রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, নির্বাচনের মাধ্যমে দশম জাতীয় সংসদ গঠনের পর বর্তমান সরকারের ওপর দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব অর্পিত হয়। গত মহাজোট সরকারের ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার রূপকল্প-২০২১, দিন বদলের সনদ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, আধুনিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।বুধবার জাতীয় সংসদে বছরের প্রথম অধিবেশনে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংবিধান অনুযায়ী বছরের প্রথম সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি বক্তব্য দিয়ে থাকেন।রাষ্ট্রপতি আরো বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের জ্ঞান ভিত্তিক, শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধিশালী ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকারের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টায় ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের বৃত্ত ভেঙ্গে ইতোমধ্যে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এখন জাতির দৃষ্টি ২০৪১ সাল। বিশ্ব দরবারে একটি উন্নত দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সরকার উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রেখে জাতির আকাঙ্ক্ষা পূরণে সক্ষম হবে।তিনি বলেন, সরকার দেশে আইনের শাসন সুসংহত ও সমুন্নত রাখার সর্বাত্মক উদ্যোগ ও সুদৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে। জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী পলাতক খুনিদের আইনের আওতায় আনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম চলমান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতির প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থেকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পন্ন করছে এবং বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে।সম্প্রতি বিচারিক আদালত কর্তৃক বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্রুততম সময়ে সিলেটের চাঞ্চল্যকর শিশু রাজন হত্যা মামলা এবং খুলনার শিশু রাকিব হত্যা মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল করতে বর্তমান সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। বিগত মেয়াদের ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ফলে, দেশে নাশকতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং জনজীবনে স্বস্তি বিরাজ করছে।তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে বর্তমান সরকারের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকার পরিকল্পনার মাধ্যমে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২০১১-১৫ মেয়াদি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অসমাপ্ত কার্যক্রমের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ২০১৬-২০ মেয়াদি সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশ অর্জন প্রশংসিত হয়েছে।তিনি আরো বলেন, বিশ্ব-অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চলমান সঙ্কট এবং অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে উদ্ভূত নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও যথোপযুক্ত রাজস্বনীতি ও সহায়ক মুদ্রানীতির প্রভাবে দেশে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ভারসাম্য বজায় রয়েছে। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হারও রয়েছে সুস্হিত।বিশ্ব-অর্থনীতিতে বৈদেশিক বাণিজ্যের শ্লথগতি এবং উন্নত দেশসমূহের অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে সেসব দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। এর কিছুটা প্রভাব বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যে প্রতিভাত হলেও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করায় দেশের রফতানি বাণিজ্যে প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত আছে। ফলে দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতির অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে।তিনি বলেন, সরকার দেশের সকল অঞ্চলের মধ্যে সুষ্ঠু ও সমম্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে। দেশের সর্ববৃহৎ সড়ক অবকাঠামো পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ নিজস্ব অর্থায়নে শুরু হয়েছে।মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার সম্পর্কে তিনি বলেন, মানবতা বিরোধীদের বিচারসহ অন্যান্য চাঞ্চল্যকর ও জনগুরুত্বপূর্ণ মামলাসমূহ নিস্পত্তির ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।প্রবাসী বাংলাদেশিসহ প্রায় ১ কোটি ২৮ লক্ষ ৮০ হাজার ৬৫৯ জন বাংলাদেশি নাগরিককে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এবং প্রায় ২ লক্ষ ৭৯ হাজার ৮৫০ জন বিদেশি নাগরিককে মেশিন রিডেবল ভিসা প্রদান করা হয়েছে।স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদসহ অধিকাংশ সংসদ সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এইচএস/আরএস
Advertisement