গত চার দশকে যখনই লন্ডন গেছি তখনই আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি আমার বাবার সঙ্গে চাকরি করেছেন। আমার বড় চাচা প্রয়াত বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের কৈশোরের বন্ধু। আমাকে দেখেছেন জন্ম থেকেই। সুতরাং আমি তাঁর স্নেহের পাত্র। কিন্তু তাঁর গুণেই আমাদের সম্পর্কটা হয়ে গেছে বন্ধুর মতো।
Advertisement
আমি অনেকদিন তাঁকে বলেছি, একটি স্মৃতিকাহিনি লেখার জন্য। এর অনেকটাই তিনি লিখেছেন। প্রকাশিতও হয়েছে কাগজে। এসব মিলিয়ে একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করা এখনও তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি।
২০০১ সালের এপ্রিলে লন্ডনে গিয়েছিলাম কয়েকদিনের জন্য। তখন ঠিক করি তাঁর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করব। প্রথাগত সাক্ষাৎকার নয়। আমাদের সংস্কৃতির আন্দোলনকে সামনে রেখে পঞ্চাশ দশকের কথা জানতে চাইব। অন্য কথায় এই সাক্ষাৎকারটি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের ইতিহাসের উপাদান।
সময়ের টানাটানি আমাদের দুজনেরই ছিল। তবে, আমার অনুরোধ তিনি উপেক্ষা করেননি। ২৮ এপ্রিল থেকে ৩১ এপ্রিল (২০০১) এই তিন ঘণ্টার একটি সাক্ষাৎকার প্রদান করেন। তারই অংশ এখানে প্রকাশিত হলো। (ক্যাসেট থেকে অনুলিখন করেছেন জামালউদ্দিন ও শরীফা বুলবুল) ২৮ এপ্রিল শনিবার ২০০১ আজকের আলোচনায় আমরা প্রধানত জনাব চৌধুরী’র কাছে কয়েকটি বিষয়ে বিশেষভাবে জানতে চাইব। একটি হচ্ছে পঞ্চাশের সাহিত্য সাংস্কৃতিক আন্দোলন, তার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ বিশেষ করে ফেব্রুয়ারির আন্দোলন, তাঁর সেই বিখ্যাত গানের রচনাকাল, এরপর সাংবাদিক হিসেবে তিনি ’৭১ সাল পর্যন্ত যে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেটি, তৃতীয় পর্বে আমরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর যে যোগাযোগ ছিল দীর্ঘকাল সে বিষয়ে আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করব।
Advertisement
প্রথম পর্ব পড়ুন এখানে ‘স্কুল জীবন থেকেই আমি কিন্তু সাহিত্য চর্চা করতাম’
দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন এখানে ‘বাংলাকে ইসলামাইজড করতে রেডিও পাকিস্তানে বাংলা খবর পড়া শুরু হয়’
তৃতীয় পর্ব পড়ুন এখানে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো গানটি শহীদ রফিকের লাশ দেখে লেখা’
চতুর্থ পর্ব পড়ুন এখানে ‘মুনীর চৌধুরী দেখিয়ে দিলেন টাইপ রাইটার মেশিনে বাংলাও লেখা যায়’
Advertisement
