডার প্রকোপ অন্য সময়ের চেয়ে বেড়েছে। তাই বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপও। তবে উপজেলা ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ক্লিনিকগুলোতে দায়িত্বরত সকলকে সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে বলা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগও।সায়ীদ আলমগীর/এমএএস/বিএ

Advertisement