ভারত গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পর আন্তর্জাতিক বাজারে সোমবার (১৬ মে) গমের দাম সর্বোচ্চ পরিমাণে বেড়েছে। বিশ্বব্যাপী সরবরাহ হ্রাস পাওয়ায় খাদ্য ব্যয়ের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
Advertisement
বিশ্বে গম কেনাবেচার অন্যতম বড় কেন্দ্র যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর বাজারে গমের মূল্যসূচক ৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা গত দুই মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনিতেই রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের ফলে চলতি বছর গমের দাম ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ইউরোপের এই দুই দেশ বিশ্বের গম রপ্তানির এক-তৃতীয়াংশ সরবরাহ করে।
অন্যদিকে চীনের পর গম উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে ভারত। গত বছর ৭০ লাখ টন গম উৎপাদন হয়েছে ভারতে। বাম্পার ফলনের কারণে বাজারের শূন্যতা পূরণ হয়েছে। তবে খারাপ আবহাওয়ার পরিস্থিতি অন্য রপ্তানিকারকদের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। খাদ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে দেশীয় মুদ্রাস্ফীতি আট বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। ফলে সম্প্রতি গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত সরকার।
দিল্লি সরকার জানিয়েছে, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। তবে যেসব রপ্তানি আদেশ আগেই হয়েছে, সেসব দেশ গম পাবে। যেসব দেশ খাদ্য নিরাপত্তায় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রেও রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
Advertisement
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাংক ওয়েস্টপ্যাকের বিশ্ব বাজার কৌশলের প্রধান রবার্ট রেনি বলেন, এটি খাদ্য ঘাটতির ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এবং সেই অঞ্চলের বাইরে খাদ্যসামগ্রীর ওপর ঐতিহাসিকভাবে যারা নির্ভরশীল তাদের জন্য।
গম উৎপাদনের বিভিন্ন অঞ্চলজুড়ে তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়েছিল ভারতে। ফলে ফসল উৎপাদনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
খাদ্যের ক্রমবর্ধমান দাম এ মাসে ভারতের মূল্যস্ফীতি গত আট বছরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বাজারে লাগাম টানতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সুদের হার বাড়ানোর ওপরে চাপ তৈরি করেছে এটি।
অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ ব্যাংকের কৃষিবিষয়ক পরিচালক টবিন গোরে বলেছেন, গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা বিশ্ব বাজারের জন্য একটি বিরাট পরিবর্তন ঘটাবে।
Advertisement
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিভাগের পূর্বাভাসে জানানো হয়, ২০২২ থেকে ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী গমের উৎপাদন গত চার সালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হ্রাস পাবে। এর পরপরই ভারত গম রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।
রবার্ট রেনি আরও বলেন, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশেই এই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এটি একটি মানবিক ইস্যু এবং এতে আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ এই বাজার গবেষকের।
সূত্র: ফিন্যান্সিয়াল টাইমস, রয়টার্স
এসএনআর/এএসএম