নানা প্রতিকূলতার মাঝেও দলের শক্তি আরো গতিশীল করতে কাউন্সিল করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের প্রধান বিরোধী শক্তি বিএনপি। তবে বড় দল হিসেবে কাউন্সিলের ঘােষণার পর সরগরম অবস্থা থাকার কথা থাকলেও উত্তাপ নেই দলটির নেতাকর্মীদের মাঝে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের ৯টি অঙ্গ ও দুইটি সহযোগী সংগঠনের সব কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এসব সংগঠনে নতুন কমিটি শিগগিরই করা হবে বলে মাসের পর মাস অতিবাহিত করা হচ্ছে। বারবার আশ্বাস দেয়ার পরও সংগঠনগুলোর কমিটি গঠন না করায় কাউন্সিলের সংবাদেও কোন উল্লাস নেই নেতাকর্মীদের মাঝে। এদিকে বিএনপির গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর জাতীয় কাউন্সিল করার কথা থাকলেও সর্বশেষ কাউন্সিল হয় ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। তবে ২০১২ সালের ডিসেম্বরে ৬ষ্ঠ কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও বিরোধী দল হিসেবে আন্দোলনে ব্যস্ততা ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতির কারণে যথাসময়ে কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে একবার কাউন্সিল আয়োজনের প্রাথমিক প্রস্তুতি নিলেও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশি অভিযানসহ দেশের সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরে আসে দলটি। তবে নির্বাচন কমিশনের বিধি মেনে ২০১৩ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়ে ২০১৪ সালের ৩১শে মে পর্যন্ত কাউন্সিল আয়োজনের সময় চায় দলটি। এর আগে ১৬ বছর পর ২০০৯ সালে অনুষ্ঠিত বিএনপির ৫ম জাতীয় কাউন্সিলে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল দলের গঠনতন্ত্রে। বাড়ানো হয়েছিল স্থায়ী কমিটিসহ প্রতিটি কমিটির পরিধি। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের প্রস্তাব ও কাউন্সিলরদের অনুমোদনে খালেদা জিয়া আজীবন চেয়ারপারসন ও ভবিষ্যৎ নেতা তারেক রহমান পদাধিকার বলে স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কাউন্সিলররা সর্বসম্মতভাবে নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে। তিনি ওয়ান-ইলেভেনের দুঃসময়ের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে পূর্ণাঙ্গ ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের দায়িত্ব দেন। দলের নীতি-নির্ধারক স্থায়ী কমিটি পুনর্গঠন করা হলে জায়গা পান ১২ নতুন মুখ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩ বছরের জন্য ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে ৩৮৬ সদস্যের জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়। ৫ম জাতীয় কাউন্সিলের পর ২০১০ সালের ৩১শে জুলাই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে, ২০১১ সালের ২৩শে এপ্রিল মহানগর নাট্যমঞ্চ ও ২০১২ সালের ৮ই এপ্রিল ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে দলটির জাতীয় নির্বাহী কমিটির তিনটি সভা হয়। এদিকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকারের বছর পূর্তিতে জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে দফায় টানা হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচির কারণে মামলার জালে জড়িয়ে পড়েন বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে তৃণমূল নেতারা। দলের স্থায়ী কমিটির কয়েকজন সদস্যসহ সারা দেশে অন্তত শতাধিক কাউন্সিলর বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছেন। এছাড়া সরকারি দলের হামলা, পুলিশি অভিযানে দলের অনেক নেতাকর্মী নিহত ও গুরুতর আহত হয়েছেন বলেও অভিযোগ বিএনপির। এমন পরিস্থিতিতে কাউন্সিলের মাধ্যমে ফের সাংগঠনিকভাবে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বিএনপি। এজন্য সরকারে দুই বছর পূর্তিতে কঠোর কোন কর্মসূচি পালন করেনি দলটি। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ১৯ মার্চ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল সফল করতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, উপদেষ্টা এবং যুগ্ম-মহাসচিব পর্যায়ের নেতাদের প্রধান করে ১২টি উপ-কমিটি গঠন করা হয়েছে।কাউন্সিল উপলক্ষে জেলা ও মহানগরে ১৫ ও ১৬ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা হওয়ার কথা থাকলেও পরে তা স্থগিত করা হয়। তবে বর্ধিত সভা কবে হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।কাউন্সিল সফল করতে ১২টি উপ-কমিটির মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভ্যর্থনা কমিটির প্রধান। ড্রাফট কমিটিতে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, স্বেচ্ছাসেবক ও শৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, গঠনতন্ত্র সংশোধন সংক্রান্ত কমিটিতে সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, প্রচার বিষয়ক কমিটিতে রয়েছেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, অর্থ বিষয়ক কমিটিতে উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আব্দুল আউয়াল মিন্টু, আপ্যায়নে ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, প্রকাশনায় ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, দফতর ও যোগাযোগ বিষয়ে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, জরুরি চিকিতৎসাসেবায় উপদেষ্টা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন দলের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক গাজী মাজহারুল আনোয়ার।দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কাউন্সিলের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা উপ-কমিটির আহ্বায়ক আ স ম হান্নান শাহ বলেন, সফলভাবেই কাউন্সিল করা যাবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আমরা এবার ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছি।দলের আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনা প্রধান লে. জে. (অব) মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, কাউন্সিল করার তো বিকল্প নেই। এজন্য মার্চ মাসে কাউন্সিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।কাউন্সিলে যোগ্য ত্যাগী ও পরিশ্রমীরা স্থান পাবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ক্রমান্বয়ে দলের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন করে পূর্ণ শক্তি নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় থাকবে বিএনপি।এমএম/এসকেডি/এআরএস/এমএস
Advertisement