মতামত

‘আমার একটি মাত্র পরিচয়- একুশের গানের রচয়িতা’

১৯ মে সকালে ঘুম থেকে উঠেই প্রথম ফোনটি পেলাম যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মাহমুদ শরিফ ভাইয়ের কাছ থেকে। সুলতান ভাই কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে আমাকে দুঃসংবাদটা জানালেন। প্রিয়জনের মৃত্যু সংবাদ কাউকে জানানো বোধ করি কঠিন কাজগুলোর একটি, আর শারীরিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সুলতান ভাইয়ের জন্য এই কাজটি করা ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সুলতান ভাই বললেন, ‘তানভীর, আমি খুব অসুস্থ কিছুই করতে পারছি না। খবরটা আমি হাইকমিশনারকে জানিয়েছি আর এখন তোমাকে জানালাম। সবাইকে একটু জানানোর ব্যবস্থা করো।’

Advertisement

আমি তখন ইতালির রাজধানী রোমে। বিঅনটিভি রোম প্রতিনিধি জহুরুল হক রাজু হোটেলে বসে আছে। ভ্যাটিকান সিটিতে মিউজিয়াম দেখতে যাওয়ার কথা ছিল আমাদের। রাজুকে বললাম, সব অনুষ্ঠান বাদ দিতে হবে, গাফ্‌ফার ভাই আজ সকালেই আমাদের ছেড়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। হোটেলে বসেই কিংবদন্তি লেখক ও সাংবাদিক আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদ দিয়ে প্রথম ব্রেকিং নিউজটা পাঠালাম একাত্তর টেলিভিশনের জন্য। ফেসবুকে স্ট্যাটাস পোস্ট করতেই মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে গেলো সংবাদটি। ঢাকা থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের একের পর এক কল আসতে থাকলো, কারও কল ধরতে পেরেছি, কারোটা পারিনি।

কথা হলো যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি, গাফ্‌ফার ভাইয়ের ঘনিষ্ঠ সহচর, মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল আলীর সাথে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ফারুক ভাই ততক্ষণে বার্নেট হাসপাতালের পথে রওয়ানা হয়েছেন; আমাকে জানালেন, ‘আজ মরদেহ পাওয়া যাবে না, তবে আগামীকাল শুক্রবার ব্রিকলেন মসজিদে নামাজে জানাজার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

একাত্তরের বার্তা বিভাগ থেকে শাকিল আহমেদ ভাই ও সুজন কবির ভাই, ফারজানা রুপা আপা কল করে চিন্তিত হয়ে পড়লেন, ‘গাফ্‌ফার ভাইয়ের মৃত্যুর সময় আপনি ইতালি, কীভাবে নিউজ করবো আমরা?’

Advertisement

আমি শাকিল ভাইকে বললাম, আমি যেখানেই থাকি সংবাদে পিছিয়ে থাকবে না একাত্তর। যুক্তরাজ্যে চ্যানেল এস টেলিভিশনের আমার সহকর্মী মেহেদী ভাই ও মৃধা ভাইকে অনুরোধ করলাম তারা যেন সংবাদ সংগ্রহের জন্য হাসপাতালে চলে যান। হাসপাতাল থেকে সারোয়ার আর মৃধা ভাইয়ের মোবাইলে ধারণ করা ভিডিও দিয়ে ইতালির রোমে বসেই প্রতি ঘণ্টায় ঢাকায় নিউজ পাঠাতে থাকলাম। হাই কমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম ছুটে গেছেন বার্নেট হাসপাতালে।

মিনিস্টার প্রেস আশেকুন্নবী চৌধুরী ভাই ব্রিকলেন মসজিদে নামাজে জানাজা ও আলতাব আলী পার্কে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর প্রস্তুতির তথ্য সহ-হাইকমিশনার সাঈদা মুনার একটি ভিডিও বার্তা পাঠালেন, সেই তথ্য দিয়ে নিউজ পাঠালাম একাত্তর টিভিতে। ঢাকায় কল করে সুজন ভাইকে নিশ্চিত করলাম রাতের ফ্লাইটে লন্ডন ফিরেই দুপুরে জানাজার নামাজ ধরতে পারবো। লন্ডনের ফিরতি ফ্লাইট ধরে বাড়ি ফিরতে বেজে গেলো ভোর ৪টা। সকাল থেকেই অঝোর বৃষ্টি, বৃষ্টি মাথায় নিয়েই এক হাতে ছাতা আরেক হাতে মোবাইল ফোন হাতে নিয়ে আলতাব আলী পার্কে গিয়ে প্রথম লাইভ করলাম গাফ্‌ফার ভাইয়ের শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের প্রস্তুতি নিয়ে।

