২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি এবং মেট্রোরেল প্রকল্পে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২ হাজার ২০২ কোটি এবং মেট্রোরেল প্রকল্পে ২ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ কমার ফলে সরকারও কিছুটা চাপ মুক্ত হচ্ছে। ফলে ওই অর্থ এখন অন্য উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করা যাবে।
Advertisement
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ন অন্তর্ভুক্ত করে এটা দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। আগামী ১৭ মে জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদে (এনইসি) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। এনইসি চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন।
এর আগের অর্থবছর (২০২১-২২) এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। পরে সংশোধন হয়ে (আরএডিপি) এর চূড়ান্ত আকার দাঁড়ায় দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।
দেশের বহুল প্রত্যাশিত চার মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ দিকে। এ বছরই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে পদ্মা সেতু। আগামী অর্থবছর উন্মুক্ত হবে মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী টানেল। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যেই এসব প্রকল্প জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়ায় বরাদ্দও কম লাগছে। এসব প্রকল্পে বড় ধরনের কোনো নির্মাণকাজ নেই।
Advertisement
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পদ্মা সেতু প্রকল্পে বরাদ্দের চাপ কমছে। অন্যদিকে চাপ বাড়ছে কর্ণফুলী টানেলে।
মেগা প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পে ১২০ কোটি, পদ্মা সেতু রেল লিংক প্রকল্পে ৫ হাজার ৮০০ কোটি, বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু (বা যমুনা রেল সেতু) প্রকল্পে ৩ হাজার ৮৫০ কোটি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু টানেলে ২ হাজার কোটি, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে ৬ হাজার ৮১৫ কোটি এবং পায়রা বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে ৫১৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। অথচ শুরুতে এসব প্রকল্পে অনেক বেশি বরাদ্দের চাপ ছিল।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, এটা সাধারণ হিসাব। প্রকল্পের কাজ শুরুতে বা মাঝখানে বেশি বরাদ্দ দিতে হয়। তবে ধীরে ধীরে প্রকল্পের কাজ যখন সমাপ্ত হতে থাকে তখন বরাদ্দের চাপও কমতে থাকে। আমরা এই অর্থবছরে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল খুলে দিতে পারবো। এসব প্রকল্পের কাজ প্রায় শতভাগ সমাপ্ত। টাকা খরচের কোনো জায়গা নেই, স্বাভাবিকভাবেই বরাদ্দ কমছে।
Advertisement
প্রস্তাবিত এডিপিতে সবচেয়ে বেশি পাচ্ছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত ৬৯ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা। এর পরই রয়েছে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিভাগ ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা। শিক্ষাখাতে বরাদ্দ থাকছে ২৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা।
এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে ১৯ হাজার ২৭৮ কোটি, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন বিভাগে ১৬ হাজার ৪৮০ কোটি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে এক হাজার ২৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, আমরা খসড়া এডিপি করেছি। এটা ১৭ মে এনইসি সভায় উপস্থাপন করবো। সবার মতামত নিয়ে এটা অনুমোদিত হবে। প্রকল্পের চাহিদা ও বাস্তবায়ন গতি দেখেই টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
এমওএস/এমএইচআর/জেআইএম