২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা তৃতীয় দফা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। তাও দুই বছর অতিবাহিত হলো। দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই পিলখানা হত্যাযজ্ঞসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সচেষ্ট হতে হয় তাঁর মন্ত্রিপরিষদকে। তবে ক্ষমতায় আসার পর দেশের উন্নয়নে যে সব পদক্ষেপ জনগণের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রশংসনীয় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে তার মধ্যে শিক্ষা খাতে ঐতিহাসিক সংস্কার ও যুগান্তকারী পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের সাফল্য আকাশচুম্বী। তবে অধিকাংশ সংবাদপত্র বা মিডিয়ায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সেই সাফল্যের দৃষ্টান্তগুলো উপস্থাপন করা হয়ে থাকে।পক্ষান্তরে উচ্চ শিক্ষা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো তথা ছাত্র সংঘর্ষ, উপাচার্য অপসারণ প্রভৃতি খবরের ভিড়ে এ-স্তরে শেখ হাসিনা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো অনুচ্চারিত থেকে যায়। এজন্য উচ্চ শিক্ষায় দেশনেত্রীর অবদান পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। ৬ জানুয়ারি (২০১৬) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে স্বর্ণপদক বিতরণের সময় শেখ হাসিনা প্রতিটি জেলায় সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর কথার বাস্তব রূপ দেখা গেল চলতি মাসেই আরো ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন প্রদানের মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, এর আগে ২০১১ সালে ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ক্যাথলিক ফাদারদের পরিচালিত ‘নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়’ অন্যতম।ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দুই মেয়াদে সাত বছর অতিবাহিত করেছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনও এই সময় অতিক্রম করছে। গত সাত বছরে সরকারের সফল ও সার্থক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা সকলে অবগত রয়েছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রশাসনিক ও সরকারি পদক্ষেপের সাফল্যগাথা আমাদের অনেকেরই অজানা। বিশেষত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গত সাত বছরে প্রশাসনের সাফল্য ঈর্ষণীয়। নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপিত মুক্তবুদ্ধির পরিচর্যা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে বিদ্যাচর্চার নিরাপদ কেন্দ্রে পরিণত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। তবে ইতিবাচক অর্জনের পাশে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষ ও হতাহতের খবর এবং তাকে কেন্দ্র করে শিক্ষাকার্য ব্যাহত হওয়ার বিবরণ যথার্থ। জাহাঙ্গীরনগরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী আন্দোলনে ক্লাশ না হওয়া এবং বুয়েটের একটানা ৪৪দিন ক্লাশ বন্ধ থাকা কিংবা কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনা অবশ্যই উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের নেতিবাচক দিক। শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা বিরাজ করলে তা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি চরম হুমকি হিসেবে গণ্য হয়। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বন্দ্ব-বিবাদে শিক্ষকদের পদত্যাগের হুমকি, ক্লাস বর্জন, অবস্থান ধর্মঘট চলতে থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষার মান দুর্বল হয়ে পড়বে। সেশনজট বাড়বে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সমাজে খারাপ ধারণা তৈরি হবে। বর্তমানে পুরানো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে। নতুনগুলোতে রয়েছে আর্থিক দুর্বলতা ও শিক্ষক সংকট। কিছুদিন আগেও ঢাকার বাইরের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক একেবারেই মিলছে না বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মানসম্মত উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য সিনিয়র ও অভিজ্ঞ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ। আকর্ষণীয় বেতন-ভাতা দিয়ে ঢাকার বাইরে যেতে উৎসাহী করতে হবে তাঁদের।২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যোগ্য উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য নিয়োগ করা হয়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৬ সালের পরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নতুন উপাচার্য নিয়োগ দিয়েছিল। তারই ধারাবাহিকতায় জোট সরকারের আমলের দুর্নীতিবাজ ও ক্ষমতার অপব্যবহারকারী উপাচার্যদের সরে যেতে হয় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রীপরিষদের পরিচালনা শুরু হলে। বর্তমানে দেশে ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ৯০টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণের রীতি নেই। উচ্চ শিক্ষাকে ১৬ কোটি মানুষের কাছে পৌঁছানোর পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এবং দক্ষ জনগোষ্ঠী সৃষ্টির লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের সময় একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে; প্রক্রিয়াধীন রয়েছে আরো অনেকগুলো।