সেঞ্চুরি করা কি তবে ছেড়েই দেবে ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা! একের পর এক ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করবে, আর ভারত হারবে- এমনটা নিশ্চয় চায় না ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা। প্রতিটি ম্যাচেই সেঞ্চুরির দেখা পাচ্ছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা। প্রথম দুই ম্যাচে রোহিত শর্মা, তৃতীয় ম্যাচে বিরাট কোহলির পর এবার সেঞ্চুরি পেলেন শিখর ধাওয়ান (১২৬) এবং কোহলি (১০৬)। তবুও জয়ের দেখা পেলো না ভারত। হেরে গেলো ২৫ রানের ব্যবধানে। অস্ট্রেলিয়ার করা ৩৪৮ রানের বিশালে স্কোরের জবাবে ব্যাট করতে নেমে ধাওয়ান-কোহলির জোড়া সেঞ্চুরির সঙ্গে শুধুমাত্র রোহিত শর্মা (৪১) যা একটু সঙ্গী হতে পেরেছিলেন ব্যাট হাতে। বাকিরা ছিলেন শুধু আসা-যাওয়ার মিছিলে। যে কারণে ৪৯.২ ওভারে ২২৩ রানেই অলআউট ভারত। ফলে ২৫ রানে আরও একটি পরাজয় বরণ করতে হলো মহেন্দ্র সিং ধোনির দল। প্রথম তিন ম্যাচ হেরে আগেই সিরিজ খুইয়েছে ধোনিরা। এবার হারলো টানা চতুর্থ ম্যাচ।অথচ, ক্যানবেরার মানুকা ওভালে এই ম্যাচে ভারতের জয় সবাই ধরেই নিয়েছিল। এমনকি গ্যালারিতে উপস্থিত দর্শকরাও অস্ট্রেলিয়ার পরাজয় ভেবে মাঠ থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছিলেন। একটি দল যখন ৩৪৯ রানের জবাবে ৩৭.৩ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ২৭৭ রানে পৌঁছে যেতে পারে, তখন তো আর তাদের হার কেউ কল্পনাও করতে পারে না।তবে, ক্রিকেট যে গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা! এটাকে তো অস্বীকার করার উপায় নেই। শুধু তাই নয়, কথাটাকে আবারও প্রমাণ করলো ক্যানবেরার এই ম্যাচটি। শিখর ধাওয়ান আর কোহলির ২১২ রানের বিরাট জুটিতে যখন অস্ট্রেলিয়াকে সহজে হারানোর চিন্তা করছে ভারতীয়রা, তখন সম্ভবত আড়ালে বসে ভাগ্য হেসে কুটি কুটি হচ্ছিল।কারণ, ক্রিকেটে যে শেষ বল পর্যন্ত কিছু নিশ্চিত করে বলা যায় না! ক্লাইম্যাক্সের পরও তৈরী হয় অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্স। সে মন্ত্রেই সম্ভবত দীক্ষিত হয়ে এক্ষণে জ্বলে উঠলেন ২৫ বছর বয়সী এক যুবক। কেন রিচার্ডসন। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে শেষ ১০ ওভারে পরিণত হলেন গ্লেন ম্যাকগ্রা কিংবা ব্রেট লি’তে। অখ্যাত এই মিডিয়াম পেসারই ভোজবাজিরমতো উল্টোদিলেন সব কিছু। ভারতের নিশ্চিত জয়ের ম্যাচটা কেড়ে নিলেন তিনি। নাটকের চেয়েও নাটকীয় মুহূর্তের জন্ম দিলেন তিনি। ইনিংসের অষ্টম ওভারে রোহিত শর্মাকে ফিরিয়েছিলেন কেন রিচার্ডসন। দলীয় রান তখন ৬৫। কে ভেবেছিল, এরপরের জুটিটা অস্ট্রেলীয় বোলারদের কাঁদিয়ে ছাড়বে? শিখর ধাওয়ান আর বিরাট কোহলি মিলে গড়লেন ২১২ রানের বিশাল এক জুটি। ৩৭.৩ ওভারে ২৭৭ রান হওয়ার পর তখন জয়ের জন্য বাকি মাত্র ৭২ রান। হাতে ৭৫টি বল এবং ৯ উইকেট।সেই দুর্দান্ত ইনিংসটিকে অপমৃত্যু ঘটিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা। পরের মাত্র ৪৬ রানেই পড়লো ভারতের বাকি ৯ উইকেট। কোহলি-ধাওয়ানের বিশাল জুটিটাই সম্ভবত দৃঢ় প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল অসি বোলারদের। প্রথম আঘাতটা হানেন জন হাস্টিংস। ২১২ রানের জুটির যবনিকাপাত ঘটে তার বলেই। ১১৩ বলে ১২৬ রান করে ফিরে যান শিখর ধাওয়ান। ১৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ২টি ছক্কায় সাজানো তার ইনিংস। হাস্টিংসের বিষে নীল হয়ে গেলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। একই ওভারের শেষ বলে ধোনি ফিরে গেলেন কোন রান না করেই। তখনই মূলতঃ সূত্রপাত ভারতের হারের। এরপরই আবির্ভূত হলেন রিচার্ডসন। প্রথমে তুলে নিলেন অপর সেঞ্চুরিয়ান বিরাট কোহলিকে। এরপর গুরকিরাত সিং, আজিঙ্কা রাহানে, শিখর ধাওয়ান, ভুবনেশ্বর কুমারকে ফিরিয়ে দিয়ে ভারতের কোমরটাই ভেঙে দিলেন রিচার্ডসন। শেষ দিকে এসে বাকি কাজটা করে দিলেন মিচেল মার্শ। ১ উইকেটে ২৭৭ রান থেকে ২২৩ রানেই অলআউট ভারত। হাতে তখনও বাকি ৪ বল। ভারত হেরে গেলো ২৫ রানে। কেন রিচার্ডসন নিলেন ৬৮ রানে ৫ উইকেট। জন হাস্টিংস আর মিচেল মার্শ নেন ২টি করে উইকেট। নাথান লিওন নেন ১টি উইকেট।এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে অ্যারোন ফিঞ্চের সেঞ্চুরিতে ৩৪৮ রান সংগ্রহ করে অস্ট্রেলিয়া। ডেভিড ওয়ার্নারের জন্য দুর্ভাগ্য। মাত্র ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হলেন তিনি। তবে ৯২ বলে ৯৩ রানে আউট হওয়ার আগে ফিঞ্চের সঙ্গে ১৮৭ রানের জুটি গড়েন তিনি। ১০৭ বলে ১০৭ রান করেন অ্যারোন ফিঞ্চ। অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ ২৯ বলে ৫১ এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ২০ বলে করেন ৪১ রান। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেট হারিয়ে তাদের সংগ্রহ দাঁয় ৩৪৮ রান। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ৭৭ রান দিলেও নিলেন ৪ উইকেট। উমেষ যাদব ৬৭ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। আইএইচএস/আরআইপি
Advertisement