জাতীয়

ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নে অর্থায়নই বড় চ্যালেঞ্জ

নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টাপ্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। এই শতবর্ষী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে বিশাল সুনীল অর্থনীতি ভোগ করতে পারবে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। এর মাধ্যমে একদিকে দেশ যেমন এগিয়ে যাবে, অন্যদিকে টেকসই উন্নয়নের পথও সুগম হবে। তবে শতবর্ষী এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রয়োজন। প্রতি ডলার ৮৫ টাকা ধরে বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ দাঁড়ায় তিন লাখ ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই বিশাল অর্থায়ন খুঁজে পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ বলে দাবি করেছেন উন্নয়ন সহযোগীরা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৬ মে) ‘বাংলাদেশ ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স: ইস্যুজ অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অব ইমপ্লিমেন্টেশন’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও উন্নয়ন সহযোগীরা এই মন্তব্য করেন। এর আগে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, আমি বিশ্বাস করি ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারবো। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর ওপরে ভরসা রাখুন। কারণ আমাদের দায়িত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সাজানো সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়া। আর এটা সম্ভব ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী সবসময় চিন্তা করেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কিছু করার। সেই হিসেবে এটা একটা ভালো প্রকল্প।

তিনি বলেন, ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নের মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতি কিংবা ‘ব্লু ইকোনমি’ ঘরে তুলতে পারবো। সুনীল অর্থনীতি হচ্ছে সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি। সমুদ্রের বিশাল জলরাশি ও এর তলদেশের বিভিন্ন প্রকার সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। সমুদ্র পৃথিবীর অন্যতম মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উৎস। সমুদ্র থেকেই মাছ কিংবা মৎস্য সম্পদের মাধ্যমে খাবার চাহিদা ও অন্যান্য অর্থনৈতিক চাহিদা মেটানো সম্ভব। মানুষ এবং পণ্য পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয় সমুদ্র। এছাড়া সমুদ্র নানা ধরনের প্রাকৃতিক খনিজসম্পদ যেমন- বালি, লবণ, কোবাল্ট, কপার ইত্যাদির আধার। এসবের সমন্বয়ে আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।

Advertisement

অনুষ্ঠানে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, জলবায়ু ক্ষতি না করে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু করতে চাই। আর এটাই হলো ডেল্টাপ্ল্যান। আমাদের মাটি, পানি ও বায়ুর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশ এগিয়ে যাবে। আমাদের সরকারের অন্যতম লক্ষ্য কেউ দরিদ্র থাকবে না, কেউ ভূমিহীন থাকবে না। ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নে সরকারের সব উদ্দেশ্য সফল হবে। এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও জলবায়ু ইস্যু যথাযথভাবে মোকাবিলা করতে পারবো।

পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ডেল্টাপ্ল্যান আমাদের স্বপ্ন। এটা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে এই বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থায়ন একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই ডেল্টপ্ল্যানের বিষয়ে দেশবাসীকে আরও সচেতন করতে হবে। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে হবে। ডেল্টাপ্ল্যানের স্বপ্নের বীজ তাদের হৃদয়ে বপন করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ ও ভুটান) মার্সি টেম্বন বলেন, ডেল্টাপ্ল্যান বাস্তবায়নে বিশাল অর্থায়ন প্রয়োজন। এই অর্থায়ন জোগান দেওয়া ডেল্টপ্ল্যানের সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। এটা বাস্তবায়নের করলে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য বিরাট মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই শতবর্ষী পরিকল্পনা একাধিক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ বাস্তবায়ন করবে। তবে এজন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সমন্বয় প্রয়োজন।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- জাইকার প্রধান প্রতিনিধি ইউহো হায়াকাওয়া, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. কাওসার আহমেদ প্রমুখ।

Advertisement

বন্যা, নদীভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে আলোচিত ‘ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০’ মোট ছয়টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত ও ব-দ্বীপ সংক্রান্ত অন্যান্য সমস্যা মোকাবিলা করতে চায় সরকার। দীর্ঘমেয়াদে পানি ও খাদ্যনিরাপত্তা, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ সরকার ডেল্টাপ্ল্যান-২১০০ শীর্ষক এই দীর্ঘমেয়াদি (১০০ বছর) সমন্বিত মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

এমওএস/কেএসআর/এমএস