ফেনীর আলোচিত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একরামুল হক একরাম হত্যার আট বছর পূর্ণ হয়েছে আজ ২০ মে। ২০১৪ সালের এ দিনে তৎকালীন ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক একরামকে ফেনীর বিলাসী সিনেমা হলের সামনে গুলি করে ও পুড়িয়ে হত্যা করে নিজ দলীয়রা।
Advertisement
ফেনী জেলা জর্জ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাফেজ আহাম্মদ জাগো নিউজকে বলেন, নিম্ন আদালতে রায় ঘোষণার পর নিজেদের নির্দোষ দাবি করে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন কারাগারে থাকা ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ আসামি। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় উচ্চ আদালতে ডেথ রেফারেন্সের শুনানিও করা যাচ্ছে না। উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তি ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি সম্পন্ন হওয়ার পরই রায় কার্যকর হবে।
২০১৮ সালের ১৩ মার্চ চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায়ে ৩৯ জন আসামির মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। হাইকোর্টে আসামিদের আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ডেথ রেফারেন্সের শুনানি আটকে আছে। এতে রায় বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা সৃষ্টি হয়েছে।
ফেনী জেলা জর্জ আদালত, আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ২০ মে ফেনী শহরের জিএ একাডেমির বিলাসী সিনেমা হলের সামনে একরামুল হকের গাড়ির গতিরোধ করা হয়। একরামকে কুপিয়ে, গুলি করে ও গাড়িসহ পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার রাতে তার ভাই রেজাউল হক বাদী হয়ে এ ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। তৎকালীন পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ মামলায় তদন্ত শেষে একই বছরের ৩০ আগস্ট ৫৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
Advertisement
আলোচিত এ মামলায় গ্রেফতার ১৬ জন আসামি আদালতে ঘটনায় জড়িত ছিলেন মর্মে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আমিনুল হক আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ৫৬ জন আসামির মধ্যে ৩৯ জনের ফাঁসির আদেশ ও ১৬ জনকে খালাস দেওয়া হয়। এদের মধ্যে সোহেল নামের এক আসামি রায় ঘোষণার আগেই র্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান।
বর্তমানে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৩৯ আসামির মধ্যে ২২ জন কারাগারে রয়েছেন। বাকি ১৭ জনের মধ্যে আট আসামি জামিনে গিয়ে পলাতক এবং ৯ আসামি ঘটনার শুরু থেকেই পলাতক রয়েছেন।
বর্তমানে এ মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে রয়েছেন ২২ আসামি। তারা সবাই খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। এরা হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির আদেল, ফেনী পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল্লাহিল মাহমুদ শিবলু, সাজ্জাদুল ইসলাম পাটোয়ারী সিফাত, আবু বক্কর সিদ্দিক, মো. আজমির হোসেন রায়হান, মো. শাহজালাল উদ্দিন শিপন, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ওরফে আজাদ, কাজী শানান মাহমুদ, মীর হোসেন আরিফ ওরফে নাতি আরিফ, আরিফ ওরফে পাঙ্কু আরিফ, রাশেদুল ইসলাম রাজু, মো. সোহান চৌধুরী, জসিম উদ্দিন নয়ন, নিজাম উদ্দিন আবু, আবদুল কাইউম, নুর উদ্দিন মিয়া, তোতা মানিক, মো. সজিব, মামুন, রুবেল, হুমায়ুন ও টিপু।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে জামিনে গিয়ে পলাতক আট আসামি হলেন- ফুলগাজী উপজেলা আওয়ামীলীগের তৎকালীন যুগ্ম-সম্পাদক জাহিদ চৌধুরী, জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক লায়লা জেসমিন বড় মনির ছেলে আবিদুল ইসলাম, এমরান হোসেন রাসেল, জাহিদুল হাসেম সৈকত, চৌধুরী মোহাম্মদ নাফিজ উদ্দিন অনিক, জিয়াউর রহমান বাপ্পি, আরমান হোসেন কাউসার ও জসিম উদ্দিন।
Advertisement
এছাড়া এ মামলায় এখনো ৯ জন আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করতে পারেনি। তারা শুরু থেকেই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন। এরা হলেন- ইসমাইল হোসেন ছুট্টু, কফিল উদ্দিন মাহমুদ আবির, রাহাত মোহাম্মদ এরফান আজাদ, শফিকুর রহমান, একরাম হোসেন, মোসলেহ উদ্দিন আসিফ, মহিউদ্দিন আনিছ, টিটু ও বাবলু।
মামলাটির রায় ঘোষণাকালে খালাস পাওয়া ১৬ জন হলেন- বিএনপি নেতা মাহতাব উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী মিনার, পৌর যুবলীগের সাবেক যুগ্ম-আহবায়ক জিয়াউল আলম মিস্টার, আওয়ামী লীগ নেতা বেলাল হোসেন পাটোয়ারী ওরফে টুপি বেলাল, মো. আলমগীর ওরফে আলাউদ্দিন, আবদুর রহমান রউপ, সাইদুল করিম পবন ওরফে পাপন, জাহিদ হোসেন ভূইয়া, ইকবাল হোসেন, মো. শাখাওয়াত হোসেন, শরিফুল ইসলাম পিয়াস, কালা মিয়া, নুরুল আবসার রিপন, মো. ইউনুস ভূইয়া শামীম ওরফে টপ শামীম, মো. মাসুদ, কাদের ও ফারুক।
পলাতক আসামিদের বিষয়ে ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নিজাম উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘একরাম হত্যা মামলার ১৭ আসাকে গ্রেফতারে সোর্স নিয়োগসহ যাবতীয় প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে আইনশৃংখলা বাহিনী।’
নুর উল্লাহ কায়সার/এসজে/জিকেএস