সাহিত্য

আরিফুল হাসানের তেরোটি কবিতা

সংকীর্ণ আয়ু থেকে

Advertisement

বৈদ্যুতিক পাখার বাতাস চক্রাকারে ছড়ায়আসবাবের মতো আমি পড়ে থাকি এক কোণায়কে তুমি রোজ মুছে যাও আমাকেযত্নহীন রূঢ়-রুক্ষ হাতে?এভাবে সিলিংফ্যানের বাতাস হু-হু কাটেআমার নিঃসঙ্গ পড়ে থাকা, তোমার উষ্ণ নিশ্বাস।

****

বৃষ্টি থেমে যাবার পর

Advertisement

বৃষ্টি থেমে যাবার পর তুমি বারান্দায় এলেহাস্নাহেনা গাছটা থেকে ভেজা গন্ধ আসছেভেজা মেঝে তোমার খোলা পা শিরশির করেএকটা হাওয়ার ঝাপটায় খোলা চুল ওড়ে।বৃষ্টি থেমে গেলে বারান্দাটা তোমার কাছে আসেভেজা চুলকে কালো মেঘ ভেবে সেখানে লুকিয়ে পড়ে।

****

ঝড়গ্রস্ত বেদুইন

ঝড়ের কবলে অন্ধকার রাতেপথ হারিয়ে বেদুইন খোঁজে মরুদ্যান।ধুলো তার নাক বন্ধ করে দেয়এবং প্রবল বাতাস উড়িয়ে নিতে চায়। অন্ধকারের ভেতর দিকহারা বেদুইনতবু ছুটতে থাকে অভ্যাসবশত।

Advertisement

****

যে অরূপের দেখা

তোমাকে যে ফুলের সাথে তুলনা দেবোএমন ফুল দুনিয়ায় কোথায়? তোমাকে যে সুরভির সাথে তুলনা দেবোএমনকি মৃগনাভি হার মানে তার কাছে।তাহলে বলবে যে কী এমন অতুলনীয় সে?কী এমন রূপের বর্ণনা যা কবিরও অধরা?তাহলে শোনো, যে অরূপের দেখা আমি পেয়েছিজাগতিক প্রেম তার কাছে নিছক ছলনা।

****

এখন বৃষ্টি হবে

মনের মধ্যে একটা দোলক টুংটাং ঘণ্টাধ্বনি তোলেএকটা সারস, তীক্ষ্ণ ঠোঁট দিয়ে তুলে শঙ্খের সরএকটা বৃষ্টি, তোমার আকাশে মন খারাপ আজএকটা সন্ধ্যা, এখন এমন যে তোমার কেশরূপ।এখন বৃষ্টি হবে, যদি তুমি চাও। মাগরেবের পরপরতোমার নামে তাওয়াজ্জুহ এসে লাগে আমার কলবে।

****

হঠাৎ শ্রাবণ থেকে

তোমার ঘুমপলক তাহলে ভুল ছিল,এই কেবলা, কালদেশীয় ভুল ক্ষেপণতাহলে নিশ্চিত অন্ধকারে ছিল। নূরে জান্নাত তুমি কোন কাননের ফুল?পাতাবাহার, পাতাবাহার ঝরে আরশেআর আমি খানায়ে কাবার দিকে নতজানু।

****

এখান থেকে আরেকটু দূরে

একপাল হাতি সাগর থেকে জল তুলে পাহাড়ে ছিটায়একটা বৃহস্পতিবার তখন অন্ধ হয়ে পূর্ণদিবস ছুটি চায়মানুষের বৃহস্পতি, শুক্র, শনি ও সোম ছুটির দিন হয়ে গেলেকে থাকে তখন অন্তরালের অভিস্রবণে?এখান থেকে আরেকটু দূরে তোমার অধিবাসএকপাল হাতি জল তোলে সাগর থেকে ছিটায় পাহাড়ে।

****

বেলেল্লাপনার জন্য

একটা মাশুল ঠিক করা যাক, তাহলে কী বলো?ধরা যাক তুমি ইঁদুর বা তেলাপোকাঅথবা ছাড়পোকা হয়ে মানুষের রক্ত খাচ্ছো শুষে।এখন যে বৈশাখের স্থিতরূপ, তাহলে ধরা যাকতুমি একদিন ঝড় হবে, যুদ্ধ হবেআর গোলাপ হয়ে মালির বাগানে হাসবে ঠিকঠাক।

****

তখন নচেৎ তুমি

অবগাহনের সূত্রে বলতে পারো ভেজামেঘতুমি পাতালের খেলা ভুলে মাঝ দুনিয়ায় কী করো? তখন একটু সন্ধ্যা নেমে এলে, অন্ধকার হলেযদি আবার বিপথ তোমার সঙ্গী হয়তাহলে বলবো ভুল ছিল তোমার বিস্তার কাজ।এই অজানার জগতের মাঝে, তুমি কেন জানতে চাও প্রেম

****

তখন থেকে তোমাকে বলছি

এখন বৃষ্টি হবে, শুনছো তো!কী, কথা কানে যায় নাওঠো, নিজেকে মেলে দাও ঘুড়িতুমি ওড়ো, আমি উড়ি।

****

দাও তৃষ্ণা তোমার অন্তরের

এক ঝলক দেখা—কী সুন্দর মন কেড়ে নিতে পারে।এমন কি কেউ সেখানে ছিল?তাহলে তুমি ছিলে বৃষ্টি ও বাদলার দিনে।এক ঝলক দেখা—এমন যে মন কেড়ে নিতে পারে!তাহলে তুমি বলছো না ভালোবাসি—শুধু এক ঝলক দেখা

****

যাও, বনবাসে যাও সুন্দরী

তোমার জন্য আমি কাঁদি আমার জন্য তুমিশুকনো লতায় জড়িয়ে কাঁদে মাকড়সার জালআস্তরণে কুয়াশা তার ঘোমটা লেপে আছেকাঁদার জন্য কাঁদো তুমি, আমিও কাঁদি তাই।আসলে তো প্রেম সে এ নয়, বৃষ্টি রঙের খেলাদীপ্ত তিয়াস ঘুমের চোখে আলগোছে দেয় চুমতোমার জন্য কাঁদি আমি তুমিও কাঁদো ঠিকচোখের জলে বনের পথে হারিয়ে ফেলো দিক।

****

শূন্যপুরে ঘুমঘোরে

নদীর জলে কাটা কাটা স্রোত, হাতে কাটো তুমিজল ছিটিয়ে ভেজাও শালুক ফুল, পদ্মপাতা তোলোতুমি একটা ফুলওগুঁজলে দীঘল কালো কেশের খোঁপায় অমনি নদীর জল, বেশ হলো চঞ্চল নৌকো আমার ডুবিয়ে দিলো, ডুবিয়ে দিলো কূলও।

এসইউ/জিকেএস