ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারি বেকার নার্স ফরিদা আক্তার। ৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় এক কাপড়ে রোদে পুড়ছেন, বৃষ্টিতে ভিজছেন, শীতের রাতে ঠাণ্ডায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। নাওয়া-খাওয়া ভুলে আন্দোলনরত শত শত নার্সের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে তুলছেন রাজপথ। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় বাংলাদেশ ডিপ্লোমা বেকার নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিডিবিএনএ) ডাকে চলমান লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে যোগ দিতে দুই দিন আগে রাজশাহী থেকে ঢাকায় এসেছেন। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেয়ে কিছুটা হতাশ ফরিদা আক্তার।বৃহস্পতিবার দুপুরে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে ফরিদা জানান, রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসা, খাবার বাবদ ইতোমধ্যেই তিন হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। যে পরিমাণ টাকা নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন তা শেষ হওয়ার পথে। তবে পকেট শূন্য হলেও আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত কিছুতেই বাড়ি ফিরে যাবেন না।এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ফরিদা কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ২০০৬ সালে অর্থাৎ দশ বছর আগে ডিপ্লোমা নার্সিং পাস করি। ইতোপূর্বে সরকারিভাবে নার্স নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাচ, মেধা ও সিনিয়রটির ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়ার ফলে সরকারি চাকরি নামক সোনার হরিণের নাগাল পাননি। আগের নিয়মে মাত্র ২৪২ জনের সিরিয়ালে তিনি আছেন। সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় দশ বছর অপেক্ষার পর এখন পরীক্ষা দিয়ে চাকরি নেয়ার নতুন সরকারি শর্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। বার বার একই প্রশ্ন রেখে বলছিলেন, আমাদের প্রতি কেন এ অবিচার করছে সরকার। ফরিদা আক্তারের মতো এ প্রশ্ন আন্দোলনরত সকল নার্সের। অবস্থান ধর্মঘট কর্মসূচিতে শত শত নার্সের গগণবিদারি স্লোগানে রাজপথ সরব হলেও নীরব সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিডিবিএনএ সভাপতি রীনা আক্তার জাগো নিউজকে বলেন, আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না। প্রয়োজনে আমরণ অনশন কর্মসূচি পালন শুরু করবেন। তিনি আরো জানান, দেশে নার্স সংকট রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার নতুন নার্স নিয়োগের নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সেবা পরিদফতরের এক শ্রেণির অর্থলোভী শীর্ষ কর্মকর্তারা চাকরির নামে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়ার হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর অপচেষ্টা করছেন। কিন্তু বেকার নার্সরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে আগের নিয়মে অর্থাৎ ব্যাচ মেধা ও সিনিয়রটির ভিত্তিতে নার্স নিয়োগ দিতে সরকারকে বাধ্য করবেন। সালমা জাহান। রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে সিনিয়র স্টাফ নার্স হিসেবে কর্মরত থাকলেও ডিউটি শেষ করেই আন্দোলনে যোগদিতে প্রতিদিন ছুটে যান প্রেসক্লাবে। রাতেও সেখানে অবস্থান করছেন তিনি। তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা দাবি করে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশে ১৮ হাজার বেকার নার্স রয়েছে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হলে বহু সিনিয়র নার্স চাকরি বঞ্চিত হবেন। ফলে যেকোনো মূল্যে আন্দোলন সফল করতে তারা বদ্ধপরিকর বলে মন্তব্য করেন তিনি।সেবা পরিদফতরের পরিচালক নীলুফার ফারহাদের কাছে আন্দোলনরত নার্সদের ব্যাপারে তাদের নীরবতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, আন্দোলনকারী নার্সদের সমস্যা সমাধানে স্বাস্থ্য সচিবসহ অন্যান্যরা খুবই আন্তরিক। তিনি বুধবার আমাকেসহ দুইজন উপসচিবকে প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তায় আন্দোলনরত নার্সদের সঙ্গে আলোচনা করতে পাঠান। আমরা তাদের বলেছি সমস্যা সমাধানে কাজ চলছে। কিন্তু তারা লিখিত নিশ্চয়তা চায়। এডহক ভিত্তিতে আগের নিয়মে পরীক্ষা ছাড়া নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নার্সদের এ দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এডহক ভিত্তিতে একবারই ছাড় দেয়া যায়, বার বার না। তিনি আরো বলেন, একটি মহল বেকার নার্সদের উস্কানি দিচ্ছে। তারা নার্সিং সেক্টরকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে।এমইউ/এসএইচএস/এএইচ/পিআর
Advertisement