মুনতাসীর মামুন: আমি আসলে এ ধরনের বিষয়গুলো আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি- যেগুলো লেখা হয়নি, কেউ কখনও বলেননি.....আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী: কেউ বলেন রুহুল কুদ্দুসসহ কয়েকজন সিএসপি অফিসার করেছেন, কিন্তু এটা গোটাটাই শেখ মুজিবুর রহমানের তৈরি। কেন তৈরি সেটা বলছি- শেখ মুজিবুর রহমান পঞ্চাশের দশকের দিকে একটা সাপ্তাহিক কাগজ বের করেছিলেন- নাম ‘নতুন দিন’। এটা বেঙ্গল প্রিন্টিং ওয়ার্কসে ছাপা হতো, ওয়াইজঘাটে। কবি জুলফিকার ছিলেন সেটার এডিটর। তার বাড়ি ছিল বরিশালের হিজলায়। ওনার খুব বন্ধু ছিলেন। শেখ সাহেব দুটো প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। শেখ সাহেব একটা দোকান দিয়েছিলেন, নিউমার্কেটের সামনে তার নাম ছিল ‘পূর্বাণী’।
কাগজটা করেছিলেন (আমি যে লন্ডনে নতুন দিন-বের করি এটার যেমন প্রতিষ্ঠাতা আমি) ওই নামটা থেকে এই নামটা দিয়েছিলাম। শেখ সাহেবের কাগজটার নাম ‘নতুন দিন’। উনি যখন নতুন দিন চালান- তখন উনি এসে বললেন আমি মনে করি পূর্ব পাকিস্তান আর পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনীতি এক হওয়া উচিত নয়। দুই অর্থনীতি আমার মনে আছে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, রেহমান সোবহান, আনোয়ার হোসেন দোভাষ মিলে একটা মুভমেন্ট টু ইকোনমি থিউরি করেছিলেন। আবদুর রাজ্জাক সাহেব, এরা করেছিলেন। এটা বহু আগে পঞ্চাশের দশকে এই সুবাদে মুজিবুর রহমান এটাকে ভ্রুক্ষেপ করে বহু আর্টিকেল লিখেছিলেন, নিজেই আর্টিকেল লিখেছিলেন, ভাষা ভুল হতো নিয়ে আসতেন। আমি এটার সংস্পর্শে আসলাম ওই নতুন দিনে আমি চাকরি করতাম না-আমি চাকরি করতাম ইত্তেফাকে। মানিক মিয়া আমাকে অর্ডার দিলেন মুজিবুরের লেখাগুলো দেখে দিয়েন। ড. শাহাদত হোসেনও এটার পক্ষে ছিলেন তখন।
এই আন্দোলনের সময় শেখ সাহেবের সঙ্গে আমার আলাপ হয়। তখন থেকে আমি জানি ওনার মাথায় স্বাধীন বাংলা ঘুরছে। প্রায় সময় বলতেন পাকিস্তান এক থাকবে না। হতে পারে না, ওদের সাথে থাকা যায় না। উনি চীনে বেড়াতে যাবেন ১৯৫৩ সালে। একটা পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি দল গেল চীন ভ্রমণে। ’৫১ কি ’৫৩ সাল, এখন আমার মনে নাই। মানিক মিয়া, শেখ মুজিবুর রহমান, পশ্চিম পাকিস্তানের কিছু লোক আর পশ্চিমবঙ্গ থেকে মনোজ বসু এরা ছিল। মনোজ বসুর চীন দেখে এলাম-এ আছে চীনে যাওয়ার পর দেখা গেল পাকিস্তানি দলের বাঙালিরা আর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা এক হয়ে গেছে। এক জায়গায় ভাত খাচ্ছে এটা খাচ্ছে, আর পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দুভাষীরা আর ভারতের উর্দুভাষীরা এক হয়ে গেছে রুটি গোশত খাচ্ছে এবং মনোজ বসুকে শেখ মুজিবুর রহমান দাদা ডাকে, উনি ভাইটি ডাকেন শেখ মুজিবুর রহমানকে, খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান দেশে চলে এসে প্রথম কথাই বললেন, চীনে গিয়ে বুঝতে পারলাম যে, আমাদের জাতীয়তা আলাদা।
