জোকস

সপ্তাহের রসালাপ: স্ত্রী বড় নাকি মা?

জহির রায়হান লিমন

Advertisement

সাধারণত স্ত্রীরা চায় বয়স লুকিয়ে রাখতে। তবে লিমনের স্ত্রী মিতুর এক্ষেত্রে পুরোই উল্টা। যার বয়স বেশি সে অবশ্যই বেশি সম্মান পাবে, সে ছেলে হোক অথবা মেয়ে। সে এই নীতিতে বিশ্বাসী।

সবে নতুন বিয়ে হয়েছে তাদের। আত্মীয় বাড়িতে স্ত্রীকে নিয়ে বেড়াতে গিয়েছেন লিমন। সাধারণত পরিচয় পর্বে বয়সের একটা তুলনা চলে আসে সমাজে।

সেদিন তার স্ত্রী মিতু বয়স নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সবাইকে স্তব্ধ করে দিল। লিমনের চেয়ে নাকি সে পাঁচ দিনের বড়। বয়স নিয়ে কোনোকালেই লিমনের মাথাব্যথা ছিল না। তবে স্ত্রীর সম্মান বয়সের বেড়াজালে আটকানো নিয়ে খুব একটা সবস্তি পাচ্ছিনেনা না।

Advertisement

তবে মিতুর কাছে বয়স ব্যাপারটা একদম সিরিয়াস। সে লিমনের চেয়ে পাঁচদিনের বড়। তাই লিমনকেও তাকে সম্মান দিয়ে কথা বলতে হবে। এটাই তার চাওয়া। খানিকটা বিরক্তি নিয়ে লিমন মিতুকে জিজ্ঞেস করেই ফেললেন, তোমার এই উদ্ভট প্রয়াস কবে থেকে।

মিতুর সোজাসাপ্টা উত্তর এটা মোটেও উদ্ভট না। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনিয়র-জুনিয়র ব্যাপারটা খুব সুন্দর করে মেইনটেইন করতো। সে তার এই শিক্ষা ধরে রাখতে চায়।

লিমন মিতুকে বললেন, তাই বলে স্বামী হিসেবে তুমি আমাকে দেখার চেয়ে জুনিয়র হিসেবে দেখবা? মিতু জবাবে বললেন, তোমাকে স্বামী হিসেবেই দেখবো তবে জুনিয়র স্বামী। তুমি আমার জুনিয়র স্বামী। এমনকি ফোনে লিমনের নম্বরও সে ‘জুনিয়র স্বামী’ লিখে সেভ করে রেখেছে।

বেশ অস্বস্তিতেই কাটছে লিমনের দিন। স্ত্রীর বয়স নিয়ে মাথাব্যথা না থাকলেও ‘জুনিয়র স্বামী’ ডাক শুনতে কেমন বেখাপ্পা লাগছে তার কাছে। অনেকবার অনুরোধও করলেন মিতুকে,এই নামে না ডাকতে। কে শোনে কার কথা। মিতু তার সিদ্ধান্তে অনড়।

Advertisement

ব্যাপারটা সুরাহা করতে না পেরে লিমনও মিতুর জুনিয়র স্বামী হয়ে থাকলেন। এদিকে আবার শাশুড়ির সঙ্গেও মিতুর খুব ভাব। েই ‘জুনিয়র স্বামী’ গল্পও সে তার সঙ্গে করে ফেলেছে। মাঝেমাঝেই তারা এ নিয়ে হাসাহাসিও করে।

একবার এক কম্পিটিশনে নারী নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। মিতু আবার স্কুল জীবন থেকেই বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রাইজ ছিনিয়ে আনতো। এ বিতর্কেও সে অংশগ্রহণ করে। বিতর্কের বিষয় ছিলো ‘নারী মা হোক বা স্ত্রী দুজনেই সমান’

বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রধান বিচারক ছিলেন আবার লিমন। সকল পার্টিসিপ্যান্ট একে একে তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করলো। মিতু স্ত্রী বিতর্কের বিষয়ের পক্ষে লড়ে গেলো। তার যুক্তি ছিল এই যে, নারী মানে দাড়ি পাল্লায় মাপার যোগ্য কোনো মাংসের স্তুপ নয়। নারী পাত্র ভেদে কারো মা। কারো স্ত্রী। যে কারো স্ত্রী হয়, সে আবার কারো মা হয়। ব্যাপারগুলো ভাইস-ভার্সা। আলাদা করে মাপকাঠিতে দেয়ার চেয়ে সম্মান আর শ্রদ্ধা দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সে তার বক্তব্য শেষ করেছে।

তার বক্তব্য শুনে উপস্থিত শ্রোতা, বিচারক মন্ডলী সবাই মুগ্ধ। তার টিম জয় পাবে এটা নিশ্চিত ছিল সবাই। তবে লিমন প্রধান বিচারপতি থাকায় বিচার বিশ্লেষণ করে যে কোনো দলকে বিজয়ী ঘোষণা করার ক্ষমতা ছিল তার হাতে। এই সুবর্ণ সুযোগ। স্ত্রীকে জব্দ করার বুদ্ধি বের করতে লাগলেন তিনি।

তবে তার যে স্ত্রী তাকে জুনিয়র স্বামী ডাকে শুধু বয়সের কারণে। সেই মানুষটাই বিতর্কে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করলো মা আর স্ত্রী সমান। এটা কিছুতেই মানতে পারলেন না লিমন। তাই সবকিছু বিবেচনা করে স্ত্রীর টিমের বিপরীত টিমকে বিজয়ী ঘোষণা করে দিলেন লিমন।

তবে কেউ-ই মানতে পারলো না এই রায়। তাই উপস্থিত দর্শক, স্ত্রী ও তার টিম এই রায়ের যুক্তি দেখাতে বললেন লিমনকে। লিমন যুক্তি তর্কে একটা কথাই বললেন, মা ও স্ত্রী কখনো সমান হয়না। মা এবং স্ত্রীর মধ্য মা বড়। কেননা মায়ের বয়স বেশি।

যুক্তিতর্কে হেরে মিতু বাসায় চলে গিয়েছে। কিন্তু লিমন মনে মনে খুশি হলেও বাসায় ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন। 

লেখক: শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান সাইন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটিছবি: সংগৃহীত

প্রিয় পাঠক, আপনিও অংশ নিতে পারেন আমাদের এ আয়োজনে। আপনার মজার (রম্য) গল্পটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়। লেখা মনোনীত হলেই যে কোনো শুক্রবার প্রকাশিত হবে।

কেএসকে/জিকেএস