নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরনী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ১৫ জুন। এ নির্বাচনের চারটি ভোটকেন্দ্র লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নে পড়েছে। এ নিয়ে চরগাজীর বাসিন্দাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে। যে কোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষেরও আশঙ্কা করছেন তারা।
Advertisement
ভোট কেন্দ্র চারটি সরিয়ে নিতে সম্প্রতি চরগাজী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সচিবের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন। বিষয়টি সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নোয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) নোয়াখালী নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন ভোট কেন্দ্র এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি এলাকাবাসী, ভোটার ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথাও বলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরগাজী ইউনিয়নের তিনটি মৌজা নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার সঙ্গে সীমানা বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে লক্ষ্মীপুর সাব জজ আদালতে মামলা চলমান। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিরোধীয় এলাকায় স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন আদালত। এতে গেলো ইউপি নির্বাচনে চরগাজী ইউনিয়নে বিরোধী এলাকায় তাবু দিয়ে অস্থায়ী ভোটকেন্দ্র করা হয়।
Advertisement
এদিকে ১৫ জুন হাতিয়ার হরনী ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেন। এতে বিরোধীয় এলাকায় চার ভোটকেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রগুলো হলো- চরগাজীর টাংকি বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর তেগাছিয়া বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোল্লা গ্রাম নূরানি মাদরাসা ও ফরেস্ট সেন্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোহাম্মদপুর তেগাছিয়া বাজার ও টাংকি বাজারে লক্ষ্মীপুর জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে দুটি ক্যাম্প রয়েছে। স্থিতাবস্থার পরও হরনী ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রগুলো স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে চরগাজী ইউনিয়নের ভোট কেন্দ্রগুলো হরনী ইউনিয়ন এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে চরগাজী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তাওহীদুল ইসলাম সুমন জানান, গেজেট অনুযায়ী বিরোধীয় চরলক্ষ্মী, চরদরবেশ, দক্ষিণ টুমচর মৌজার অধিকাংশই ডিয়ারা এমআরআর ও হাল রিভিশনে রামগতির চরগাজীতে রেকর্ডভুক্ত। এসব এলাকার ৯৯ শতাংশ ভোটার চরগাজী ইউনিয়নের বাসিন্দা। একসময় সিডিএসপি জমি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রামগতির কিছু সংখ্যক লোককে হরনী ইউনিয়নের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু পরে তারা ফের রামগতি উপজেলা নির্বাচন অফিসে এসে চরগাজীর ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। বর্তমানে ৭০০-৮০০ নারী-পুরুষ চরগাজীর ভোটার হতে নির্বাচন অফিসে আবেদন করেছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নে হরনীর বাসিন্দা নেই। যেটা বলা হচ্ছে, তা উল্লেখযোগ্য নয়। নির্বাচন কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করেও আমাদের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। দ্রুত আমাদের এলাকা থেকে কেন্দ্রগুলো সরিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কার্যকরী সিদ্ধান্তের প্রত্যাশা করছি।’
Advertisement
রামগতি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াহেদ জাগো নিউজকে বলেন, ইউপি নির্বাচন হবে পাশের উপজেলা হাতিয়ায় আর কেন্দ্র হবে রামগতিতে, এটা হতে পারে না। এ নিয়ে আদালতেরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বর্তমানে ভোটকেন্দ্র নিয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা ভঙ্গের আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি আমরা প্রশাসনকেও জানিয়েছি।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ভোট কেন্দ্রগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে। এ সময় সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। ওই কেন্দ্রগুলো নিয়ে সরকারি গেজেটও রয়েছে। চরগাজী থেকে হরনীর কেন্দ্র সরবে কি-না তা এখনো বলা যাচ্ছে না। তবে শিগগির নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
কাজল কায়েস/এসজে/জেআইএম