ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে চুয়াডাঙ্গায় টানা বৃষ্টির কারণে অনেক কৃষকের বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। টানা বৃষ্টির পর কৃষকরা ধান রক্ষা করতে পারলেও ধানের খড় সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। মাঠেই পচে নষ্ট হয়েছে গবাদি পশুর প্রধান খাদ্য খড়।
Advertisement
কৃষকরা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে না থাকার কারণে আগেভাগে ধান হেফাজত করতে ব্যস্ত ছিলেন তারা। তাই খড়ের দিকে খুব একটা নজর দিতে পারেননি। এ কারণে কৃষকদের কাছে গরুর খাদ্য খড় মজুত নেই। ফলে আগামী ১-২ মাস পরই এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন গরু পালনকারীরা। গৃহপালিত এসব গবাদি পশুর খাদ্যের যোগানে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। প্রাণিসম্পদ বিভাগও আশঙ্কা করছে কৃষকরা খড় সংরক্ষণ না করতে পারায় আগামীতে এলাকায় গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিতে পারে।
চুয়াডাঙ্গার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে রয়েছে দেশি ও বিদেশি জাতের ২ থেকে ৩টি করে গরু। এমন কোনো বাড়ি নেই যেখানে গরু-বাছুর নেই। এছাড়া জেলায় প্রায় সাত শতাধিক ছোট-বড় গরুর খামার রয়েছে। কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে মৌসুমী খামারিসহ ব্যবসায়ীরাও গরু পালন করে থাকেন। এসব গবাদি পশু প্রতিপালনে খোলা মাঠে বেঁধে ঘাস খাওয়ানো হয়।
কিন্তু কিছুদিন আগে টানা বৃষ্টির কারণে পানিতে তলিয়ে গেছে মাঠ। ফলে দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্যাভাব। এছাড়া বেড়েছে নেপিয়ার ঘাসের দামসহ কেনা গো-খাদ্যের দাম। এ কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন গৃহপালিত পশু মালিকরা।
Advertisement
গরুগুলো বাঁচাতে নানা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মালিকরা। কেউ কেউ গরুর খাদ্য যোগানে ব্যর্থ হয়ে কম দামে গরু বিক্রি করে দেবেন বলেও সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এতে করে ক্ষতির শিকার হবেন গরু পালনকারীরা।
সরেজমিনে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা, আলমডাঙ্গা উপজেলা, দামুড়হুদা উপজেলা এবং জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে পানিতে খড় নষ্ট হওয়ার চিত্র দেখা গেছে।
দামুড়হুদা উপজেলার জয়রামপুর গ্রামের কৃষক ও গরু পালনকারী হামিদুল ইসলাম জানান, ধান কাটার মৌসুম শুরুর পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এতে ধানক্ষেতে পানি জমে গেছে। কৃষকরা ধান ঘরে তুলতেই ব্যস্ত। তাই খড়ের প্রতি তারা নজর দিতে পারেননি।
তিনি বলেন, কৃষকরা ধানক্ষেতেই খড় শুকাতেন। কিন্তু ক্ষেতে পানি থাকায় সেখানে খড় শুকানোর মতো পরিস্থিতি নেই। ধান কাটার সঙ্গে সঙ্গেই খড়গুলো রোদে শুকাতে দিলে এক-দু’দিনের মধ্যে শুকিয়ে যেত। পরে সেগুলো গো-খাদ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা হতো। যাদের গরু আছে তারা সেগুলো নিজেদের গরুকে খাওয়াতেন আর যাদের গরু নেই তারা সেগুলো বিক্রি করতে পারতেন।
Advertisement
জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের গরু পানলকারী বেল্টু বলেন, খড় ভিজলে বা পানিতে থাকার পরে সেই খড় শুকিয়ে নিলে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এজন্য সেগুলো খেতে দিলে গরু খায় না।
দেহাটি গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আকুল হোসেন জানান, কোরবানির ঈদের জন্য গরু এনে এক থেকে দেড় মাস পালনের পর বাজারে বিক্রি করে থাকি। গরু পালনের জন্য স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকেই খড় কিনি। কিন্তু এবার খড় সংরক্ষণ করতে না পেরে ধানক্ষেতেই খড় পচে নষ্ট হচ্ছে। তিনি আরও জানান, এক মাস আগে প্রতি কাউন (৫১২০ আটি) খড় ৩ হাজার টাকায় কিনতাম। কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে ৬-৭ হাজার টাকা হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে চুয়াডাঙ্গা জেলার চার উপজেলায় ৩৬ হাজার ৭০৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছিলেন কৃষকরা। কৃষকরা যদি ঠিকমতো বোরো ধানের খড় সংরক্ষণ করতে পারতেন তাহলে প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ৮ কাউন খড় হতো। কিন্তু অতি বৃষ্টির কারণে এবার প্রতি বিঘায় ২-৩ কাউনের ওপর খড় সংরক্ষণ করতে পারেননি কৃষকরা।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, কোরবানি ঈদ উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গাতে প্রায় আড়াই লাখ গরু পালন করা হয়েছে। এসব গরুর জন্য চুয়াডাঙ্গায় এবার খড়ের সংকট রয়েছে। এ কারণে অন্যান্য জেলা থেকে খামারিদের খড় সংগ্রহ করে গো-খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় খামারিদের খড় সংরক্ষণের জন্য উপদেশ দেওয়া হয়। কিভাবে খড় সংরক্ষণ করতে হবে সে প্রশিক্ষণও আমরা দিয়ে থাকি।
এফএ/এএসএম