উত্তরবঙ্গের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সুবিধার জন্য রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ও নেভাল একাডেমিসহ সামরিক প্রতিষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ ইউনির্ভাসিটি অব প্রফেসনালস, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়েছে। ঢাকার টেক্সটাইল কলেজকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নীত করা হয়েছে। কারিগরি তথা বস্ত্রখাতের উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশীয় বিশেষজ্ঞ তৈরির জন্যই এই প্রতিষ্ঠানটির গুরুত্ব অপরিসীম। তবে দেশের মধ্যে একাধিক বেসরকারি ডিজাইন ইনস্টিটিউট থাকলেও কোনো ‘ডিজাইন ও ফ্যাশন বিশ্ববিদ্যালয়ে’র পরিকল্পনা কেন গৃহীত হচ্ছে না এটা বোধগম্য হয় নয়। বস্ত্রখাতের বিশাল বাজার সত্ত্বেও এ ধরনের বিশেষায়িত উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব দুঃখজনক; যদিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে একাধিক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা প্রসারের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার রাঙ্গামাটিতে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছে। এছাড়াও আলেমা-ওলামা ও ইসলামি চিন্তাবিদদের দীর্ঘকালের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কুষ্টিয়া জেলার শিলাইদহ ও শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান সরকারের ‘ভিশন ২০২১’ অনুসারে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক ও ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈরের তালিবাবাদে একটি ‘ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ’ স্থাপনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বর্তমান সরকার। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে। খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল মেরিন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য চিন্তা-ভাবনা শুরু করা হয়েছে।|বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। সংকট তৈরি করা হয়েছিল অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। অধিভুক্ত কলেজগুলোকে দুর্নীতির আখড়া বানানো হয়েছিল। এমনকি সে সময়ের একজন সাবেক উপাচার্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই পরিস্থিতি পাল্টে গেছে বর্তমান সরকারের আমলে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্ন অঞ্চলে ভাগ করে এর কার্যকারিতা ও মানবৃদ্ধির কাজ চলছে। সময়মতো পরীক্ষা গ্রহণের চেষ্টা করা হচ্ছে অধিভুক্ত কলেজসমূহে।কলেজগুলোকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেবার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওইসব কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২লাখ। তাদের নিয়ে এর আগে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি; বর্তমানে বিধিবিধান তৈরি করে গতি আনা হয়েছে পরীক্ষা সংক্রান্ত ও অন্যান্য কার্যক্রমে। বেসরকারি কলেজে শিক্ষক নিয়োগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে পাঠানো হচ্ছে। তাছাড়া শিক্ষক নিবন্ধন প্রাপ্তরা ব্যতীত কেউ কলেজে নিয়োগও পাচ্ছেন না। অন্যদিকে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় একটি দূরশিক্ষণ নির্ভর ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এর প্রায় দেড় লাখ শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত ও ঝরে পড়া মানুষের মাঝে শিক্ষাদানের সুয়োগ সৃষ্টি ও বিশেষভাবে কর্মজীবীদের দক্ষতা এবং তাদের উচ্চ শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দেশে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করাই বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম লক্ষ্য।২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার শপথের পর থেকে এ পর্যন্ত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরিচালনাখাতে প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা ও উন্নয়ন খাতে প্রায় দু’হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন খাতের শতভাগ সরকারকেই বহন করতে হচ্ছে যদিও সেই বরাদ্দ গবেষণা পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। কারণ সরকারি বরাদ্দের বেশিরভাগ ব্যয় হয় সাড়ে এগার হাজার শিক্ষক এবং ১৬ হাজার কর্মকর্তা ও ১৮ হাজারের ওপর কর্মচারির বেতন-ভাতা দিতে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বর্তমান সরকারের সাত বছরে ব্যাপক গতি সঞ্চার হয়েছে। দেশে বর্তমানে ৯০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।