রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল পিয়া আর ঋতপা। হঠাৎ একদম গা ঘেঁষে অদ্ভুত শব্দের হর্ন বাজাতে বাজাতে ছুটে গেলো চার চাকার একটা গাড়ি। হর্নের উচ্চশব্দে কানে তালা লাগার জোগাড় তাদের। রাগে পিয়ার মুখ থেকে বেরিয়েই গেলো, ‘অসভ্যের মতো এত জোরে হর্ন বাজানো লাগে? ভদ্রতার লেশ মাত্র নেই!’
Advertisement
পিয়া-ঋতপার সঙ্গে ঘটা এই ঘটনা এখন কলকাতার নিত্যদিনের দৃশ্য। শহরে শব্দদূষণ যেভাবে বেড়েছে, তা ভাবিয়ে তুলেছে সবাইকে। শুধু নড়চড় নেই প্রশাসনের। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কিছু উদ্যোগ নিলেও তা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। ফলে শিশু থেকে বুড়ো, চাকরিজীবী থেকে শিক্ষার্থী কিংবা সাধারণ মানুষ- ভয়ংকর শব্দদূষণে নাজেহাল হচ্ছে সবাই।
তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে দুই ও চার চাকার যানবাহনের সংখ্যা। বিশেষতঃ করোনার সময় এত বেশি গাড়ি বিক্রি হয়েছে যা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এখন দুই-চার চাকার গাড়িতে যেসব হর্ন ব্যবহার করা হয়, তাতে পথচারীদের কতটা সমস্যা হয়, তা কেউ বোঝে না এবং তোয়াক্কা করে না। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মধুপর্ণা চক্রবর্তীর সঙ্গে কথা হলে তিনি ঠিক এগুলোই বলেন।
দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট মোড়ের এক চা দোকানের মালিক আক্ষেপ করে বলেন, দাদা, যুগ বদলেছে ঠিকই। কিন্তু আখেরে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়ে গেছে বেশি। রাস্তায় বাসের ধোঁয়া ও হর্ন বাজিয়ে ছুটে চলা সমস্যা করছে। চারপাশে দূষণ যেভাবে বাড়ছে, তাতে প্রশাসন যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে আগামীতে সবার বিপদ।
Advertisement
কথা হয় হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক চিকিৎসকের সঙ্গে। তিনি বলেন, মানুষ যে কেন বোঝে না, এত জোরে হর্ন বাজানো উচিত নয়। কেউ ভাবে না, হাসপাতালে মুমুর্ষু রোগীরা রয়েছেন। এই আওয়াজ তাদের বড় ক্ষতি করতে পারে।
অপ্রয়োজনে হর্ন বাজানোর বিষয়ে প্রশ্ন করলে মহিদুল নামে এক বাসচালক বলেন, বারবার হর্ন না দিলে সামনের গাড়িগুলো জায়গা দেয় না। তাই বাধ্য হয়েই বেশি করে হর্ন বাজাতে হয়।
অধ্যাপিকা মালবিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, শব্দদূষণ রোধে সবাইকেই সজাগ হতে হবে। প্রশাসনের শাসন যদি না থাকে, তাহলে অদূর ভবিষ্যতে ঘোর বিপদ।
সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন বলছে, কলকাতার বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে শব্দের মাত্রা গড়ে ৬৫ থেকে ৮৯ ডেসিবল আর আবাসিক এলাকায় রাতে ৪০ ডেসিবল।
Advertisement
পরিবেশবিদ সুভাষ দত্ত বলেন, ভারতের মধ্যে শব্দদূষণযুক্ত অন্যতম শহর কলকাতা। কিন্তু লকডাউনের সময় এর বিপরীত চিত্র ছিল সবখানে। এটা ঠিক যে, লকডাউন হয়তো অনেক মানুষের ক্ষতি করেছে। কিন্তু ভেবে দেখুন, সেই সময় দূষণের মাত্রা একেবারে কম ছিল। গাড়িঘোড়া বন্ধ থাকায় দূষণ ছিল না বললেই চলে। এখন মাঝেমধ্যেই মনে হয়, এর চেয়ে লকডাউনটাই বোধহয় ভালো।
কেএএ/এমএস