একসময়ে কলমিশাক শুধু গ্রাম-গঞ্জের অল্পসংখ্যক মানুষ খেত। এখন শহুরে মানুষসহ দেশের প্রায় সব এলাকায় এ শাক বেশ জনপ্রিয়। কলমি অর্ধ-জলজ উষ্ণমণ্ডলীয় লতা। বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে দেশে কলমিশাকের চাষ দিন দিন বাড়ছে।
Advertisement
জলাশয়ে জন্মানো কলমিশাক স্থানীয় জাতের। এর উৎপাদন কম। তাই বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ১৯৮৩ সালে একটি উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছে। নাম গিমাকলমি-১। এর ফলন বেশ ভালো। গিমাকলমি সারাবছরই চাষ করা যায়। তবে চৈত্র (মধ্য মার্চ-মধ্য এপ্রিল) থেকে শুরু করে শ্রাবণ (মধ্য জুলাই-মধ্য আগস্ট) পর্যন্ত বীজ বপনের উওম সময়।
প্রথমে ৫-৬টি চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে। লাইন করে এবং ছিটিয়ে উভয় পদ্ধতিতে বীজ বোনা যায়। তবে লাইনে বীজ বপন করলে যত্ন নিতে সহজ হয়। লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ২০ সেন্টিমিটার (৮ ইঞ্চি) এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব হবে ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি)। একসঙ্গে অন্তত ২টি বীজ বোনা ভালো। তবে একাধিক চারা জন্মালে ১টি রেখে বাকিগুলো কেটে দিতে হবে। শতাংশ প্রতি বীজ প্রয়োজন হবে প্রায় ৪০-৫০ গ্রাম।
আশানুরূপ ফলন পেতে প্রয়োজন সুষম সার ব্যবহার। মাটির উর্বরতা বিবেচনা করে সার দিতে হয়। এ জন্য মাটি পরীক্ষার মাধ্যমে সার দেওয়া উচিত। আর তা যদি সম্ভব হয়, তাহলে স্বাভাবিক মাত্রায় দিতে হবে। শতাংশ প্রতি যে পরিমাণ সার প্রয়োজন তা হলো- ইউরিয়া ৫৬০-৬৫০ গ্রাম, টিএসপি ৪০০-৪৯০ গ্রাম, এমওপি ৪০০-৪৯০ গ্রাম এবং জৈব সার ৩২-৪০ কেজি। ইউরিয়া বাদে বাকি জৈব ও অজৈব সার শেষ চাষের সময় মাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হয়। প্রতিবার পাতা সংগ্রহের পর ইউরিয়া সার তিন কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হবে।
Advertisement
অন্য যে কোনো ফসলের ন্যায় কলমিশাকের জমিতে আগাছা জন্মাতে দেওয়া যাবে না। কারণ আগাছা খাবারের সঙ্গে ভাগ বসায়। পাশাপাশি রোগ-পোকা আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করে। তাই আগাছা দেখা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তুলে ফেলতে হবে।
শুষ্ক মৌসুমে অবশ্যই সেচ দিতে হবে। বর্ষাকালে সাধারণত সেচের দরকার হয় না। তবে ওই সময় অনাবৃষ্টি হলে সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।
কলমিশাকে রোগ-পোকা তেমন হয় না বললেই চলে। তবে কিছু পোকার আক্রমণ হতে পারে। যেমন- বিটল, বিছা পোকা, ঘোড়া পোকা। এসব পোকা দেখা দিলে হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে হবে। তা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করে দমন করতে হবে। জমি বেশি স্যাঁতস্যাঁতে থাকলে গোড়া পচে যেতে পারে। ড্যাম্পিং অফ রোগের কারণে এমনটি হয়। অনুমোদিত ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
বীজ বপনের ২৫-৩০ দিনের মধ্যে শাক সংগ্রহের উপযুক্ত হয়। প্রথম সংগ্রহের ৮-১০ দিন পরপর পাতা তোলা যাবে। শতাংশ প্রতি গড় ফলন প্রায় ১৬০-১৮০ কেজি।
Advertisement
তথ্যসূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস
এমএমএফ/এসইউ/জিকেএস