দেশজুড়ে

ঘূর্ণিঝড় অশনি: রাজশাহীতে অর্ধেক ধান নষ্টের আশঙ্কা

কয়েকদিনের বৃষ্টিপাত ও ঝোড়ো হাওয়ায় রাজশাহীর বিভিন্ন জায়গায় জমির ধানগাছ নুয়ে পড়েছে। এতে প্রায় অর্ধেক ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকেরা।

Advertisement

শনিবার (১৪ মে) জেলার পবা, তানোর, মোহনপুর ও গোদাগাড়ী উপজেলার বেশ কয়েকটি এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ধানি জমিতেই গাছগুলো নুয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানিতে জমিতে হাঁটু পানি জমে গেছে। এতে নুয়ে পড়া ধানগাছ প্রায় ডুবে গেছে। অনেকে আধা, পাকা ধান কেটে রাস্তায় তুলে রেখেছেন। জমে থাকা পানিতে ধানগাছে পচন ধরেছে।

পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের কিসমত কুখন্ডি গ্রামের প্রবীণ কৃষক লুৎফর রহমান। তিনি এক বিঘা জমিতে বোরো ধানের আবাদ করেছেন। সার, সেচ, কীটনাশকসহ আবাদে খরচ হয়েছে ১৫ হাজার টাকা। আশা করছিলেন এক বিঘা জমিতে ২৫ থেকে ২৮ মণ ধান ঘরে তুলবেন। কিন্তু ঝড়-বৃষ্টিতে তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।

লুৎফর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সবকিছু ঠিকই ছিল। এবার ধানও ভালো হয়েছিল। কিন্তু ঝড়ে ধানগাছ নুয়ে পড়ায় আশাতীত ফসল ঘরে তুলতে পারবো না। আনুমানিক ১২ থেকে ১৫ বিঘা ধান পাওয়া যাবে, যা দিয়ে খরচের টাকাই উঠবে না।’

Advertisement

একই এলাকার আরেক কৃষক আব্দুল লতিফ জানান, বৃষ্টিতে তার ধানক্ষেতে হাঁটু পানি জমে আছে। ধানগাছের গোড়ায় পচন ধরেছে। এখন ধান না কাটলে আউড়ের (খড়) দামও মিলবে না। তিনি জানান, এক বিঘায় প্রায় দুই হাজার টাকার খড় বিক্রি হয়।

গোদাগাড়ী উপজেলার বসন্তপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম। বসন্তপুরের বিলে দুই বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। সবমিলিয়ে ধান আবাদে খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তবে ঝড়ের তাণ্ডবে তার ফসলও মাটিতে নুয়ে পড়েছে।

রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, দুই বিঘায় এবার প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ মণ ধান পাওয়ার কথা ছিল। ধান নুয়ে পড়ায় এখন এর অর্ধেকও পাওয়া যাবে না। নুয়ে পড়া ধানে চিটা ধরে (নষ্ট হয়)। তাই বাজারে এ ধান বিক্রি করতে গেলেও ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। তাও কেউ কিনতে চাইবে না। কিনলেও এসব ধান পুকুরে মাছের খাবার অথবা গরু কিংবা হাঁস-মুরগির খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হবে। এই ধানই ঝড়ের কারণে ক্ষতি না হলে বাজারে দাম পেতাম ১১০০ থেকে ১২০০ টাকা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল কাফী বলেন, ঠিক কী পরিমাণ জমির ধানগাছ নুয়ে পড়েছে সে বিষয়ে আমাদের কাছে তেমন কোনো তথ্য নেই। সাধারণত ব্লক সুপারভাইজাররা এসব তথ্য দিয়ে থাকেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা এমন কোনো ধরনের তথ্য সরবরাহ না করায় জানাতে পারছি না।

Advertisement

রাজশাহী ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষিবিদ ও ধান গবেষক ড. ফজলুল হক বলেন, ধানক্ষেতে পানি জমে থাকলে গোড়াসহ তুলে নিতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আর অল্প পানি থাকলে তা কেটে ফেলতে হবে। অন্যথায় ধানসহ গাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ধানের গোড়ায় জলাবদ্ধতা না থাকলে চারগুটি একসঙ্গে বাঁধলে তা পুনরায় দাঁড়িয়ে যাবে। তাতে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না।

ফয়সাল আহমেদ/এসআর/জিকেএস