কুমিল্লার দাউদকান্দিতে এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আগাম জাতের ভুট্টা কাটা শুরু হয়েছে। এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বাজারে প্রতি মণ ভুট্টা ১২০০-১৩০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
জানা যায়, উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ও ১টি পৌরসভায় গতবারের তুলনায় অনেক বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকেই আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মাঠে মাঠে ভুট্টার গাছগুলো দৃশ্যমান হয়ে উঠেছিল। বৈরি আবহাওয়া ও কালবৈশাখীর আঘাত থেকে মুক্ত থাকায় এবারে ভুট্টার কোনো ক্ষতি হয়নি। এ ছাড়া বোরো চাষের তুলনায় ভুট্টা চাষে কম খরচে লাভ অনেক বেশি। তাই এবার অনেক জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে।
উপজেলার বারপাড়া, দৌলতপুর, পাঁচগাছিয়া, মারুকা, মালিগাঁও, সুন্দলপুর, গোয়ালমারী, জিংলাতলী ও দাউদকান্দি উত্তর ইউনিয়নে ভুট্টা চাষ বেশি হয়েছে। উপজেলার মারুকা ইউনিয়নের চক্রতলা, মৈনগোর, ভরনপাড়া গোপালপুর ও পালপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের মাঠজুড়ে ভুট্টা আর ভুট্টা। প্রতিটি বাড়ির উঠানে, স্থানীয় স্কুলমাঠে ভুট্টা প্রক্রিয়াজাত করতে ব্যস্ত সবাই।
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানিয়েছে, গতবছর এ উপজেলায় যে পরিমাণ জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়েছিল। এবার তার চেয়ে অনেক বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। তথ্যমতে, এবার উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ভুট্টার চাষ হয়েছে ৭,৬০০ হেক্টর জমিতে।
Advertisement
উপজেলার চক্রতলা গ্রামের লিল মনি ও নারায়ণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার অনেক জমিতে ভুট্টা চাষ করেছি। আগাম জাতের ভুট্টা কাটাও শুরু করেছি। ভুট্টার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। বিঘাপ্রতি প্রায় ৩৫-৪০ মণ ফলন হচ্ছে। অন্যান্য বছরে সর্বোচ্চ প্রতি মণ ভুট্টা ৫০০-৬০০ টাকা করে বিক্রি করেছি। চলতি বছরের শুরুতে প্রতি মণ ভুট্টা ১২০০-১৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। ভালো দাম পাওয়ায় আমরা অনেক খুশি।’
চিনামূড়া গ্রামের আব্দুল আলী ও আলী হোসেন বলেন, ‘এবারে ভুট্টার যে বাম্পার ফলন হয়েছে, তাতে আমরা খুব খুশি।’ বিটেশ্বর ইউনিয়নের অনেক কৃষক জাগো নিউজকে জানান, ধান চাষের চেয়ে ভুট্টা চাষ বেশি লাভজনক। তাদের মতে, ধান চাষে একদিকে যেমন খরচ বেশি, অন্যদিকে ফলন কম। কিন্তু ভুট্টা চাষে ফলন বেশি। অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বেশি। এসব কারণে এখানে ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকের।
মোহাম্মদপুর গ্রামের ভুট্টা চাষি আলী হোসেন জানান, তিনি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ভুট্টার বীজ, সারসহ প্রয়োজনীয় পরামর্শ নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। তার ধারণা, প্রতিবিঘায় প্রায় ৪০ মণ করে ফলন হবে। তাতে ৫ বিঘা জমিতে তিনি শত মণ ভুট্টা পাবেন।
তিনি জানান, ৫ বিঘা জমিতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। আবহাওয়া যদি ভালো থাকে, তাহলে সব খরচ বাদ দিয়ে দেড় থেকে ২ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
Advertisement
দাউদকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারোয়ার জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার দাউদকান্দিতে অনেক বেশি ভুট্টা চাষ করা হয়েছে। মৌসুমের শুরু থেকে আবহাওয়া অনুকূল থাকায় ভুট্টা চাষে কোনো বিপর্যয় দেখা দেয়নি। এ ছাড়াও আমরা কৃষকদের উন্নত বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সব সময়ই উৎসাহ দিয়ে এসেছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মৌসুমের শুরু থেকেই কৃষকদের বিভিন্নমুখী পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তাদের পরামর্শ অনুযায়ী এসব প্রযুক্তি ব্যবহারে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হচ্ছে এবং রোগবালাই থেকে মুক্ত আছে।’
এমএমএফ/এসইউ/এমএস