সকালের টানা বৃষ্টি দেখে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। সৃষ্টিকর্তাও আসলে বোঝেন কখন বৃষ্টি থামাতে হবে, জুমার নামাজের সময় ঘনিয়ে আসতেই আলতাব আলী পার্কের শহীদ মিনার আলোকিত করে উঁকি দিলো ঝকঝকে রোদ। দুপুরে ব্রিকলেন মসজিদ থেকে গাফ্‌ফার ভাইয়ের জানাজার নামাজের প্রথম লাইভটিও প্রচার করে একাত্তর টেলিভিশন।

গণমাধ্যমে দেওয়া গাফ্‌ফার ভাইয়ের শেষ টেলিভিশন সাক্ষাৎকারটিও নেওয়ার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে একাত্তর টিভির জুলহাজ নূর ভাই বলছিলেন, ‘একুশের গানের ৭০ বছর পূর্তি হচ্ছে দেখেন গাফ্‌ফার ভাইয়ের যদি একটা সাক্ষাৎকার নেওয়া যায়।’ গাফ্‌ফার ভাইয়ের কিডনি দুটো এতটাই অকেজো হয়ে গিয়েছিল যে ডায়ালাইসিস করা সম্ভব হচ্ছিল না, ডাক্তাররা ছয় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।

Advertisement

এর মধ্যে আবার করোনা আক্রান্ত হয়েছেন গাফ্‌ফার ভাই, তাই হাসপাতাল আর বাসায় আসা যাওয়া করছিলেন। টেলিফোনে পাওয়া দুরূহ হয়ে যাচ্ছিল। কথা ছিল যদি সুযোগ হয় সংবাদের জন্য একটা সাক্ষাৎকার নেবো, কিন্তু আমি জানতাম এটিই হয়তো আমার শেষ সাক্ষাৎকার। তাই সংবাদের একটু গভীরে গিয়ে ১৬ মিনিট ২৫ সেকেন্ডের একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেছিলাম একুশের গান রচনার প্রেক্ষাপট নিয়ে যার অংশবিশেষ ‘৭০ বছরে একুশের গান শিরোনামে’ প্রচারিত হয়েছিল একাত্তর টেলিভিশনে।

গাফ্‌ফার ভাই শুরু করেছিলেন রবীন্দ্রনাথের উদ্ধৃতি দিয়ে। ‘লেখকের চাইতে যদি লেখার দাম বেশি হয়ে ওঠে তাহলে বুঝতে হবে লেখকের মেধা অথবা প্রতিভা ওই লেখার মধ্যে বিকশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার পাওয়ার আগ পর্যন্ত গীতাঞ্জলির কবি হিসেবে পরিচিত ছিলেন, নোবেল পাওয়ার পরে তিনি হয়ে উঠলেন বিশ্বকবি। আমার একটি মাত্র পরিচয় আছে এখন- একুশের গানের রচয়িতা। আমি যে দীর্ঘ ৫০ বছর সাংবাদিকতা করেছি, গল্প লিখেছি, উপন্যাস লিখেছি, নাটক লিখেছি তা সব তলিয়ে গেছে। যেখানেই যাই আমার পরিচয় দেওয়া হয় একুশের গানের রচয়িতা। গানটি আমি গান হিসেবে লিখি নাই, কবিতা হিসেবে লিখেছিলাম ৫২’র গুলিবর্ষণের পর। শহীদ রফিকের মরদেহ দেখার পর।’

গাফ্‌ফার ভাইয়ের মেয়ে বিনীতা চৌধুরী টেলিফোনটি গাফ্‌ফার ভাইয়ের মুখের সামনে ধরে আছেন, বিছানায় শুয়ে ঘাড়ের নিচে একটা বালিশ দিয়ে মাথা উঁচু করে গাফ্‌ফার ভাই বলে যাচ্ছেন, আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। প্রচণ্ড জীবনীশক্তি না থাকলে এমন শরীর নিয়ে কেউ টেলিভিশন সাক্ষাৎকার দেয়! একজন তরুণ সাংবাদিক হিসেবে আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে আমি একজন ভাষাসৈনিকের মুখে শুনেছি ৫২’র ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, যিনি নিজে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন।

