করোনাকালীন মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন ২৮ বছরের সোহেল। কোনো কাজেই মন বসাতে পারছিলেন না। মানসিক অবসাদ থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছিলেন নিজেই। একদিন বিশ্বের অন্যতম সার্চ ইঞ্জিন গুগলে এ বিষয়ে পরামর্শ খুঁজতে লাগলেন। সেখানে এক জায়গায় দেখেন, উল বুনলে মানসিক অস্থিরতা কমে।
Advertisement
শুরু করলেন উল বোনা। সেখানেও সাহায্য করেছে প্রযুক্তি। ইউটিউব দেখে শিখেছেন উল বোনার কাজ। এ ছাড়া ঘরে মায়ের কাছ থেকেও সাহায্য নিয়েছেন। একের পর এক সোয়েটার বোনা শেষ করলেন। এরপর সেগুলোর ছবি পোস্ট করলেন নিজের ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে। এখন তিনি সফল উদ্যোক্তা।
বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা ২৮ বছরের তরুণ সোহেল নারগুন্ড। পেশায় একজন ইঞ্জিনিয়ার। তবে এখন তার পরিচয় একজন সফল উদ্যোক্তা। উল বোনার কথা বললে চোখের সামনে ভেসে ওঠে শীতের দুপুরে উল আর কাঁটা হাতে কোনো নারী বসে আছেন। তবে কাজ নিয়ে এই ‘লিঙ্গভেদ’ ভেঙেছেন সোহেল।
যখন করোনার ভয়াবহতা বিশ্বকে গ্রাস করেছে। সে সময় কাজ নিয়ে বেশ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন সোহেল। গুগলের পরামর্শে উল বোনার ব্যাপারটা মনে ধরে সোহেলের। ইউটিউবে একের পর এক ভিডিও দেখে উল বোনার চেষ্টা করতে থাকেন। কিনে ফেলেন উল আর কাঁটা। ভিডিও দেখতে দেখতে উল-কাঁটা দিয়ে এক একটি ছোট্ট ঘর বোনার জন্য বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে।
Advertisement
একদিন কাজ থেকে ফেরার সময় অনেক উলের গোছা কিনে ফেললেন সোহেল। এটা দেখে একটু অবাকই হয়েছিলেন বাড়ির লোকজন। কিন্তু তার মানসিক অবস্থার কথা জেনে কেউ কিছু বলতেন না। বরং কিছুদিন পর তারা লক্ষ্য করলেন, সোহেল বেশ ভালোই আছেন।
এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে গেল। একটি সোয়েটার বানিয়ে ফেললেন তিনি। নিজের হাতে বোনা প্রথম সোয়েটার উপহার দিলেন ছোট বোনকে। বড় ভাই এত সুন্দর সোয়েটার বানিয়েছেন! প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি সোহেলের কলেজপড়ুয়া বোন।
বন্ধুদের কাছে বড় ভাইয়ের দেওয়া উপহার দেখিয়েছিলেন বোন। এতেই একের পর এক বোনের বন্ধুর আবদার আসতে শুরু করে। সে-ই শুরু। তারপর হতাশা কাটানোর উপায় একরকম নেশার মতো হয়ে উঠলো। অফিসের কাজের সময় বাদে প্রায়ই উল নিয়ে বসে পড়তেন ইঞ্জিনিয়ার।
ভাই এত সুন্দর সোয়েটার বুনতে পারেন! ব্যবসা করলে কেমন হয়? এমন ভাবনা প্রথমেই আসে সোহেলের বোনের মাথায়। প্রস্তাব দেন সোহেলকে। দুই ভাই-বোন ভাবতে লাগলেন কী করবেন। ভাবতে ভাবতে নেটমাধ্যমে শুরু করেন নিজের হাতে তৈরি সোয়েটারের ব্যবসা। সোহেলের ইনস্টাগ্রাম পেজে রঙিন সোয়েটার, টুপি, দস্তানা দেখে আগ্রহ দেখান অনেকে।
Advertisement
এভাবেই শুরু সোয়েটারের ব্যবসা। অবসাদ ও উদ্বেগ কাটানোর উপায়ই এখন সোহেলের আরেকটি উপার্জনের পথ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি দিন দিন নেটমাধ্যমে সোহেলের ফলোয়ার সংখ্যাও বাড়ছে। কাজের প্রশংসা করে কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ইনস্টাগ্রাম পেজ তৈরি করেছিলেন সোহেল। সেখান থেকেই শুরু প্রথম বিক্রি। তার ইনস্টাগ্রাম পেজের নাম ‘দ্য রাফ হ্যান্ড নিটার’।
উলের সোয়েটারের ফ্যাশন কখনো পুরোনো হয়নি। বড় বড় শপিং মলগুলোয় বেশ চড়া দামে বিক্রি হয় হাতে বোনা এসব সোয়েটার। সেটি যদি অনলাইনে বিক্রি করা যায়, তাহলে ক্রেতা ঘরে বসেই কিনতে পারছেন। করোনা মহামারিতে অনলাইন শপিংয়ের অভ্যাসটি বেশ ভালোভাবেই পোক্ত হয়েছে সবার। তাই কিছু দরকার হলেই আগে অনলাইন সাইটে ঢুঁ মারেন যে কেউ।
প্রশংসা পাওয়ার পাশাপাশি কিছু কটু কথাও শুনেছেন সোহেল। অনেকে মনে করেন উল বোনা নারীদের কাজ। সোহেল মনে করেন, কোনো কাজই লিঙ্গভিত্তিক নয়। সোহেলের দাদিও খুব ভালো সোয়েটার বুনতে জানতেন। এখন আক্ষেপ হয়, কেন আগে দাদির কাছে সোয়েটার বানানো শিখলেন না।
সূত্র: হিন্দুস্থান টাইমস
কেএসকে/এসইউ/জিকেএস