রাজধানীর মালিবাগের বাসিন্দা নাহিদ হাসান। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের গ্রাহক তিনি। নিয়মিত বিল পরিশোধ করে আসছেন। মঙ্গলবার (২৪ মে) হঠাৎ তার মোবাইলে তিতাস গ্যাস থেকে এসএমএস আসে। সেখানে এক লাখ টাকার গ্যাস বিল বকেয়া জানিয়ে দ্রুত তা পরিশোধের তাগিদ দেওয়া হয়। মেসেজ দেখে নাহিদের চোখ ছানাবড়া। দ্রুত ছুটে যান তিতাস গ্যাসের মতিঝিল আঞ্চলিক কার্যালয়ে।
Advertisement
তবে তিতাসের কার্যালয়ে এসে জানতে পারেন, তার কোনো বকেয়া নেই। তিতাস গ্যাসের নতুন সফটওয়্যার ট্রায়াল দিতে গ্রাহকদের এমন এসএমএস পাঠানো হচ্ছে। বিল বকেয়া নেই জেনে স্বস্তি মিললেও হয়রানির শিকার হওয়ায় ক্ষোভ জানান নাহিদ।
শুধু নাহিদ নন, তিতাস গ্যাসের মতিঝিল আঞ্চলিক কার্যালয়ের অন্তত ৫০ হাজার গ্রাহকের কাছে এমন ‘ভুয়া’ এসএমএস পাঠানো হয়েছে। বকেয়ার অঙ্কও মনগড়া, যা দেখে অনেকেই ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে ছুটে এসেছেন তিতাসের মতিঝিল কার্যালয়ে।
তবে তিতাসের কর্মকর্তারা বলছেন, ইচ্ছে করেই এমন এসএমএস দেওয়া হয়েছে। নতুন সফটওয়্যার ট্রায়ালের সময় সবার কাছে এমন এসএমএস চলে গেছে। এ সফটওয়্যারে আপডেট তথ্য নেই সেজন্য এটা কোনো সমস্যা নয়।
Advertisement
তিতাস সূত্রে জানা গেছে, মতিঝিল আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতায় তিতাসের গ্রাহক ৭২ হাজার। তাদের মধ্যে যাদের মোবাইল নম্বরসহ তথ্য সফটওয়্যারে সেভ করা আছে, তাদের কাছে এ ধরনের এসএমএস গেছে। সফটওয়্যারে অন্তত ৫০ হাজার গ্রাহকের নম্বর সেভ। অর্থাৎ এ ৫০ হাজার গ্রাহকের মোবাইলে বকেয়ার এসএমএস গেছে।
বুধবার (২৫ মে) রাজধানীর মতিঝিলে তিতাস গ্যাসের আঞ্চলিক কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, বিল বকেয়া এমন এসএমএস পেয়ে অসংখ্য গ্রাহক তিতাস গ্যাসের মতিঝিল কার্যালয়ে ছুটে এসেছেন। বিগত কয়েক মাসের বিল পরিশোধের রশিদ নিয়ে এসেছেন তারা। জরুরি কাজ ফেলে এসেছেন অনেকে। বকেয়া বিলের এমন ভুয়া এসএমএস দেওয়ায় অনেক গ্রাহকই কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন। এনিয়ে চলছে গ্রাহক-কর্মকর্তাদের বচসা।
রামপুরা থেকে এসেছেন সাঈদ বিন নাবিদ। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার কোনো বিল বাকি নেই। তবুও এক মাসের বিল বকেয়া আছে বলে মেসেজ দিয়েছে তিতাস। অফিস রেখে তিতাসের এখানে ছুটে এসেছি। বিল বাকি নেই, তবুও এসএমএস এসেছে। এটা তো চরম হয়রানি।’
জানতে চাইলে তিতাস গ্যাসের মেট্রো ঢাকা রাজস্ব বিভাগ-৩-এর উপ-মহাব্যবস্থাপক এ কে এম মাহবুব আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা কোনো সমস্যা নয়। সবই ঠিক আছে। আমরা ইচ্ছে করেই মেসেজটা পাঠিয়েছি। নতুন সফটওয়্যারে তথ্য আপডেটের জন্য ট্রায়াল দিয়েছি।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘গ্রাহকদের বকেয়া থাকুক বা না থাকুক, ট্রায়াল মেসেজ সব গ্রাহকের কাছেই গেছে। যারা বিল পরিশোধের রশিদ নিয়ে আসছেন, তাদের রশিদ বই দেখে বিল পরিশোধের তথ্য আপডেট করে দেওয়া হচ্ছে।’
মাহবুব আলী বলেন, ‘গ্রাহকরা তো ব্যাংকে বিল পরিশোধ করেন। ব্যাংক থেকে আমাদের কাছে তথ্য পাঠানো হয়। তারপর আমরা আপডেট করি। ব্যাংক থেকে দীর্ঘদিন আপডেট না দেওয়ায় আমাদের সফটওয়্যারেও আপডেট দেওয়া হয়নি। ফলে আমাদের একচেটিয়াভাবে গ্রাহকদের এসএমএস দিতে হয়েছে।’
এদিকে, এত সংখ্যক গ্রাহকের কাছে এসএমএস যাওয়ায় তিতাস কার্যালয়ে হট্টগোল হতে পারে, এমন শঙ্কায় মাইকিং করে গ্রাহকদের সচেতন করছে তিতাস।
তিতাসের গণসংযোগ কর্মকর্তা মির্জা মাহবুব হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মাইকিং করেছি। গ্রাহকদের সচেতন করছি। অনেক সময় বিল পরিশোধ করলেও তথ্য আপডেট করা হয় না। ফলে সফটওয়্যার থেকে মেসেজ চলে গেছে।’
এমআইএস/এএএইচ/জেআইএম