ঢাকা কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় ভাষা আন্দোলনের মিছিলের পেছনের দিকে ছিলেন। আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেন, ভাষা শহীদদের যখন গুলি ছোড়া হয়েছিল সেই গুলির শব্দ তিনি শুনেছিলেন কিন্তু কাউকে নিহত হতে দেখেননি। পরে জানতে পারেন মেডিকেল কলেজের আউটডোরের ফ্লোরে একজনের মরদেহ পড়ে আছে।

অধ্যাপক রকিকুল ইসলাম ও যায়যায়দিন সম্পাদক শফিক রেহমানসহ কয়েকজন বন্ধু মিলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের আউটডোরে গিয়ে একটি খুলি উড়ে যাওয়া লাশ দেখে এই কবিতাটি লিখেন। মরদেহের ছবিটি তুলেছিলেন রফিক সাহেব। সেখান থেকে ফিরে এসে একটি কবিতা লিখেন ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি।’ তখন আবদুল্লাহ আল মুতি শরফুদ্দীন একজন অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন পরে অধ্যাপক হয়েছিলেন।

তিনি এই কবিতাটি নেন; পরে সুর শিল্পী আবদুল লতিফের হাতে গেলে কবিতাটিতে তিনি সুর দেন, এটি ’৫২ সালের কথা। ৫৩ সালে আমার বন্ধু শহীদ আলতাফ মাহমুদ এই গানে আবার সুর দেন, তাঁর সুরেই গানটি বিখ্যাত হয়ে ওঠে ১৯৫৪ সালের পর থেকেই গানটি প্রভাতফেরির গান হয়।’ সাক্ষাৎকারটি নেওয়ার দুই মাস পর গাফ্‌ফার ভাইয়ের মেয়ে বিনীতা চৌধুরী ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গাফ্‌ফার ভাই আসলে এই ধকলটা আর শেষ পর্যন্ত সহ্য করতে পারেননি, মেয়ের মৃত্যুর চার সপ্তাহ পর গাফ্‌ফার ভাইও চলে গেলেন।

লন্ডনে আসার পর গত দেড় যুগে অগণিত অসংখ্যবার গাফ্‌ফার ভাইয়ের সাথে দেখা হয়েছে, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের জন্য বহু সাক্ষাৎকার গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার সংগ্রামী জীবনের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত তথ্যচিত্র ‘দ্বিতীয় যুদ্ধের শুরু’তে গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে ব্রিটেন থেকে স্যার উইলিয়াম কিউসি বাংলাদেশে যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু সেই সময় জিয়াউর রহমান সরকার ব্রিটিশ এই আইনজীবীকে বাংলাদেশে যাওয়ার ভিসা দেয়নি। লন্ডনের এজওয়্যারের গ্ল্যানগোল রোডের নিজ বাড়িতে আপেল গাছের নিচে বসে গাফ্‌ফার ভাই আমাকে এই সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন।

ব্রিটেনের পাঁচটি শহীদ মিনারের ইতিহাস নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘ভাষা আমার অহংকার’ এ গাফ্‌ফার ভাই বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক ভাষা করতে হলে বর্তমানে এর আঞ্চলিকতার দোষ থেকে মুক্ত করতে হবে। বাংলা ভাষাকে আধুনিক প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, মেডিসিন, চিকিৎসা ও সব রকম পেশার জন্য ব্যবহারযোগ্য করা দরকার। আমাদের বাংলা ভাষা অত্যন্ত উন্নত হয়েছে সাহিত্যের ভাষা হিসেবে, সাহিত্যের ভাষা হিসেবে আমরা নোবেল প্রাইজও পেয়েছি আর কোনো কিছুতে নয়। এখন আমাদের খুঁজতে হয়, নোবেল পুরস্কার যদি দিতে হয় তাহলে কিসে দিবে? ‘শান্তি’।