উনি চীন থেকে এসেই বলা শুরু করলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের থাকা সম্ভব নয়। যারা বলেন যে, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা চাননি- আমি তাঁর ঘনিষ্ঠভাবে মিশে আমার মনে হয়েছিল এবং তাঁর লেখাপড়া যা-ই থাক না কেন তার অসম্ভব রকম গ্রাস রুট পাওয়ার ছিল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী না থাকলে তিনি বহু আগে স্বাধীন বাংলা আন্দোলনের জন্য মওলানা ভাসানীকে নিয়ে নেমে যেতেন। যাহোক চীন থেকে আসার পরে উনি নতুন দিনে, টু ইকোনমি আন্দোলনের সময় তার আগে দেখলাম যে, একেবারে বললেন যে, আমাদের ঠকানো হচ্ছে। কারণ চায়নায় গিয়ে উনি দেখে আসলেন চায়নার একেক অঞ্চলে একেক রকম ইকোনমি আছে উনি বললেন যে, আমরা কেন পারব না ওই ধরনের ইকোনমি করতে। যাহোক, টু ইকোনমি আন্দোলন থেকে ধীরে ধীরে তার মাথায় ছয় দফা অনেকদিন থেকে ঘুরছিল।
মুনতাসীর মামুন: পত্রিকাটি কতদিন পর্যন্ত চলেছিল?আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী: চার-পাঁচ বছর চলেছিল। চলেছিল মানে বন্ধ হয়নি। এটাকে আয়ুব খানের মার্শাল ল’র সময় ব্যান্ড করে দেওয়া হয়।
মুনতাসীর মামুন: এই পত্রিকাগুলো কোথাও কি পাওয়া যাবে?আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী: আমি ঠিক বলতে পারব না। এটা একটা ক্রাউন সাইজের কাগজ ছিল ১৬ পাতার খুব সুন্দর ছাপা টাইপে। এটার প্রধান সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান এবং নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন জুলফিকার। এটার একটা বৈশিষ্ট্য ছিল। বহু নিউজের হেডিং নজরুল ইসলামের কবিতার লাইন দিয়ে দেওয়া হতো। তখন থেকে আমি জানতাম শেখ সাহেবের মাথায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করার কথা ঘুরছে।
ছয় দফা দেওয়ার সময় তাঁর সঙ্গে আবার বিস্ময়করভাবে যোগাযোগ হয়। সেটা হচ্ছে যে ওনার সঙ্গে মানিক মিয়ার ডিফারেন্স অব অপিনিয়ন হয়ে গেল ছয় দফা দেওয়ার প্রশ্নে। মানিক মিয়ার ইচ্ছা ছিল না কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান ওই সময় যুদ্ধের পর পরই ’৬৫ এর ওয়ার হয়েছে আইয়ুব গভর্নমেন্ট অত্যন্ত ডেলিকেট সিটিউশন একটা প্রচণ্ড রকমের দমন চালান। মানিক মিয়া ভয় পেয়েছিলেন। ছয় দফা মুভমেন্ট যদি শুরু হয় তাহলে প্রচণ্ড রকম নিপীড়ন নেমে আসবে। উনি শেখ সাহেবকে বলেছিলেন, এটা এখন দেবেন না, কিন্তু উনি শুনলেন না। উনি তখন ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের আলফা ইন্স্যুরেন্সে চাকরি করেন। পূর্ব পাকিস্তান জোনের ম্যানেজার ছিলেন তিনি। তখন যেখানে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের একটা তেতলায় তার অফিস ছিল। আমি প্রায়ই সেখানে যেতাম। আমার একটা ছোট্ট কাগজ ছিল, নাম ‘আওয়াজ’, সান্ধ্য দৈনিক। উনি আমাকে বললেন, মানিক মিয়া হয়তো আমাকে সমর্থন দেবেন না। তোমাকে একটা কাজ করতে হবে, সেটা হচ্ছে এই আমি একটা দাবি দেব আইয়ুব