পূর্বেই বলা হয়েছে ২০১৬ সালের শুরুতে অনেকগুলো আবেদন থেকে নতুন আরো ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এসব উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রত্যন্ত অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষার প্রসার ও বিস্তারে ভূমিকা রাখবে। আইন প্রণয়ন থেকে শুরু করে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার মান উন্নয়নে সচেষ্ট বর্তমান সরকার। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় ১৯৯২ এবং ১৯৯৮ সালের সংশোধিত আইন ত্রুটিপূর্ণ এবং অসম্পূর্ণ হওয়ায় ২০১০ সালে বেসরকারি আইন নতুনভাবে প্রণীত হয়েছে।নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের আলোকে উচ্চ শিক্ষার মান উন্নীতকরণসহ উচ্চ শিক্ষার ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে। এক্ষেত্রে তা প্রয়োগ করা যাচ্ছে, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য সকল শর্তপূরণের প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শর্তপূরণ করে মান অর্জন করেছে। শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নত করার লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। নিজস্ব ক্যাম্পসের জন্যও বলা হচ্ছে। অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় জমি কিনে প্রয়োজনীয় স্থাপনা নির্মাণ করে নিজস্ব ক্যাম্পাসে কার্যক্রম শুরু করেছে। আবার অনেকে ধীরে ধীরে জমি কিনছে, স্থাপনা করছে। এ ধরনের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুণগতমান নিশ্চিতকরণ ও তা বিশ্ব পর্যায়ে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০-এর আলোকে ‘অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল ফর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিজ ২০১২’ প্রবিধানমালা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। শীঘ্রই তা বাস্তবায়িত করা হবে। দু’একটি বাদে এতোদিন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয় প্রচলন ছিল না। বর্তমান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির অনুরোধ রক্ষা করেছে অনেকেই; স্নাতক ও স্নাতকোত্তর বিভাগে বাংলা ভাষা-সাহিত্য পড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে বিদেশি খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের স্থান ও পরিচালনা সংক্রান্ত প্রবিধানমালা প্রণয়নের কাজ চলছে।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা কর্মকাণ্ড নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। বর্তমান সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মান উন্নয়নে মনোযোগী হওয়ায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। হেকেপসহ দুটি প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গবেষণার জন্য ২০১২ সালে দেশের ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৬টি গবেষণা উপ-প্রকল্পে ১৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ প্রকল্পের অধীনে ২০১১ সালে ৯৩টি গবেষণা উপ-প্রকল্পে ১৮৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। দেশের উচ্চ শিক্ষাখাতে গবেষণায় এর আগে এতো বেশি বরাদ্দ আর কখনও দেওয়া হয়নি।গবেষণার ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির সংযুক্তি একটি অনিবার্য দিক। আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক যোগাযোগে উচ্চ গতিসম্পন্ন ডাটা যোগাযোগ নেটওয়ার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এ সরকারের আমলেই ইউজিসি ও পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী অব বাংলাদেশ-এর মধ্যে কোম্পানিটির দেশব্যাপী বিস্তৃত অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ার্ক ২০ বছরব্যাপী ব্যবহার বিষয়ে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি কার্যক্রমে অনলাইন পদ্ধতির ব্যবহার যুক্ত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৩৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ও এসএমএস-এর মাধ্যমে ভর্তির আবেদনপত্র ও ফি গ্রহণ করা হচ্ছে।শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ কিছু যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে দেশের উচ্চ শিক্ষা প্রত্যাশিত গতিতে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমান সরকারের সাত বছরে উচ্চ শিক্ষাঙ্গনের অশান্ত পরিস্থিতিকে দ্রুত স্বাভাবিক করে তোলা হয়েছে। সমাজ ও রাষ্ট্রের নেতৃত্ব অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে সুস্থ মানসিকতা ও উচ্চ মানসম্পন্ন মনন সৃষ্টি করা বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। মুক্তচিন্তার চর্চা, নিরাসক্তভাবে সত্যের অনুসন্ধানের মাধ্যমে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমস্যা সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তব্য। এসব লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম শ্রেণির বিদ্যাপীঠে পরিণত করতে সহায়ক হবে।লেখক : অধ্যাপক এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়এইচআর
Advertisement