ড. ইউনূসকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছে, এটা একটা বিমূর্ত ব্যাপার। বাংলা ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে না পারলে আমরা শিকড় হারাবো, জাতি অস্তিত্ব হারাবে। ভাষাকে সংরক্ষণ করাই বড়ো কথা নয়, ভাষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করতে হবে। অনেক ভাষা আছে যেমন- সংস্কৃত বা লাতিন ভাষা এখন ধর্ম প্রচার বা ক্লাসিক পড়া ছাড়া আর কোনো কাজে লাগে না। সাধারণ মানুষের জন্য ক্লাসিকের ততটা প্রয়োজন হয় না। বাংলা ভাষা যেন এমন অবস্থায় না যায়- শুধু বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ বা শরৎচন্দ্র পড়ার জন্য বাংলা ভাষা শিখতে হবে। দৈনন্দিন চিঠিপত্র, ওষুধের প্রেসক্রিপশন লেখা বা বাণিজ্যের ভাষা হিসেবে ব্যবহারযোগ্য করতে হবে। বাংলা ভাষাকে বড়ো ধরনের সংস্কারের জন্য বাংলা একাডেমি পন্ডিতদের নিয়ে গবেষণা করতে পারে, পথ বাতলাতে পারে।’ ব্রিটেনে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক যে কয়েকটি প্রামাণ্যচিত্র আমি নির্মাণ করেছি সব কটিতে গাফ্‌ফার ভাইয়ের সাক্ষাৎকারের কারণে তথ্যচিত্রগুলো পূর্ণতা পেয়েছিল। গাফ্‌ফার ভাই যখন কথা বলতেন তখন দিন, তারিখ ও স্থান উল্লেখ করে বলতে পারতেন। অসম্ভব শার্প ছিল তার স্মৃতিশক্তি, আড্ডায় আর গল্পে মাঝে মাঝে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্যও দিতেন। ২০১৮ সালের ঘটনা, সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে আপত্তিকর মন্তব্য করে ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন তখন ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। গাফ্‌ফার ভাই এসেছেন ব্রিকলেনে বঙ্গবন্ধুর সিক্রেট ডকুমেন্ট বইয়ের প্রকাশনা উৎসবে।

আরেকটি কমিটমেন্ট থাকার কারণে ওই অনুষ্ঠানে একটু দেরিতে গিয়েছিলাম আমি, অনুষ্ঠান ততক্ষণে প্রায় শেষ। গাফ্‌ফার ভাই তখন চা খাচ্ছিলেন, চেয়ার টেনে সামনে বসে চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে রসিয়ে রসিয়ে গল্পের প্রসঙ্গ তুললাম। গাফ্‌ফার ভাই বললেন, ‘ইত্তেফাকে চাকরি করার সময় এই ব্যারিস্টার মঈনুলের কারণেই আমি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলাম।’

মঈনুল আমার লেখা এডিটোরিয়াল বদলে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার আগে ও পরে ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়েও বোমা ফাটানো তথ্য শেয়ার করেছিলেন গাফ্‌ফার ভাই। চার জাতীয় নেতা হত্যাকাণ্ডে আভাস পাওয়ার পরও ড. কামালের নীরবতা নিয়ে একটি অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার এখনো রয়েছে আমার কাছে আছে, সময় করে একদিন লিখবো সেই গল্প।

এমন কিংবদন্তির নিশ্চয় কিছু সমালোচনাও থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। দোষে-গুণে মিলেই মানুষ। প্রখ্যাত লেখক হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর একদল মানুষ হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্যকর্ম নিয়ে যতটা আগ্রহী ছিলেন তারচেয়ে বেশি কৌতূহলী ছিলেন হুমায়ূন-শাওন প্রেম, গুলতেকিনের সাথে বিচ্ছেদ আর শিলা আহমেদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে।

পাঠক ভেদে মানুষের চাহিদার ভিন্নতা থাকে, আর ব্যক্তি যদি হন হুমায়ূন আহমেদ বা গাফ্‌ফার চৌধুরীর মতো বরেণ্য কেউ, তাহলে তাদের সৃষ্টি ও সমালোচনা দুটি বিষয় নিয়েই মানুষের আগ্রহ থাকবে এটি স্বাভাবিক। তবে গাফ্‌ফার চৌধুরীর সমালোচকরা চাইলেই তাদের লেজ লুকিয়ে রাখতে পারবেন না, যারা অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে না তারাই মূলত গাফ্‌ফার চৌধুরীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তবে সমালোচকদের জন্য ব্যক্তি গাফ্‌ফার ভাইয়ের নিজের মূল্যায়নটিই মনে হয় যথেষ্ট।

সৈয়দ শামসুল হকের সাথে আলাপচারিতায় আবদুল গাফ্‌ফার চৌধুরী বলেছিলেন, ‘মৃত্যুর পর আমি একজন মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই। আমি একথাও বলবো না আমি একজন সৎ মানুষ ছিলাম বা অসৎ মানুষ ছিলাম। ফরাসি দার্শনিক আঁদ্রে জিতের সেই কথাটা আমি বিশ্বাস করি, ‘আমি যা তার জন্য নিন্দিত হতে রাজি আছি; আমি যা নই তার জন্য প্রশংসিত হতে রাজি নই।’

লেখক: লন্ডন প্রতিনিধি একাত্তর টেলিভিশন। tvjournalistuk@gmail.com

এইচআর/ফারুক/এমএস