খানের মিটিংয়ে। আইয়ুব খান ’৬৫-এর যুদ্ধের পরে ’৬৬-এর গোড়ায় ঢাকায় এসেছিলেন দেখা করার জন্য। পূর্ব পাকিস্তান তো বিচ্ছিন্ন ছিল। যুদ্ধের ১৭ দিন পর পূর্ব পাকিস্তান রীতিমতো স্বাধীন তখন। মোনায়েম খাঁ স্বাধীনতা ঘোষণা করলেই হতো। আইয়ুব খানের সঙ্গে দেখা করতে গেলেন পূর্ব পাকিস্তানিরা। সম্মিলিতভাবে একটা দাবি দেওয়ার জন্য মানিক মিয়ার বাড়িতে একটা গোপন মিটিং হয়। এই মিটিংয়ে ছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মেয়ে আকতারী বেগম, তিনি করাচি থাকতেন।
হামিদুল হক চৌধুরী, নূরুল আমীন, ইউসুফ আলী চৌধুরী, শেখ মুজিবুর রহমান, আরও দু-একজন ছিলেন, মানিক মিয়া আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন ওই মিটিংয়ে কে কী বলে তার ওপর একটা রিপোর্ট লেখার জন্য। সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয় আইয়ুব খান আসলে তার কাছে দাবি পেশ করা হবে। শেখ সাহেব সেদিনই কাজে বসলেন। আমার কাহিনিটা কেউ বিশ্বাস করবেন না, হয়তো বলবেন যে এটা আমি তৈরি করেছি। আলেকো রেস্টুরেন্টের দোতলায় আমাকে আর শেষ দুজনকে ডেকে নিলেন। শেষ দুজন এবং আমি বসার পর বললেন যে আমি একটা জবাব তৈরি করেছি। শেখ সাহেব বললেন, আমি চাই যে, আমাদের একটা আলাদা পার্লামেন্ট হবে, বাঙালির আলাদা পার্লামেন্ট। এবার দেখা গেল যুদ্ধে ইস্ট পাকিস্তান অরক্ষিত। আমাদের হাতে ফরেন ট্রেড ছেড়ে দিতে হবে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য আলাদা ফরেন এক্সচেঞ্জ, আমরা এটা কন্ট্রোল করবো। এরকম উনি চারটা দফার কথা বললেন, এ সময় রুহুল কুদ্দুস সাহেব আসেনি। রুহুল কুদ্দুস, খায়রুল কবির, সানাউল হক, তিনজন বন্ধু ছিলেন। শেখ সাহেব এদের বললেন তোমরা এটাকে মোডিফাই করে দাও। ওনারা তার ভিতরে নিয়ে আসলেন চাকরির ব্যাপারটা- ওই যে সরকারি চাকুরেদের ব্যাপারটা। শেখ সাহেব বললেন, আচ্ছা তোমরা সব সময়, তোমাদের দেখেছি কোনো মুভমেন্ট করতে গেলেই তোমরা আগে ফলটা খেয়ে ফেল। তো আমাদের সৈন্য বাহিনীর কথাও লেখ। এরকম বলেছেন আমার ঠিক এখন আর পুরা কথা মনে নেই। ছয়টা দফা করা হলো, দুইটা দফা এরা অ্যাড করলেন তাদের স্বার্থে। সরকারি কর্মচারীদের সুবিধা হবে এরকম কী যেন আমার ঠিক মনে নেই। ছয় দফাগুলো লিখতে মানে সাজাতে ওনাকে সাহায্য করেছিলেন রুহুল কুদ্দুস, খায়রুল কবির, সানাউল হক। এ কে এম আহসান পেছনে ছিলেন, কিন্তু ডাইরেকটলি যুক্ত ছিলেন না ওই রাত্রে এই মিটিংয়ে উনি এটা টেবিলে দিয়ে বললেন (এটা ছিল ঘরোয়া মিটিং খুব গোপনে মিটিংটা হয়েছিল) আমি এইটা পূর্ব পাকিস্তানের সর্বসম্মত দাবি হিসেবে আইয়ুব খানের হাতে দিতে চাই। নূরুল আমীন সাহেব আছেন, হামিদুল হক চৌধুরী সাহেব দেখে বললেন বাপরে বাপ এটা যদি আইয়ুব খান দেখে ওখানে গুলি মারবে আমাদের। নূরুল আমীন বলেন আই ক্যান নট অ্যাকসেপ্ট। তখন শেখ সাহেব কাগজটা নিয়ে বললেন