রাজশাহী জেলায় গত ৬ বছরে ৩৫ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ বেড়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ মৌসুমে জেলায় মোট লিচুর চাষ হয়েছে ৪৮৯ হেক্টর জমিতে। এতে উৎপাদন হয়েছে ২ হাজার ৫১০ মেট্রিক টন। ওই বছর হেক্টর প্রতি ফলন হয়েছে ৫ দশমিক ১০ মেট্রিক টন। পরের বছর (২০১৭-১৮) এক একর বেড়ে মোট চাষের জমি দাঁড়ায় ৪৯০ হেক্টরে। ওই সময় মোট উৎপাদন হয় ২ হাজার ৮০৯ মেট্রিক টন। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় ২৯৯ মেট্রিক টন বেশি। তবে হেক্টর প্রতি ফলন দাঁড়ায় ৫ দশমিক ৭ মেট্রিক টনে।
২০১৮-১৯ মৌসুমে চাষের জমি বাড়ে আট হেক্টর। মোট ৪৯৮ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় ২ হাজার ৮৭৬ মেট্রিক টন। সে বছর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ছিল ৫ দশমিক ৭৮ মেট্রিক টন।
২০১৯-২০ মৌসুমে লিচুর আবাদ আরও দুই হেক্টর বৃদ্ধি পেয়ে মোট ৫০০ হেক্টরে দাঁড়ায়। এতে মোট ফলন আসে ২ হাজার ৮৫৮ মেট্রিক টন এবং হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৫ দশমিক ৭২ মেট্রিক টন। অপরদিকে ২০২০-২১ মৌসুমে ১৯ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ বৃদ্ধি পেয়ে মোট চাষের জমি দাঁড়ায় ৫১৯ হেক্টরে। ওই বছরে মোট উৎপাদন হয় ৩ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন। হেক্টর প্রতি গড় ফলন আসে ৫ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন।
Advertisement
চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলায় আর পাঁচ হেক্টর জমিতে আবাদ বেড়ে মোট লিচুর চাষের জমি দাঁড়ায় ৫২৪ হেক্টর। তবে গত ২০১৬-১৭ মৌসুম থেকে ২০২১-২২ মৌসুম পর্যন্ত মোট আবাদ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রতি বছর গড়ে ৫ দশমিক ৮৩ হেক্টর জমিতে বেড়েছে লিচুর আবাদ। সেক্ষেত্রে রাজশাহী জেলায় উৎপাদনও তুলনামূলকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে চলতি মৌসুমে হেক্টর প্রতি ফলন আশা করা হচ্ছে ৬ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে ৩ হাজার ১৪৪ মেট্রিক টন সাম্ভব্য ফলন আশা করা হলেও এর চেয়ে অধিক ফলন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
শনিবার (২৮ মে) জাগো নিউজের প্রতিবেদককে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি তথ্য সেবার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ হিল কাফী।
তিনি বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিচুর আবাদ হয় পবা, বাগমারা, তানোর, মোহনপুর, পুঠিয়া ও মতিহার এলাকায়। বাকি অন্যান্য উপজেলায় স্বল্প আকারে লিচুর বাগান রয়েছে। তবে সমসাময়িক বেশ কিছু অঞ্চলে ফল চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। তাই প্রতি বছর ক্রমান্বয়ে অল্প-স্বল্প করে বাড়ছে লিচুর আবাদ।
চারঘাট উপজেলার মাসুম আলী জানান, বাপ-দাদার পাওয়া ১৫ বিঘা জমিতে আগে ধান ও গমের সঙ্গে শাক-সবজির চাষ করতাম। তবে এসব ফসলে লাভ কম হয়। তাই সাথী ফসল হিসেবে বছর সাতেক আগে জমিতে লিচুর গাছ লাগাই। এখন এসব গাছ থেকে প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার উপার্জন হচ্ছে। পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও আবাদ করতে পারছি।
Advertisement
নগরীর নওদাপাড়া এলাকার মো. ইরান আলী। করেন মৌসুমী ফলের ব্যবসা। আম লিচুর মৌসুমে বাগান ঘুরে ঘুরে আম-লিচু সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন স্থানের গ্রাহকের কাছে পাঠান ফল।
লিচুর বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পেশাগত কারণে রাজশাহীর বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরতে হয় ফল সংগ্রহের জন্য। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার রাজশাহী অঞ্চলে লিচুর বাগান অনেক বেশি চোখে পড়ছে। আবার অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার লিচুর আবাদও হয়েছে, যা গত বছর পাঁচেক আগেও রাজশাহীতে ছিল না।’
ফয়সাল আহমেদ/এমএমএফ/এমএস