দেশজুড়ে

এখনো জমেনি রাজশাহীর বানেশ্বর আমের হাট

 

১৩ মে থেকে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের বেধে দেওয়া সময় অনুসারে জাত ভেদে আম নামানো শুরু হয়। পরের দিন থেকেই রাজশাহীর বাজারে দেখা যায় গুটি জাতের আম। তবে আম নামানোর নির্দেশ প্রদান করলেও এখনো জমে ওঠেনি রাজশাহীর বৃহত্তম আমের বাজার বানেশ্বর হাট।

Advertisement

শনি (১৪ মে) ও রোববার (১৫ মে) রাজশাহীর বৃহত্তম এ আমের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, হাতে গোনা দু’চার জন আম বিক্রেতা ডালা ও ক্যারেটে আম সাজিয়ে বসেছেন। আমের হাটে তুলনামূলক আম না ওঠায় বাজারে যেমন বিক্রেতার সংখ্যা কম, তেমনি সাধারণ ক্রেতার উপস্থিতিও কম। তবে বানেশ্বর হাটে ফড়িয়া বা মধ্যস্বত্বভোগী আম ব্যবসায়ীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

বানেশ্বর বাজার পর্যবেক্ষণে গিয়ে দেখা গেছে, বেলা ১১টার পর থেকে হাতে গোনা সাত থেকে আটজন আম চাষি ভ্যানভর্তি আম নিয়ে বানেশ্বর বাজারে আসেন বিক্রির জন্য। সেখানে আগে থেকেই আড়তদারেরা চেয়ে আছেন তাদের পানে। দু’একটি ভ্যান এলেই তারা জোট বেঁধে ছুটছেন চাষিদের কাছে। করছেন দর কষাকষি।

বানেশ্বর বাজারে কাঁচামিঠা জাতের গুটি আমের প্রাধান্যই বেশি দেখা গেছে। বড় আকারের কিছু গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা মণ। ছোট আকারের আমগুলোর দাম মিলছে এক হাজার থেকে বারোশ টাকায়। আচারি আম অর্থাৎ আচার বানানোর আম বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা মণে। তবে বানেশ্বর বাজারে পরিপক্ক আম উঠতে এখনো সপ্তাহ-খানেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা। সপ্তাহ খানেক পর বানেশ্বর বাজার মোটামুটি জমজমাট হবে বলে দাবি তাদের।

Advertisement

এদিকে বানেশ্বর বাজারের স্থানীয় আম ব্যবসায়ী ও আম চাষিদের ভাষ্য, আমের মুকুল ও গুটি আসার পর প্রচণ্ড দাবদাহে গাছ থেকে মুকুল ও গুটি আম শুকিয়ে ঝরে পড়েছে। যা বাকি ছিল তাও বিগত কয়েক দিনের ঝড়-বৃষ্টির কারণে শেষ। এ সমস্ত কারণে রাজশাহীর আম বাগানগুলোতে প্রায় চার ভাগের এক ভাগ আম আছে বলে দাবি করছেন চাষিরা।

বানেশ্বর বাজারের কয়েকজন আমচাষি জানান, এবার গাছ থেকে অথবা বাগানেই আম বিক্রি হয়ে যাবে। বানেশ্বর বাজারে তেমন আম নাও আসার সম্ভাবনা রয়েছে। শেষ দিকে ছোট ও মাঝারি সাইজের কিছু গাছের ল্যাংরা, বার-৪, হিমসাগর এবং আম্রপালি জাতের আম বাজারে পাওয়া যেতে পারে। তবে আমের উৎপাদন কম হওয়ায় এবার দাম বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।

বানেশ্বর বাজার এখনো জমে না উঠলেও বেশ কয়েকটি আমের ক্যারেটে কাঁচামিঠা, আচারি আম ও কিছু অপরিপক্ক গোপালভোগ ও ল্যাংরা আম নিয়ে বসেছেন আম চাষি ও ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার হোসেন।

তিনি জানান, দুই লাখ টাকায় ৬০টি গাছ কিনেছেন। গতবার ওই গাছগুলো থেকে আম পেয়েছিলেন প্রায় ১৫০ মণ। এবার শতকরায় ৩০ ভাগ আম ৬০টি গাছে রয়েছে বলে জানান তিনি। আমের কাঙ্ক্ষিত দাম না মিললে এবার অনেক লোকসানে পড়বেন বলে জানান এ আম ব্যবসায়ী।

Advertisement

তিনি বলেন, পরশুদিন রাজশাহীতে বয়ে যাওয়া ঝড়ে তার একটি গাছ থেকেই প্রায় দেড় মণ ল্যাংড়া আম ঝরে পড়েছে। যে আম ছয় হাজার টাকায় বিক্রির কথা ছিল সেই আমগুলোই আচারি আম হিসেবে তাকে বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ছয়শ টাকায়।

পুঠিয়ার মাহেন্দ্রা এলাকার বাসিন্দা লিয়াকত আলী। কাঁচামিঠা আম এনেছেন ছয় মণ। বিক্রির জন্য স্থানীয় ফড়িয়া বা আড়তদারদের দাম বলেছেন ২২০০ টাকা। তবে আড়তদারেরা দাম বলছেন কম। তাই বিক্রির অপেক্ষায় ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন বানেশ্বর বাজারে।

এদিকে লিয়াকতের আম নেওয়ার জন্য দরকষাকষি করছেন কয়েকজন আড়তদার। এর মধ্যে স্থানীয় ব্যবসায়ী আলমাস আলীর ভাষ্য, গেলো বারেও যেমন দাম ছিল এবারও তেমনি দাম দিতে চাইছি। বরং এবার একটু বেশি দাম বলছি। তাও তারা দিচ্ছে না।

ফলন কম হওয়ার কথা বলতেই তিনি দাবি করেন, কাঁচামিঠা আমের ফলন ভালো হয়েছে। তাই দাম একই থাকবে।

আড়তদার আলমাসের কথার প্রেক্ষিতে আমচাষি লিয়াকত বলেন, তারা বানেশ্বর বাজারে আম আনলেই কম দামে কিনে বেশি দামে বিক্রি করতে চান। আবার হাটে আসলে খাজনা, ট্যাক্সতো আছেই। এ কারণে আম চাষিরা বানেশ্বর হাটে আসতে চায় না।

বানেশ্বর বাজারে দেলোয়ারের পাশেই আম-লিচুর টুকরি নিয়ে বসেছিলেন মো. আব্দুল্লাহ আলী। বানেশ্বরের ভাংড়া এলাকার বাসিন্দা তিনি।

জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি আমের খুচরা ব্যবসা করি। পাশাপাশি আম-লিচুর টুকরিরও ব্যবসা করি। কিন্তু এবার গাছে আম নাই, তাই হাটেও আমের ব্যবসায়ী কম। ব্যবসায়ী না থাকায় আমারও ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এবার গাছে আম কম হওয়ায় বাগানিরা দেরি করে আম নামাচ্ছে। আর এ কারণে বানেশ্বরে হাট জমতে আরও দেরি হবে। এখনো এক সপ্তাহ সময় লাগবে হাট বসতে।

বানেশ্বর হাট কমিটির সভাপতি হাজী সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারে এখনো তেমনভাবে আম আসছে না। যা আছে সব গুটি জাতের আম আর ঝড়-বৃষ্টিতে ঝরে পড়া আম। আরও সপ্তাহ দেড়েক পর হাট জমবে, তখন সেটি স্থানান্তর করে কলেজ মাঠে নেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।

এফএ/এমএস