আমি একাই বলব। আমি একাই তাহলে এটা দেব। এটা আমার দাবি- আপনাদের কথা বলতে হবে না। তখন আকতার সোলেমান উঠে বলল, মুজিব এটা আমার বাবার পয়েন্ট তুমি পাকিস্তান ভাঙার জন্য এ দাবি দিতে পার না। এ নিয়ে হাতাহাতি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। শেখ সাহেব উত্তেজিত হয়ে বললেন, বেবী তুমি বাড়াবাড়ি করো না। তুমি তোমার বাবার মেয়ে হতে পার- দল মানুষের। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে খুব ঝগড়া হয়ে গেছে।
তার পরের ঘটনা আরও ভয়াবহ। শেখ মুজিবকে আওয়ামী লীগ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য আকতার সোলেমানরা ষড়যন্ত্র করেছিল এবং সেটা অন্য কাহিনি। সেটা বলতে পারব না, এর ভিতরে ব্যক্তিগত স্ক্যান্ডাল আছে। মানিক মিয়া বললেন যে, মুজিবর মিয়া আপনি মাথা গরম না কইরা চিন্তা কইরা দেখেন এটা আইয়ুবকে দেবেন কি না। তিনি বললেন, না এইটা আমি দেব। বলে যেটা লেখা হয়েছিল ওই কাগজটা পকেটে নিলেন এবং আমাকে বললেন, তুমি আমার সঙ্গে অলকাতে দেখা করবে কালকে।
এর কদিন পরে আইয়ুব খান আসছেন- কিন্তু আইয়ুব খান মিটিং শুরু করার আগেই আমার মনে হয় আইয়ুব খানের কাছে গোয়েন্দা সূত্রে খবর গেছিল যে মুজিব উইল প্লেস সামথিং, যেটা তার পক্ষে ফলপ্রসূ হয়। উনি এসে কী একটা তুচ্ছ কারণে সবার সঙ্গে ঝগড়া করে মিটিং পোস্টপন্ড করে দিয়ে চলে গেলেন। এরপর লাহোরে মিটিং- ওটা ৬ ফেব্রুয়ারি ১২ ফেব্রুয়ারি তারিখে আজম খান মিটিং ডাকলেন- সর্বদলীয় মিটিং-আইয়ুব খাঁ-কে সামরিক শাসনের অবসান এবং গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের জন্য। যাওয়ার আগের দিন আমি আর সিরাজউদ্দিন হোসেন ওনার কাছে গেলাম। উনি বললেন, আমি এটা ওখানে আইয়ুবকে দিতে পারিনি, ওখানে আমি টেবিলে দেব। আমি বললাম, আপনি তো এখানে নিয়ে আসছেন এভাবে। এটা আমি ছাপবো। বললেন, খবরদার আমি লাহোর পৌঁছার আগে যদি এটা তুমি ছাপ আমাকে অ্যারেস্ট করে ফেলবে। বিফোর আই প্লেস ইট আমাকে অ্যারেস্ট করে ফেলবে। সুতরাং এটা আমি দেওয়ার পরে তুমি ছাপাবে আওয়াজে, মানিক মিয়া না বলে দিয়েছেন আমি ছাপবো না। আমি বললাম এটা একটা দফাওয়ারি করেন, যেমন- জিন্নার ১৪ দফা, আমি ওইখানে বসে বসে দেখলাম যে দাবিগুলোকে ছয়টা ভাগে ভাগ করা যায়। আমি বললাম এইটা শেখ মুজিবের ছয় দফা। ওই নামেই প্রথমে আমার আওয়াজে লাহোরে শেখ মুজিবের ঐতিহাসিক ছয় দফা উত্থাপন বলে আমি হেডিং দিয়েছিলাম। এই ছয় দফা মুভমেন্ট পরে যখন তিনি লাহোর থেকে ফিরে আসলেন, ফিরেই সিদ্ধান্ত নিলেন মানিক মিয়া ঘুরে গেলেন, মানিক মিয়া সাপোর্ট দিলেন। আমার মনে আছে মানিক মিয়া তার কাগজে এডিটোরিয়াল লিখেছিলেন। আলফা অফিসে গিয়ে দেখি মানিক মিয়া আর শেখ সাহেব গুণ গুণ করে গান গাইছেন। আমাকে দেখে বঙ্গবন্ধু বললেন, যা পেয়েছি যা দেখেছি তুলনা তার নেই।
[চলবে…]
এইচআর/এমএস