বিশেষ প্রতিবেদন

তিস্তা এখন ধূধূ বালুচর!

শীতের শুরু থেকেই তিস্তার পানি শুকিয়ে যাওয়ায় এখন তা ধূধূূ বালুচরে পরিণত হয়েছে। যেখানে তিস্তা নদীর মন মাতানো ঢেউ ছিল আজ তিস্তা পরিণত হয়েছে ধূ-ধূ বালুচরে। দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের ব্যারাজটি দাঁড়িয়ে আছে বালুচরে। এতে নদীনির্ভর মানুষগুলো জীবিকার অভাবে পথে বসেছে। তেমনি সেচনির্ভর হাজার হাজার কৃষকের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পের কার্যক্রমের লক্ষ্যমাত্রা এ বছর সর্বনিম্ন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিবছর যে হারে পানির প্রবাহ কমে আসছে তাতে করে শিগগিরই কাঙ্ক্ষিত পানি চুক্তি সম্পন্ন না হলে মরা খালে পরিণত হতে পারে বহুল আলোচিত তিস্তা নদী। আর সেই সঙ্গে তিস্তা নদীর সঙ্গে জড়িয়ে থাকা উত্তর জনপদের জীব বৈচিত্র মারত্মক হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্যারাজের ৫২টি গেটের মধ্যে ৪৪টি বন্ধ করে উজানের পানি আটকানোর চেষ্ঠা করছেন কর্তৃপক্ষ। ৮টি গেট খুলে দিয়ে সেচ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।চলতি সপ্তাহে পানি প্রবাহ মাত্র ১ হাজার কিউসেকে নেমে আসায় সেচের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাই বাড়ছে। আর তাই গত বছরের তুলানায় সেচ প্রদানে জমির পরিমাণ ১৮ হাজার ৫ শত হেক্টর কমিয়ে এনে এ বছর মাত্র ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।চলতি মৌসুমে তিস্তা ব্যারাজের সেচ ক্যানেলের মাধ্যমে শুধুমাত্র নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকাসহ কিছু অংশে পানি সরবরাহ করা হবে। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, গত বছর ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমি সেচের টার্গেট নেয়া হলেও পানি সল্পতার কারণে মাত্র ৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে সেচ সররবাহ করা হয়েছিল। এর ফলে সেচ ক্যানেলের আওতায় ব্যাপক জমির ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিকল্প পদ্ধতিতে সেচ প্রদান করতে গিয়ে কৃষকের ২/৩ গুণ খরচ বেড়ে যায়। এ বছরও তিস্তার পানি যেভাবে শুকিয়ে আসছে তাতে করে কৃষকরা তাদের সেচ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।এই অবস্থায় পানির ন্যায়্য হিস্যা আদায় করে তিস্তা নদী বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, দিনাজাপুরসহ সেচ নির্ভর মানুষজন। তিস্তার বুক জুড়ে জেগে উঠা ধূধুূ বালুচরে স্থানীয়দের লাগানো বিভিন্ন সবজি প্রয়োজনীয় সেচের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। তিস্তা নদীতে মাছ ধরে বিক্রি করে জীবনযাপন করতো এ অঞ্চলের জেলেরা। তারাও আজ কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।তিস্তা পাড়ের জেলে আকবর আলী জাগো নিউজকে জানান, বর্ষার সময় মাছ ধরে পরিবারসহ মোটামুটি ভালোই চলছিল। এখন নদীতে পানি নেই, মাছও নেই, তাই খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছি। তাই যে করেই হোক তিস্তার পানি আমরা চাই।তিস্তা তীরবর্তী লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার কৃষক মনিরুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, তিস্তা নদীতে পানি না থাকায় ধান, ভুট্টা ও আলুসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত পানির অভাবে মরে যাচ্ছে। এ দুভোর্গের শিকার হয়ে আমরা তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিটি প্রাণের দাবি বলে মনে করি।তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, প্রয়োজনের তুলনায় তিস্তার পানি প্রবাহ অনেক কম। যে পরিমাণ পানি আছে তা দিয়ে সেচ প্রকল্পের আওতায়  নীলফামারী জেলায় সেচ দেয়া কষ্টকর হবে। রবিউল হাসান/এসএস/পিআর

Advertisement